ঢাকা ০৩:০৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ২ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ইন্টারনেট বন্ধ রেখে হত্যাযজ্ঞ আড়াল করার অভিযোগে সাজা হতে পারে জয়-পলকের

  • ডেস্ক রিপোর্টঃ
  • আপডেট সময় ১০:৫৮:৫৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৫ ডিসেম্বর ২০২৫
  • ৫৩৮ বার পড়া হয়েছে

 

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সজীব আহমেদ ওয়াজেদ জয় এবং জুনাইদ আহমেদ পলকের বিরুদ্ধে ইন্টারনেট বন্ধ রেখে হত্যাযজ্ঞ আড়াল করার অভিযোগ আনা হয়েছে। এর মধ্যে জয় হচ্ছেন ক্ষমতাচ্যুত ও মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে এবং জুনাইদ আহমেদ পলক সাবেক প্রতিমন্ত্রী।

বৃহস্পতিবার (০৪ ডিসেম্বর) তাদের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করা হয়। বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ অভিযোগ আমলে নিয়ে জয়ের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। আর পলককে আদালতে হাজির করতে বলে ১০ ডিসেম্বর পরবর্তী দিন ধার্য করেন বলে জানান প্রসিকিউটর গাজী মোনাওয়ার হুসাইন তামীম।

সাবেক প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা জয় এবং সাবেক আইসিটি প্রতিমন্ত্রী পলকের বিরুদ্ধে অন্তত তিনটি অভিযোগ আনা হয়েছে।

অভিযোগ-১

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে জয়ের অনুমোদনে প্রতিমন্ত্রী পলক ২০২৪ সালের ১৪ জুলাই দিবাগত রাত সোয়া ১২টার দিকে তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে একটি স্ট্যাটাস দেন। সেখানে তিনি লেখেন- ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ২৫ মার্চ ছাত্র-শিক্ষকদেরকে গণহত্যা করেছে রাজাকাররা, সেই রাজাকারদের পক্ষে রাজাকারের সন্তান বলে স্লোগান দিতে লজ্জা করে না?’

এরপর একই দিন রাত ১২টা ৪৫ মিনিটে তিনি একটি ছবি পোস্ট করেন। ক্যাপশনে লেখেন- ‘তুমি কে? আমি কে? বাঙালি, বাঙালি। তোমার–আমার ঠিকানা-পদ্মা, মেঘনা, যমুনা।’

রাত ১টা ১৫ মিনিটে তিনি আরেকটি ছবি পোস্ট করেন। সেখানে ক্যাপশন লিখেন- ‘একাত্তরের হাতিয়ার গর্জে উঠুক আরেকবার। তোরা যারা রাজাকার, এই মুহূর্তে বাংলা ছাড়।’

অভিযোগে বলা হয়- জয়ের নির্দেশ, অনুমোদন ও জ্ঞাতসারে পলকের এসব উত্তেজনামূলক পোস্টের কারণে ১৪ ও ১৫ জুলাই রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারাদেশে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশ ও ছাত্রলীগ-যুবলীগের সশস্ত্র ক্যাডাররা হামলা চালায়। এতে অসংখ্য শিক্ষার্থী আহত হন; আহতদের চিকিৎসায় বাধা দেয়া হয়; হাসপাতালে চিকিৎসাধীন শিক্ষার্থীদের ওপরও হামলা করা হয়।

সরকার পতনের দিন ৫ আগস্ট পর্যন্ত নির্যাতন চলতে থাকে। এ সময়ে সারাদেশে আবু সাঈদসহ ১ হাজার ৪০০ জনের বেশি আন্দোলনকারীকে হত্যা করা হয় এবং ২৫ হাজারের বেশি ছাত্র-জনতাকে গুরুতরভাবে জখম করা হয়।

অভিযোগ-২

অভিযোগে বলা হয়- শেখ হাসিনা ও জয়ের আদেশ, নির্দেশ ও জ্ঞাতসারে জুনাইদ আহমেদ পলক আন্দোলন দমনে লেথাল ওয়েপন ব্যবহারের সুযোগ তৈরি করতে এবং আন্দোলনকারীদের পারস্পরিক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করতে প্রথমে মোবাইল ইন্টারনেটের গতি কমিয়ে দেন; পরে সম্পূর্ণরূপে ইন্টারনেট বন্ধ করেন।

এরপর ইন্টারনেট বন্ধ রাখার বিষয়ে মিথ্যা বিবৃতি দেন এবং ব্রডব্যান্ডসহ সকল ইন্টারনেট সেবা ও ফেসবুক, টিকটক, হোয়াটসঅ্যাপসহ বিভিন্ন অ্যাপস (ক্যাশ সার্ভারসহ) বন্ধ করেন। এর ফলে জুলাই আন্দোলনের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধ আড়ালে থাকে এবং সারাদেশে হত্যা-নির্যাতন আরও বেড়ে যায়।

