ঢাকা ০৬:৪৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৫, ৭ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ছয়টি আসনই নিজেদের দখলে নিতে মরিয়া বিএনপি ও জামায়াত

  • ডেস্ক রিপোর্টঃ
  • আপডেট সময় ০১:২০:০৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৬ ডিসেম্বর ২০২৫
  • ৫৪৯ বার পড়া হয়েছে

 

ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে জেলার সর্বত্রই বইছে নির্বাচনী হাওয়া। এ জেলায় সংসদীয় আসন রয়েছে ৬টি। সেগুলো হলো ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১ (নাসিরনগর), ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল ও আশুগঞ্জ), ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ (সদর ও বিজয়নগর), ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ (কসবা ও আখাউড়া), ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৫ (নবীনগর), ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৬ (বাঞ্ছারাম-পুর)। জামায়াতে ইসলামী সব আসনে আগেই প্রার্থী ঘোষণা করেছে। তবে বিএনপি ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৬ আসনে এখনো প্রার্থী দেয়নি। তবে থেমে নেই প্রচার। এখন র্থীদের পদচারণায় মুখর জেলার শহর, গ্রাম ও শিল্প এলাকা। কোমর বেঁধে মাঠে নেমেছেন বিএনপি, জামায়াতে ইসলাম, এনসিপিসহ বিভিন্ন দলের প্রার্থীরা। আগেভাগে প্রার্থী ঘোষণা করে প্রচারে এগিয়ে আছে জামায়াতে ইসলামী।

জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) আনুষ্ঠানিকভাবে প্রার্থী ঘোষণা না করলেও সদরসহ কয়েকটি আসনে দলটির নেতারা তৎপর রয়েছেন। এককভাবে প্রতিটি আসনে প্রচার চালাচ্ছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ও বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস। এছাড়া বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) তিনটিতে এবং গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকিসহ দুজন দুইটি আসনে প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার রাজনীতিতে এক সময় আওয়ামী লীগের প্রভাব ছিল। গত বছরের ৫ আগস্টের পর দলটির নেতাকর্মীদের অধিকাংশই আত্মগোপনে চলে গেছেন। একইভাবে জাতীয় পার্টির (জাপা) সাংগঠনিক কার্যক্রম নেই বললেই চলে। ছয়টি আসনই নিজেদের দখলে নিতে মরিয়া বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১ (নাসিরনগর) \ এই আসনটিতে আগে জিততে পারেনি বিএনপি। ১৯৭০ সালের পর আওয়ামী লীগ আটবার, জাপা দুইবার, ন্যাপ একবার ও স্বতন্ত্র প্রার্থী দুইবার জয়ী হয়েছেন। এবার নাসিরনগর উপজেলা বিএনপির সভাপতি মো. আবদুল হান্নানকে মনোনয়ন দিয়েছে দলটি।

বিএনপির মনোনয়ন পাওয়া আবদুল হান্নান জানান, ১৯৯১ সাল থেকে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল শুরু করি। ১৯৯৭ সালে আমি ঢাকাস্থ নাসিরনগর ছাত্রকল্যাণ সমিতির নির্বাচিত সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলাম। আমি ২০০৪ সালে উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি নির্বাচিত হই। ২০০৯ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত উপজেলা বিএনপির নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক ছিলাম। বিএনপি দল থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১ আসনে ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী হিসেবে আমাকে মনোনয়ন দিয়েছে। আমি প্রচারণা চালাচ্ছি। ইনশাল্লাহ আমার পক্ষে ধানের শীষের ব্যাপক সমর্থন রয়েছে।

অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামী থেকে মনোনয়ন পান অধ্যাপক এ কে এম আমিনুল ইসলাম । তিনি বলেন, আমি ছাত্রজীবন থেকেই বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামের সঙ্গে জড়িত আছি। আমি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দুইবার এবং নাসিরনগর উপজেলায় দুইবার আমির হিসেবে দায়িত্ব পালন করি। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সেক্রেটারি হিসেবেও নিয়োজিত ছিলাম। ২০২৩ সালের শেষের দিকে নাসিরনগর উপজেলার আমিরের দায়িত্ব আমার কাছে আসে। এখন আমি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১ আসনের মনোনীত প্রার্থী। মাঠ পর্যায়ে আমাদের প্রচারণা চলছে। প্রতিদিন উঠান বৈঠক করছি। গ্রামে গ্রামে যাচ্ছি এবং ভালো সাড়াও পাওয়া যাচ্ছে।

এছাড়া ইসলামী আন্দোলনের উপজেলা সভাপতি মাওলানা হুসাইন আহমেদ আলী ও বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মাওলানা সাইদুল্লা বিন আনসারী মাঠে আছেন।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল ও আশুগঞ্জ) \ এক সময় এই আসনটি বিএনপির দুর্গ বলে পরিচিত ছিল। এই আসনে বিএনপি ছয়বার, জাপা তিনবার ও স্বতন্ত্র প্রার্থী একবার জয়ী হয়েছেন। এখানে এখনো প্রার্থী ঘোষণা করেনি বিএনপি। পাশাপাশি বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যেও চলছে বিরোধ। দীর্ঘদিন ধরে এখানে সক্রিয় সংরক্ষিত নারী আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সহসম্পাদক রুমিন ফারহানা। এছাড়া জেলা বিএনপির উপদেষ্টা ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শেখ মো. শামীম, জেলা বিএনপির সদস্য আহসান উদ্দিন খান, বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান কল্যাণ ফ্রন্টের মহাসচিব এস এন তরুণ দেব, সরাইল উপজেলা বিএনপির সভাপতি আনিসুল ইসলাম ঠাকুর, সরাইল উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নুরুজ্জামান লস্কর এবং আশুগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি শাহজাহান সিরাজ দলের মনোনয়নপ্রত্যাশী।

অন্যদিকে জামায়াতের কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্য ও জেলা আমির মোবারক হোসেন আকন্দকে দলীয় প্রার্থী করা হয়েছে। জামায়াতের মনোনয়ন পাওয়া আমির মোবারক হোসেন জানান, জুন মাসের ১ তারিখ থেকে আমরা প্রচার শুরু করে দিয়েছি। জনগণের সমাজকল্যাণমূলক কিছু কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। প্রায় ২৫টি সেলাই মেশিন বিতরণ করা হয়েছে। জনগণের উন্নয়নমূলক কার্যক্রম আমরা জনগণের কাছে আশাবাদী ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে জয়লাভ করব।

বিএনপির আরেক মনোনয়নপ্রত্যাশী আনিসুল ইসলাম ঠাকুর বলেন, এই আসন বিএনপির ঘাঁটি। আমরা চাই দল থেকে ধানের শীষ প্রতীকের কাউকে মনোনয়ন দেওয়া হোক।

এখানে জোটের প্রার্থী হিসেবে হেফাজতে ইসলামের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব জুনাইদ আল হাবিবকে মনোনয়ন দেওয়ার আলোচনা আছে।

আসনটিতে দীর্ঘদিন ধরে গণসংযোগ করছেন জামায়াত নেতা মোবারক হোসেন আকন্দ। এছাড়া ইসলামী আন্দোলনের আশুগঞ্জ উপজেলার সহ-সভাপতি নেছার আহমদ আন-নাছিরী, বাংলাদেশ খেলাফত মসজিসের সভাপতি মাওলানা মনিরুল ইসলাম খন্দকার, সিপিবির সরাইল উপজেলা সভাপতি দেবদাস সিংহ রায় ও এনসিপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম আহবায়ক আশরাফ মাহদী প্রার্থী হতে পারেন বলে জানা গেছে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ (সদর ও বিজয়নগর) \ আসনটিতে ১৯৯১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপি জয় পেয়েছিল। এবার ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে এ আসনে নির্বাচনের মাঠে বিএনপির মনোনীত হন খালেদ হোসেন মাহবুব শ্যামল। তিনি এই আসনে ২০১১ সালে উপনির্বাচন, ২০১৮ সালে বিএনপির প্রার্থী ছিলেন। নির্বাচনে জয়ের লক্ষ্যে তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসনের বিজয়নগর উপজেলায় গণসংযোগ চালাচ্ছেন। বিগত সময়ের নির্বাচনের প্রার্থী হয়েও নানাভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন তিনি। তবুও অদম্যভাবে তিনি এখনো নির্বাচনী মাঠেই রয়েছেন। এছাড়া আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু হবে বলে মনে করেন তিনি। তরুণদের মাঝেও রয়েছে তার ব্যাপক আগ্রহ ও প্রচারণা।

