ঢাকা ১২:৪২ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ০৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

প্রাণীর প্রতি অপরিসীম মমতা—নবী করিম (সা.)-এর দয়ার অনন্য শিক্ষা

  • ডেস্ক রিপোর্টঃ
  • আপডেট সময় ০৫:৪১:৪২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৫ ডিসেম্বর ২০২৫
  • ৫২১ বার পড়া হয়েছে

দয়ার নবী মুহাম্মদ (সা.) ছিলেন সমগ্র মানবজাতির জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে অশেষ রহমত। তাঁর এই রহমত মানুষের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না; বরং পশু-পাখি, জীবজন্তু—সমগ্র সৃষ্টিই তাঁর দয়ার আলোয় স্নাত হয়েছে। আল্লাহতায়ালা বলেন, “আমি তো আপনাকে গোটা বিশ্বজগতের জন্য রহমতস্বরূপ পাঠিয়েছি।” (সুরা আম্বিয়া : ১০৭)

নবীজি (সা.) জীবজন্তুর প্রতি নিষ্ঠুর আচরণ, নির্যাতন, অনাহারে রাখা, কিংবা তাদের ওপর অতিরিক্ত বোঝা চাপানো কঠোরভাবে নিষেধ করেছেন। এমনকি প্রাণীকে অভিশাপ দেওয়া বা গালাগাল করাও নিষিদ্ধ করেছেন। (মুসলিম : ২৫৯৬) মানবসভ্যতার ইতিহাসে প্রাণীকল্যাণে এ ধরনের দৃষ্টান্ত ছিল অভূতপূর্ব।

তিনি সতর্ক করেছেন—জীবজন্তুর প্রতি নিষ্ঠুরতা মানুষকে জাহান্নামে ঠেলে দিতে পারে। যেমন—এক নারী একটি বিড়ালকে বন্দি রেখে অনাহারে মেরে ফেলায় জাহান্নামে গিয়েছে। (বুখারি : ২৩৬৩; মুসলিম : ২২৪৪) অপরদিকে এক পতিতা তৃষ্ণার্ত কুকুরকে পানি পান করানোর কারণে আল্লাহ তাঁর গুনাহ মাফ করে দিয়েছেন। (মুসলিম : ২২৪৫)

সাহাবিদের প্রশ্নের জবাবে নবীজি (সা.) বলেন, “যেকোনো জীবন্ত প্রাণীর প্রতি দয়া করলে সওয়াব আছে।” (বুখারি : ২৩৬৩; মুসলিম : ২২৪৪)

প্রাণীকে লক্ষ্যবস্তু বানিয়ে মারাও কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) একদল যুবককে বাঁধা পাখির দিকে তীর ছুড়তে দেখে বলেন—রাসুল (সা.) এমন কাজে লানত করেছেন। (মুসলিম : ৫০৫৯)

প্রাণীর সন্তানকে তার মায়ের থেকে বিচ্ছিন্ন করাও ইসলাম নিষিদ্ধ করেছে। এক সফরে সাহাবিরা একটি পাখির ছানা তুলে নিলে মা-পাখির ব্যথিত চেহারা দেখে নবীজি (সা.) বললেন, “কে এ মাকে কষ্ট দিল? ছানাগুলো ফিরিয়ে দাও।” (আবু দাউদ : ২৬৭৫)

নবীজি জীবন্ত প্রাণীর অঙ্গ কেটে নেওয়া বা দাগ কেটে কষ্ট দেওয়াও নিষেধ করেছেন। একবার তিনি একটি গাধার মুখে দাগ দেখে বলেন, “যে এ দাগ দিয়েছে, আল্লাহ তাকে লানত করুন।” (মুসলিম : ৫৫৫২)

তিনি পশুর যথাযথ যত্ন ও ব্যবস্থাপনার শিক্ষা দিয়েছেন। ক্ষুধায় কাহিল একটি উট দেখে তিনি বলেন, “এই নির্বাক প্রাণীগুলোর ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করো।” (আবু দাউদ : ২৫৪৮)