এ অভিযোগে সালমান এফ রহমানের সঙ্গে পলকের কথোপকথনের অংশও উত্থাপন করা হয়, যেখানে তিনি অ্যাপ-ব্লকিংয়ের তালিকা পাঠানো, অনুমোদন পাওয়া এবং ‘যখন মা বলবেন YES তখন ওপেন, NO বললে ব্লক’ এমন বক্তব্য উল্লেখ করেছেন।

অভিযোগে বলা হয়- জয়ের নির্দেশে পলক ১৪-১৫ জুলাই দেশের পাঁচটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায়, ১৬ জুলাই থেকে দেশের ৫৫টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও চারটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধ করেন। ২৮ জুলাই এনটিএমসির মাধ্যমে ফেসবুক-টিকটক-হোয়াটসঅ্যাপসহ বিভিন্ন অ্যাপস বন্ধ করা হয়। ১৮ জুলাই সন্ধ্যা থেকে দেশে সম্পূর্ণ ইন্টারনেট সেবা বন্ধের নির্দেশ দেয়া হয়।

এর ফলে আন্দোলনকারীরা পরস্পরের সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পারায় সহজেই শনাক্ত হয়ে যায় এবং সারাদেশে ব্লক রেইড, গ্রেপ্তার ও নির্যাতন ত্বরান্বিত হয়।

অভিযোগ-৩

অভিযোগে বলা হয়- জয়ের নির্দেশে এবং পলকের বাস্তবায়নে সারাদেশে ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ রেখে আন্দোলনের ভয়াবহতা আড়াল করা হয় এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ড্রোন ও হেলিকপ্টার দিয়ে আন্দোলনকারীদের শনাক্ত করে গুলি চালায়।

১৯ জুলাই বাড্ডা, রামপুরা, খিলগাঁও ও হাতিরঝিল এলাকায় ২৬ জনকে হত্যা করা হয়। ৫ আগস্ট উত্তরা এলাকায় আন্দোলন ঠেকাতে গুলি করে ৬ বছরের শিশু জাবির ইব্রাহীম, সামাউল আমান নুরসহ ৩২ জনকে হত্যা করার অভিযোগও উত্থাপন করা হয়েছে।

অভিযোগে বলা হয়- বহু নিহতের লাশ গুম করা হয়েছে, চিকিৎসা আটকানো হয়েছে, মৃতদেহ বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করা হয়েছে, এমনকি লাশ পুড়িয়ে ফেলার মতো অমানবিক আচরণ করা হয়েছে।

জনপ্রিয় সংবাদ

মেক্সিকোতে জরুরি অবতরণের সময় বিমান বিধ্বস্ত, নিহত ৭

ইন্টারনেট বন্ধ রেখে হত্যাযজ্ঞ আড়াল করার অভিযোগে সাজা হতে পারে জয়-পলকের

আপডেট সময় ১০:৫৮:৫৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৫ ডিসেম্বর ২০২৫

 

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সজীব আহমেদ ওয়াজেদ জয় এবং জুনাইদ আহমেদ পলকের বিরুদ্ধে ইন্টারনেট বন্ধ রেখে হত্যাযজ্ঞ আড়াল করার অভিযোগ আনা হয়েছে। এর মধ্যে জয় হচ্ছেন ক্ষমতাচ্যুত ও মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে এবং জুনাইদ আহমেদ পলক সাবেক প্রতিমন্ত্রী।

বৃহস্পতিবার (০৪ ডিসেম্বর) তাদের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করা হয়। বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ অভিযোগ আমলে নিয়ে জয়ের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। আর পলককে আদালতে হাজির করতে বলে ১০ ডিসেম্বর পরবর্তী দিন ধার্য করেন বলে জানান প্রসিকিউটর গাজী মোনাওয়ার হুসাইন তামীম।

সাবেক প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা জয় এবং সাবেক আইসিটি প্রতিমন্ত্রী পলকের বিরুদ্ধে অন্তত তিনটি অভিযোগ আনা হয়েছে।

অভিযোগ-১

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে জয়ের অনুমোদনে প্রতিমন্ত্রী পলক ২০২৪ সালের ১৪ জুলাই দিবাগত রাত সোয়া ১২টার দিকে তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে একটি স্ট্যাটাস দেন। সেখানে তিনি লেখেন- ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ২৫ মার্চ ছাত্র-শিক্ষকদেরকে গণহত্যা করেছে রাজাকাররা, সেই রাজাকারদের পক্ষে রাজাকারের সন্তান বলে স্লোগান দিতে লজ্জা করে না?’