খালেদ হোসেন মাহবুব (শ্যামল) বলেন, নির্বাচন নিয়ে আমরা কাজ শুরু করেছি। আমরা আগে থেকেই মাঠে মিশনে নেমে গেছি। মানুষের সঙ্গে গণসংযোগ চলছে। আমি দল থেকে প্রাথমিকভাবে মনোনয়ন পেয়েছি এবং আমি আশাবাদী ইনশাআল্লাহ দল আমাকে চ‚ড়ান্ত মনোনয়ন দেবে।

অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামী দলের ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শাখার সহকারী সেক্রেটারি মো. জোনায়েদ হাসানকে দল থেকে মনোনীত করেছে। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী অধ্যাপক জুনায়েদ হাসান ভোটের মাঠে আগে থেকেই কাজ করছেন। অধ্যাপক জুনায়েদ হাসান জেলা জামায়াতে ইসলামীর জেলা কমিটির সহ-সাধারণ সম্পাদক পদে নিয়োজিত আছেন। তিনি বেশ কয়েকমাস যাবৎ বিভিন্ন জনসমাবেশ এবং নির্বাচনী সংসদীয় আসন এলাকায় ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।

এনসিপি নেতা মো. আতাউল্লাহ বলেন, জেলার প্রতিটি আসন থেকে এনসিপির চার থেকে পাঁচজন দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। দ্রুত মনোনয়ন চ‚ড়ান্ত করে প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করা হবে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ (কসবা ও আখাউড়া) \ এই আসনে ভোটের হিসাবে বিএনপি, আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি শক্তিশালী হলেও ভোটের মাঠে জাতীয় পার্টি ও আওয়ামী লীগ না থাকায় বিএনপি এখন শক্ত অবস্থানে রয়েছে। এই আসনে জামায়াতে ইসলামীর তেমন ভোট না থাকলেও জোর প্রচারে রয়েছে তারা। ভোটের তফসিল ঘোষণা হয়নি। তারপরও এই আসনের দুই উপজেলা আখাউড়া ও কসবায় নির্বাচনী উত্তাপ ছড়িয়ে পড়েছে।

এই আসনে বিএনপি থেকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে সাবেক সংসদ সদস্য ও খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা মুশফিকুর রহমানকে। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী মনোনয়ন দিয়েছে মো. আতাউর রহমানকে। আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির প্রার্থী না থাকায় বিএনপির প্রার্থী অনেক এগিয়ে রয়েছেন। জামায়াতে ইসলামীও প্রতিদ্ব›িদ্বতায় আসার জন্য নির্বাচনী মাঠে সরব রয়েছে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল মনসুর মিশন বলেন, এ আসনে বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা সাবেক এমপি মুশফিকুর রহমানকে মনোনয়ন দেওয়ায় তৃণমূল নেতাকর্মীরা উজ্জীবিত। সংসদ সদস্য থাকার সময় তিনি এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন। তার রয়েছে বর্ণাঢ্য পারিবারিক ইতিহাস। সজ্জন মানুষ হিসেবে আলোচিত। মুশফিকুর রহমান একমাত্র জীবিত সিএসপি অফিসার, যিনি এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন। এখানে তিনি মনোনয়ন পাওয়ায় তৃণমূল নেতাকর্মীরা আনন্দিত। নেতাকর্মী সকলে এককাট্টা হয়ে তার পক্ষে কাজ করছে।

