বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে সম্পাদিত জাতীয় স্বার্থবিরোধী লালদিয়া-পানগাঁও টার্মিনাল ইজারা চুক্তি বাতিল এবং নিউমুরিং ও পতেঙ্গা টার্মিনাল বিদেশি কোম্পানিকে ইজারা দেওয়ার প্রক্রিয়া বন্ধের দাবিতে যমুনা অভিমুখে বিক্ষোভ মিছিলে পুলিশের লাঠিপেটার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি।
শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) কমিটির পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে এই নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয়। কমিটির পক্ষে বিবৃতিটি দিয়েছেন অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ এবং মারজিয়া প্রভা।
গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি বলেছে, ৪ ডিসেম্বর সকাল ১১টায় বাম গণতান্ত্রিক জোট, ফ্যাসিবাদবিরোধী বাম মোর্চা, বাংলাদেশ জাসদ ও জাতীয় গণফ্রন্টের যৌথ উদ্যোগে এবং গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের উদ্যোগে জনমত উপেক্ষা করে চট্টগ্রাম বন্দর বিদেশীদের ইজারা দেওয়ার সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবিতে পূর্বসিদ্ধান্ত অনুযায়ী যমুনা বরাবর বিক্ষোভ মিছিলের কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। মিছিলটি জাতীয় প্রেস ক্লাবের সমাবেশ শেষ করে রাজধানীর কাকরাইল মোড়ে এলে পুলিশি বাধার মুখে পড়ে। এইসময় পুলিশ বিক্ষোভকারীদের ওপর লাঠিপেটা চালায়। এতে আহত হন সিপিবির আবদুল্লাহ ক্বাফী আল রতন, কাজী রুহুল আমিন, জহুর লাল রায়, অন্ত অবিন্দম, ইমতিয়াজ আহমেদ রাফিন, রাসেল আহমেদ, শোয়েইব আহমেদ আসিফ, প্রিজম ফকির, বাসদ (মার্কসবাদী)’র সীমা দত্ত, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের শাহিনুর আক্তার সুমি, নাহিয়ান রেহমান রাহাত, পংকজনাথ সুর্য, গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের ফাহিম আহমেদ চৌধুরী, স্কাইয়া ইসলাম, রাকিব আহমেদসহ প্রায় ৩০ জন নেতাকর্মী। গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি ন্যায্য দাবি দাওয়ার এই বিক্ষোভে পুলিশি হামলার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে।
বিবৃতিতে কমিটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি চলমান বন্দর চুক্তির বিরোধিতার প্রতিবাদে সংহতি জানিয়ে মনে করে, জনমতকে উপেক্ষা করে গোপন চুক্তির মাধ্যমে চট্টগ্রাম বন্দরকে বিদেশিদের কাছে ইজারা দেওয়া একটি জাতীয় স্বার্থবিরোধী তৎপরতা। এই চুক্তির সম্পর্কে সম্প্রতি গণমাধ্যমের প্রতিবেদন থেকে অনেক অস্বচ্ছতার সংবাদ জনগণের নিকট প্রকাশিত হয়েছে। চুক্তির সময়সীমা নিয়ে লুকোচরি, কন্টেইনার হ্যান্ডেলিং এ অর্থের হিসাবে ঘাটতি, বিদেশী ইজারাদার কোম্পানির সুবিধা গোপন, চুক্তির সঙ্গে উপদেষ্টার আত্মীয় জড়িত থাকার মাধ্যমে কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্টের সূচনা- এই ধরণের নানাবিধ দিক উন্মোচিত হয়েছে সংবাদমাধ্যমে যা জনমানসে প্রশ্ন তৈরি করছে। কিন্তু প্রশ্নের সুরাহা না করে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার চট্টগ্রাম বন্দরকে বিদেশী কোম্পানির কাছে ইজারা দিতে কেন অত্যধিক তাড়াহুড়া চালাচ্ছে তা এই দেশের জনগণের জানা দরকার। জনমত প্রতিষ্ঠিত ছাড়া এবং জাতীয় সক্ষমতাকে মূল্যায়ন না করে গোপনভাবে সম্পন্নকৃত বন্দর চুক্তিকে বাতিল করাই বরং অন্তর্বর্তী সরকারের এই মূহুর্তে অন্যতম দায়িত্ব মনে করে গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ‘কিন্তু আমরা দেখতে পেলাম, বাম গণতান্ত্রিক জোট, ফ্যাসিবাদবিরোধী বাম মোর্চা, বাংলাদেশ জাসদ, জাতীয় গণফ্রন্ট, গণতান্ত্রিক ছাত্র জোট যখন এই কথাটি জানাতেই যমুনা অভিমুখে মিছিলটির আয়োজন করলো, তখন পুলিশ ফ্যাসিবাদী কায়দায় বিক্ষোভকারীদের ওপর হামলা চালিয়ে রক্তাক্ত করলো। গত এক বছরে আমরা দেখেছি, বারবার পুলিশ সংস্কারের কথা বলা হলেও, পুলিশ বারবার ফ্যাসিবাদী কায়দার জনবিরোধী ভূমিকায় নামছে। নাগরিকরা তাদের অধিকারবলে সভা সমাবেশ এবং মিছিল করলে পুলিশকে অধিকারলঙ্ঘনকারী দমনকারীর ভূমিকাতেই দেখা যাচ্ছে। আমরা পুলিশের এই ধরণের দমনকারী ভূমিকার প্রতি তীব্র নিন্দা জানাই।’
