কঠোর আচরণের পরিবর্তে কোমলতা অবলম্বনের নির্দেশও দিয়েছেন। আয়েশা (রা.) একটি খিটখিটে উটে চড়ার সময় টানাটানি করলে নবীজি (সা.) বলেন, “হে আয়িশা, কোমল আচরণ করো।” (মুসলিম : ২৫৯৩)

প্রাণীদের লড়াই লাগানো—যেমন মোরগ-মোরগ, ভেড়া-ভেড়া, উট-উট যুদ্ধও নিষিদ্ধ, কারণ এতে নিছক যন্ত্রণা সৃষ্টি ছাড়া কোনো কল্যাণ নেই। (আবু দাউদ : ২৫৬২)

সফরের সময় পশুর সুবিধা-অসুবিধা বিবেচনায় চলার দিকনির্দেশনাও দিয়েছেন তিনি। উর্বর জায়গায় পশুকে চরতে দেওয়া এবং খরার সময় দ্রুত যাত্রার নির্দেশ তারই উদাহরণ। (মুসলিম : ১৯২৬)

ইমাম নববি (রহ.) ব্যাখ্যায় বলেন—উর্বর জমিতে পশুর খাবারের সুযোগ দেওয়া উচিত, আর অনুর্বর জমিতে ধীরগতিতে চললে পশু আরও দুর্বল হয়ে পড়ে। (শারহু মুসলিম ১৩/৬৯)

শেষ পর্যন্ত নবীজি (সা.)-এর দয়ার পরিধি ছিল সীমাহীন—মানুষ ও প্রাণী সব জীবের প্রতি সমানভাবে। তিনি বলেছেন,
“যারা দয়া করে, রহমান তাদের প্রতি দয়া করেন। তোমরা পৃথিবীর জীবদের প্রতি দয়া করো; আকাশের অধিপতি তোমাদের প্রতি দয়া করবেন।” (তিরমিজি : ১৯২৪)

এই শিক্ষা মানবসভ্যতাকে এখনও পথ দেখায়—দয়া, মমতা ও দায়িত্ববোধের আলোকিত পথে।

জনপ্রিয় সংবাদ

এনসিপির নেতৃত্বে গণতান্ত্রিক সংস্কার জোটের আত্মপ্রকাশ

প্রাণীর প্রতি অপরিসীম মমতা—নবী করিম (সা.)-এর দয়ার অনন্য শিক্ষা

আপডেট সময় ০৫:৪১:৪২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৫ ডিসেম্বর ২০২৫

দয়ার নবী মুহাম্মদ (সা.) ছিলেন সমগ্র মানবজাতির জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে অশেষ রহমত। তাঁর এই রহমত মানুষের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না; বরং পশু-পাখি, জীবজন্তু—সমগ্র সৃষ্টিই তাঁর দয়ার আলোয় স্নাত হয়েছে। আল্লাহতায়ালা বলেন, “আমি তো আপনাকে গোটা বিশ্বজগতের জন্য রহমতস্বরূপ পাঠিয়েছি।” (সুরা আম্বিয়া : ১০৭)

নবীজি (সা.) জীবজন্তুর প্রতি নিষ্ঠুর আচরণ, নির্যাতন, অনাহারে রাখা, কিংবা তাদের ওপর অতিরিক্ত বোঝা চাপানো কঠোরভাবে নিষেধ করেছেন। এমনকি প্রাণীকে অভিশাপ দেওয়া বা গালাগাল করাও নিষিদ্ধ করেছেন। (মুসলিম : ২৫৯৬) মানবসভ্যতার ইতিহাসে প্রাণীকল্যাণে এ ধরনের দৃষ্টান্ত ছিল অভূতপূর্ব।

তিনি সতর্ক করেছেন—জীবজন্তুর প্রতি নিষ্ঠুরতা মানুষকে জাহান্নামে ঠেলে দিতে পারে। যেমন—এক নারী একটি বিড়ালকে বন্দি রেখে অনাহারে মেরে ফেলায় জাহান্নামে গিয়েছে। (বুখারি : ২৩৬৩; মুসলিম : ২২৪৪) অপরদিকে এক পতিতা তৃষ্ণার্ত কুকুরকে পানি পান করানোর কারণে আল্লাহ তাঁর গুনাহ মাফ করে দিয়েছেন। (মুসলিম : ২২৪৫)