এদিকে আসনটিতে জামায়াত ঢাকা মহানগর উত্তরের প্রচার ও মিডিয়া সম্পাদক মো. আতাউর রহমান সরকারকে প্রার্থী করা হয়েছে। আখাউড়া জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি বোরহান উদ্দিন খান বলেন, এই আসনে পরিবর্তনের হাওয়া বইছে। জনগণ নতুন নেতৃত্ব চাচ্ছে। আশা করছি এই আসনটিতে জামায়াতে ইসলামী জয়লাভ করবে।

এই আসনে জাতীয় পার্টি, নাগরিক পার্টি এনসিপি এখনো চূড়ান্ত প্রার্থী দেয়নি। এ আসন থেকে ইতোমধ্যে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ আলহাজ মুফতি জসিম উদ্দিন, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস থেকে মাওলানা জয়নাল আবেদীনকে চূড়ান্ত করেছে তাদের দল।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৫ (নবীনগর) \ নবীনগর উপজেলা বিএনপির সভাপতি মো. আবদুল মান্নানকে মনোনয়ন দিয়েছে বিএনপি। আবদুল মান্নান বলেন, যদি নির্বাচনে বিজয়ী হই তাহলে নবীনগরের দুর্নীতিবাজ, চাঁদাবাজচক্র এবং বালুমহালের অবৈধ কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হবে। নবীনগর টু ঢাকা ও নবীনগর টু আশুগঞ্জ সড়ক দ্রুত সংস্কার করে জনগণের দীর্ঘদিনের ভোগান্তি দূর করা হবে। একই সঙ্গে নবীনগরে গ্যাস সরবরাহের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হবে। সবাইকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে চাই।

আসনটিতে আইনজীবী আবদুল বাতেনকে প্রার্থী করেছে জামায়াতে ইসলামী। এছাড়া এনসিপির জেলার সংগঠক এ বি এম কবির আলম, ইসলামী আন্দোলনের প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মাওলানা আবদুল কাইয়ুম ফারুকী, সিপিবির উপজেলা সাধারণ সম্পাদক শাহিন খান ও গণসংহতি আন্দোলনের নাহিদা সাহান মাঠে আছেন।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৬ (বাঞ্ছারামপুর) \ এ আসনে বিএনপির ডজনখানেক মনোনয়নপ্রত্যাশী থাকলেও মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন জামায়াতের একক প্রার্থী অধ্যাপাক দেওয়ান মো. নকিবুল হুদা। বিএনপি ও জামায়াতসহ অন্যান্য দলের প্রার্থীরা ইউনিয়ন-ওয়ার্ড পর্যায়ে সভা-সমাবেশ, ধর্মীয় ও সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে ভোটারদের কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা চালাচ্ছেন।

জামায়াতের প্রার্থী অধ্যাপক দেওয়ান মো. নকিবুল হুদা নির্বাচনী এলাকায় সক্রিয়। তিনি জানিয়েছেন, নির্বাচিত হলে এলাকার মানুষ আর বঞ্চিত বা বৈষ্যমের শিকার হবেন না। তিনি কেন্দ্রীয় শূরা সদস্য ও কুমিল্লা অঞ্চল টিমের বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সাত্তারকে মাঠে নিয়ে সমাবেশ আয়োজন করেছেন। উপজেলা জামায়াতের সেক্রেটারি মো. শামীম নূর ইসলাম জানিয়েছেন, অধ্যাপক দেওয়ান মো. নকিবুল হুদার অবদান অনন্য এবং দল তাকে মনোনয়ন দিয়েছে।