এরপর একই দিন রাত ১২টা ৪৫ মিনিটে তিনি একটি ছবি পোস্ট করেন। ক্যাপশনে লেখেন- ‘তুমি কে? আমি কে? বাঙালি, বাঙালি। তোমার–আমার ঠিকানা-পদ্মা, মেঘনা, যমুনা।’

রাত ১টা ১৫ মিনিটে তিনি আরেকটি ছবি পোস্ট করেন। সেখানে ক্যাপশন লিখেন- ‘একাত্তরের হাতিয়ার গর্জে উঠুক আরেকবার। তোরা যারা রাজাকার, এই মুহূর্তে বাংলা ছাড়।’

অভিযোগে বলা হয়- জয়ের নির্দেশ, অনুমোদন ও জ্ঞাতসারে পলকের এসব উত্তেজনামূলক পোস্টের কারণে ১৪ ও ১৫ জুলাই রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারাদেশে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশ ও ছাত্রলীগ-যুবলীগের সশস্ত্র ক্যাডাররা হামলা চালায়। এতে অসংখ্য শিক্ষার্থী আহত হন; আহতদের চিকিৎসায় বাধা দেয়া হয়; হাসপাতালে চিকিৎসাধীন শিক্ষার্থীদের ওপরও হামলা করা হয়।

সরকার পতনের দিন ৫ আগস্ট পর্যন্ত নির্যাতন চলতে থাকে। এ সময়ে সারাদেশে আবু সাঈদসহ ১ হাজার ৪০০ জনের বেশি আন্দোলনকারীকে হত্যা করা হয় এবং ২৫ হাজারের বেশি ছাত্র-জনতাকে গুরুতরভাবে জখম করা হয়।

অভিযোগ-২

অভিযোগে বলা হয়- শেখ হাসিনা ও জয়ের আদেশ, নির্দেশ ও জ্ঞাতসারে জুনাইদ আহমেদ পলক আন্দোলন দমনে লেথাল ওয়েপন ব্যবহারের সুযোগ তৈরি করতে এবং আন্দোলনকারীদের পারস্পরিক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করতে প্রথমে মোবাইল ইন্টারনেটের গতি কমিয়ে দেন; পরে সম্পূর্ণরূপে ইন্টারনেট বন্ধ করেন।

এরপর ইন্টারনেট বন্ধ রাখার বিষয়ে মিথ্যা বিবৃতি দেন এবং ব্রডব্যান্ডসহ সকল ইন্টারনেট সেবা ও ফেসবুক, টিকটক, হোয়াটসঅ্যাপসহ বিভিন্ন অ্যাপস (ক্যাশ সার্ভারসহ) বন্ধ করেন। এর ফলে জুলাই আন্দোলনের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধ আড়ালে থাকে এবং সারাদেশে হত্যা-নির্যাতন আরও বেড়ে যায়।

এ অভিযোগে সালমান এফ রহমানের সঙ্গে পলকের কথোপকথনের অংশও উত্থাপন করা হয়, যেখানে তিনি অ্যাপ-ব্লকিংয়ের তালিকা পাঠানো, অনুমোদন পাওয়া এবং ‘যখন মা বলবেন YES তখন ওপেন, NO বললে ব্লক’ এমন বক্তব্য উল্লেখ করেছেন।

অভিযোগে বলা হয়- জয়ের নির্দেশে পলক ১৪-১৫ জুলাই দেশের পাঁচটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায়, ১৬ জুলাই থেকে দেশের ৫৫টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও চারটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধ করেন। ২৮ জুলাই এনটিএমসির মাধ্যমে ফেসবুক-টিকটক-হোয়াটসঅ্যাপসহ বিভিন্ন অ্যাপস বন্ধ করা হয়। ১৮ জুলাই সন্ধ্যা থেকে দেশে সম্পূর্ণ ইন্টারনেট সেবা বন্ধের নির্দেশ দেয়া হয়।

এর ফলে আন্দোলনকারীরা পরস্পরের সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পারায় সহজেই শনাক্ত হয়ে যায় এবং সারাদেশে ব্লক রেইড, গ্রেপ্তার ও নির্যাতন ত্বরান্বিত হয়।

অভিযোগ-৩

অভিযোগে বলা হয়- জয়ের নির্দেশে এবং পলকের বাস্তবায়নে সারাদেশে ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ রেখে আন্দোলনের ভয়াবহতা আড়াল করা হয় এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ড্রোন ও হেলিকপ্টার দিয়ে আন্দোলনকারীদের শনাক্ত করে গুলি চালায়।

১৯ জুলাই বাড্ডা, রামপুরা, খিলগাঁও ও হাতিরঝিল এলাকায় ২৬ জনকে হত্যা করা হয়। ৫ আগস্ট উত্তরা এলাকায় আন্দোলন ঠেকাতে গুলি করে ৬ বছরের শিশু জাবির ইব্রাহীম, সামাউল আমান নুরসহ ৩২ জনকে হত্যা করার অভিযোগও উত্থাপন করা হয়েছে।

অভিযোগে বলা হয়- বহু নিহতের লাশ গুম করা হয়েছে, চিকিৎসা আটকানো হয়েছে, মৃতদেহ বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করা হয়েছে, এমনকি লাশ পুড়িয়ে ফেলার মতো অমানবিক আচরণ করা হয়েছে।