সাহাবিদের প্রশ্নের জবাবে নবীজি (সা.) বলেন, “যেকোনো জীবন্ত প্রাণীর প্রতি দয়া করলে সওয়াব আছে।” (বুখারি : ২৩৬৩; মুসলিম : ২২৪৪)

প্রাণীকে লক্ষ্যবস্তু বানিয়ে মারাও কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) একদল যুবককে বাঁধা পাখির দিকে তীর ছুড়তে দেখে বলেন—রাসুল (সা.) এমন কাজে লানত করেছেন। (মুসলিম : ৫০৫৯)

প্রাণীর সন্তানকে তার মায়ের থেকে বিচ্ছিন্ন করাও ইসলাম নিষিদ্ধ করেছে। এক সফরে সাহাবিরা একটি পাখির ছানা তুলে নিলে মা-পাখির ব্যথিত চেহারা দেখে নবীজি (সা.) বললেন, “কে এ মাকে কষ্ট দিল? ছানাগুলো ফিরিয়ে দাও।” (আবু দাউদ : ২৬৭৫)

নবীজি জীবন্ত প্রাণীর অঙ্গ কেটে নেওয়া বা দাগ কেটে কষ্ট দেওয়াও নিষেধ করেছেন। একবার তিনি একটি গাধার মুখে দাগ দেখে বলেন, “যে এ দাগ দিয়েছে, আল্লাহ তাকে লানত করুন।” (মুসলিম : ৫৫৫২)

তিনি পশুর যথাযথ যত্ন ও ব্যবস্থাপনার শিক্ষা দিয়েছেন। ক্ষুধায় কাহিল একটি উট দেখে তিনি বলেন, “এই নির্বাক প্রাণীগুলোর ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করো।” (আবু দাউদ : ২৫৪৮)

কঠোর আচরণের পরিবর্তে কোমলতা অবলম্বনের নির্দেশও দিয়েছেন। আয়েশা (রা.) একটি খিটখিটে উটে চড়ার সময় টানাটানি করলে নবীজি (সা.) বলেন, “হে আয়িশা, কোমল আচরণ করো।” (মুসলিম : ২৫৯৩)

প্রাণীদের লড়াই লাগানো—যেমন মোরগ-মোরগ, ভেড়া-ভেড়া, উট-উট যুদ্ধও নিষিদ্ধ, কারণ এতে নিছক যন্ত্রণা সৃষ্টি ছাড়া কোনো কল্যাণ নেই। (আবু দাউদ : ২৫৬২)

সফরের সময় পশুর সুবিধা-অসুবিধা বিবেচনায় চলার দিকনির্দেশনাও দিয়েছেন তিনি। উর্বর জায়গায় পশুকে চরতে দেওয়া এবং খরার সময় দ্রুত যাত্রার নির্দেশ তারই উদাহরণ। (মুসলিম : ১৯২৬)

ইমাম নববি (রহ.) ব্যাখ্যায় বলেন—উর্বর জমিতে পশুর খাবারের সুযোগ দেওয়া উচিত, আর অনুর্বর জমিতে ধীরগতিতে চললে পশু আরও দুর্বল হয়ে পড়ে। (শারহু মুসলিম ১৩/৬৯)

শেষ পর্যন্ত নবীজি (সা.)-এর দয়ার পরিধি ছিল সীমাহীন—মানুষ ও প্রাণী সব জীবের প্রতি সমানভাবে। তিনি বলেছেন,
“যারা দয়া করে, রহমান তাদের প্রতি দয়া করেন। তোমরা পৃথিবীর জীবদের প্রতি দয়া করো; আকাশের অধিপতি তোমাদের প্রতি দয়া করবেন।” (তিরমিজি : ১৯২৪)

এই শিক্ষা মানবসভ্যতাকে এখনও পথ দেখায়—দয়া, মমতা ও দায়িত্ববোধের আলোকিত পথে।