বিএনপিতে ডজনখানেক মনোনয়নপ্রত্যাশীর মধ্যে দলের একাংশ এম এ খালেক পিএসসিকে (অব.) অনুসরণ করছে, অপরাংশ কৃষিবিদ মেহেদী হাসান পলাশকে কেন্দ্র করে। আলোচনায় রয়েছেন অ্যাডভোকেট রফিক সিকদার, অ্যাডভোকেট জিয়া উদ্দিন জিয়া, মেজর এসএম সাইদুল ইসলাম পিএসসি (অব.), আনিসুর রহমান (সুজন) ও সাবেক এমপি এটিএম ওয়ালী আশরাফের মেয়ে রাইকা ওয়ালী খান। বিএনপির একাংশ আশাবাদী দল মনোনয়ন যাকে দিক ভোটাররা তাকে বিজয়ী করবেন।

তবে দলের ভেতরের বিভাজন প্রতিযোগিতাকে জটিল করেছে, যা জামায়াতের জন্য সুবিধাজনক। এই আসনে প্রথমবারের মতো মনোনয়নপ্রত্যাশী হয়েছেন ছাত্রদল মনোনীত (বাকসু) সাবেক ভিপি ও সাবেক জাতিসংঘ কর্মকর্তা প্রকৌশলী ড. মো. সাইদুজ্জামান কামাল। তিনি ‘ক্লিন ইমেজ’ প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার আশা প্রকাশ করেছেন।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ কাজী মোহাম্মদ আলী এবং খেলাফত মজলিস মাওলানা আব্দুল মজিদ মোল্লাকে মনোনয়ন দিয়েছে। জাতীয় নাগরিক পার্টির মোহাম্মদ মাইনউদ্দিনও অংশ নিচ্ছেন। তবে জোটগত কারণে এই আসন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকির জন্য ছেড়ে দিতে হতে পারে বিএনপিকে।

জোনায়েদ সাকি জানান, তিনি বাঞ্ছারামপুরের মানুষের আশা-আকাক্সক্ষা পূরণে অবিরাম কাজ করে যাচ্ছেন এবং জোট বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। উপজেলা বিএনপির সভাপতি কৃষিবিদ মেহেদী হাসান পলাশ আশাবাদী বাঞ্ছারামপুর বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে আসন্ন নির্বাচনে দল বিপুল ব্যবধানে জয়ী হবে। মনোনয়ন যাকে দেওয়া হবে ভোটাররা তাকে নির্বাচিত করবেন।

বাঞ্ছারামপুরে বিএনপির শক্তিশালী ভিত্তি থাকা সত্তে¡ও মনোনয়নপ্রত্যাশীর ভিড় ও দলের ভেতরের বিভাজন তাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অন্যদিকে জামায়াত একক প্রার্থী হিসেবে মাঠে সক্রিয় এবং বিভাজিত প্রতিদ্ব›দ্বীদের সুযোগ নিয়ে এগিয়ে আছেন। নতুন মুখ ও ক্লিন ইমেজ প্রার্থীর আগমনে ভোটের গতি-প্রকৃতি আরও গতিশীল ও অনিশ্চিত হয়ে উঠেছে। ভোটারদের মনস্তাত্তি¡ক প্রভাব, স্থানীয় জনমতের ধারা এবং দলের ঐক্য ভবিষ্যতের ফলাফলের মূল নির্ধারক হবে।

জনপ্রিয় সংবাদ

ওসমান হাদির পক্ষ থেকে কোনো অনুদান নয়, চাই অসমাপ্ত বিপ্লবের সমাপ্তি: ওমর হাদি

ছয়টি আসনই নিজেদের দখলে নিতে মরিয়া বিএনপি ও জামায়াত

আপডেট সময় ০১:২০:০৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৬ ডিসেম্বর ২০২৫

 

ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে জেলার সর্বত্রই বইছে নির্বাচনী হাওয়া। এ জেলায় সংসদীয় আসন রয়েছে ৬টি। সেগুলো হলো ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১ (নাসিরনগর), ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল ও আশুগঞ্জ), ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ (সদর ও বিজয়নগর), ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ (কসবা ও আখাউড়া), ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৫ (নবীনগর), ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৬ (বাঞ্ছারাম-পুর)। জামায়াতে ইসলামী সব আসনে আগেই প্রার্থী ঘোষণা করেছে। তবে বিএনপি ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৬ আসনে এখনো প্রার্থী দেয়নি। তবে থেমে নেই প্রচার। এখন র্থীদের পদচারণায় মুখর জেলার শহর, গ্রাম ও শিল্প এলাকা। কোমর বেঁধে মাঠে নেমেছেন বিএনপি, জামায়াতে ইসলাম, এনসিপিসহ বিভিন্ন দলের প্রার্থীরা। আগেভাগে প্রার্থী ঘোষণা করে প্রচারে এগিয়ে আছে জামায়াতে ইসলামী।

জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) আনুষ্ঠানিকভাবে প্রার্থী ঘোষণা না করলেও সদরসহ কয়েকটি আসনে দলটির নেতারা তৎপর রয়েছেন। এককভাবে প্রতিটি আসনে প্রচার চালাচ্ছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ও বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস। এছাড়া বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) তিনটিতে এবং গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকিসহ দুজন দুইটি আসনে প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার রাজনীতিতে এক সময় আওয়ামী লীগের প্রভাব ছিল। গত বছরের ৫ আগস্টের পর দলটির নেতাকর্মীদের অধিকাংশই আত্মগোপনে চলে গেছেন। একইভাবে জাতীয় পার্টির (জাপা) সাংগঠনিক কার্যক্রম নেই বললেই চলে। ছয়টি আসনই নিজেদের দখলে নিতে মরিয়া বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১ (নাসিরনগর) \ এই আসনটিতে আগে জিততে পারেনি বিএনপি। ১৯৭০ সালের পর আওয়ামী লীগ আটবার, জাপা দুইবার, ন্যাপ একবার ও স্বতন্ত্র প্রার্থী দুইবার জয়ী হয়েছেন। এবার নাসিরনগর উপজেলা বিএনপির সভাপতি মো. আবদুল হান্নানকে মনোনয়ন দিয়েছে দলটি।

বিএনপির মনোনয়ন পাওয়া আবদুল হান্নান জানান, ১৯৯১ সাল থেকে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল শুরু করি। ১৯৯৭ সালে আমি ঢাকাস্থ নাসিরনগর ছাত্রকল্যাণ সমিতির নির্বাচিত সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলাম। আমি ২০০৪ সালে উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি নির্বাচিত হই। ২০০৯ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত উপজেলা বিএনপির নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক ছিলাম। বিএনপি দল থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১ আসনে ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী হিসেবে আমাকে মনোনয়ন দিয়েছে। আমি প্রচারণা চালাচ্ছি। ইনশাল্লাহ আমার পক্ষে ধানের শীষের ব্যাপক সমর্থন রয়েছে।

অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামী থেকে মনোনয়ন পান অধ্যাপক এ কে এম আমিনুল ইসলাম । তিনি বলেন, আমি ছাত্রজীবন থেকেই বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামের সঙ্গে জড়িত আছি। আমি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দুইবার এবং নাসিরনগর উপজেলায় দুইবার আমির হিসেবে দায়িত্ব পালন করি। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সেক্রেটারি হিসেবেও নিয়োজিত ছিলাম। ২০২৩ সালের শেষের দিকে নাসিরনগর উপজেলার আমিরের দায়িত্ব আমার কাছে আসে। এখন আমি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১ আসনের মনোনীত প্রার্থী। মাঠ পর্যায়ে আমাদের প্রচারণা চলছে। প্রতিদিন উঠান বৈঠক করছি। গ্রামে গ্রামে যাচ্ছি এবং ভালো সাড়াও পাওয়া যাচ্ছে।

এছাড়া ইসলামী আন্দোলনের উপজেলা সভাপতি মাওলানা হুসাইন আহমেদ আলী ও বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মাওলানা সাইদুল্লা বিন আনসারী মাঠে আছেন।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল ও আশুগঞ্জ) \ এক সময় এই আসনটি বিএনপির দুর্গ বলে পরিচিত ছিল। এই আসনে বিএনপি ছয়বার, জাপা তিনবার ও স্বতন্ত্র প্রার্থী একবার জয়ী হয়েছেন। এখানে এখনো প্রার্থী ঘোষণা করেনি বিএনপি। পাশাপাশি বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যেও চলছে বিরোধ। দীর্ঘদিন ধরে এখানে সক্রিয় সংরক্ষিত নারী আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সহসম্পাদক রুমিন ফারহানা। এছাড়া জেলা বিএনপির উপদেষ্টা ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শেখ মো. শামীম, জেলা বিএনপির সদস্য আহসান উদ্দিন খান, বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান কল্যাণ ফ্রন্টের মহাসচিব এস এন তরুণ দেব, সরাইল উপজেলা বিএনপির সভাপতি আনিসুল ইসলাম ঠাকুর, সরাইল উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নুরুজ্জামান লস্কর এবং আশুগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি শাহজাহান সিরাজ দলের মনোনয়নপ্রত্যাশী।

অন্যদিকে জামায়াতের কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্য ও জেলা আমির মোবারক হোসেন আকন্দকে দলীয় প্রার্থী করা হয়েছে। জামায়াতের মনোনয়ন পাওয়া আমির মোবারক হোসেন জানান, জুন মাসের ১ তারিখ থেকে আমরা প্রচার শুরু করে দিয়েছি। জনগণের সমাজকল্যাণমূলক কিছু কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। প্রায় ২৫টি সেলাই মেশিন বিতরণ করা হয়েছে। জনগণের উন্নয়নমূলক কার্যক্রম আমরা জনগণের কাছে আশাবাদী ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে জয়লাভ করব।

বিএনপির আরেক মনোনয়নপ্রত্যাশী আনিসুল ইসলাম ঠাকুর বলেন, এই আসন বিএনপির ঘাঁটি। আমরা চাই দল থেকে ধানের শীষ প্রতীকের কাউকে মনোনয়ন দেওয়া হোক।

এখানে জোটের প্রার্থী হিসেবে হেফাজতে ইসলামের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব জুনাইদ আল হাবিবকে মনোনয়ন দেওয়ার আলোচনা আছে।

আসনটিতে দীর্ঘদিন ধরে গণসংযোগ করছেন জামায়াত নেতা মোবারক হোসেন আকন্দ। এছাড়া ইসলামী আন্দোলনের আশুগঞ্জ উপজেলার সহ-সভাপতি নেছার আহমদ আন-নাছিরী, বাংলাদেশ খেলাফত মসজিসের সভাপতি মাওলানা মনিরুল ইসলাম খন্দকার, সিপিবির সরাইল উপজেলা সভাপতি দেবদাস সিংহ রায় ও এনসিপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম আহবায়ক আশরাফ মাহদী প্রার্থী হতে পারেন বলে জানা গেছে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ (সদর ও বিজয়নগর) \ আসনটিতে ১৯৯১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপি জয় পেয়েছিল। এবার ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে এ আসনে নির্বাচনের মাঠে বিএনপির মনোনীত হন খালেদ হোসেন মাহবুব শ্যামল। তিনি এই আসনে ২০১১ সালে উপনির্বাচন, ২০১৮ সালে বিএনপির প্রার্থী ছিলেন। নির্বাচনে জয়ের লক্ষ্যে তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসনের বিজয়নগর উপজেলায় গণসংযোগ চালাচ্ছেন। বিগত সময়ের নির্বাচনের প্রার্থী হয়েও নানাভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন তিনি। তবুও অদম্যভাবে তিনি এখনো নির্বাচনী মাঠেই রয়েছেন। এছাড়া আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু হবে বলে মনে করেন তিনি। তরুণদের মাঝেও রয়েছে তার ব্যাপক আগ্রহ ও প্রচারণা।

খালেদ হোসেন মাহবুব (শ্যামল) বলেন, নির্বাচন নিয়ে আমরা কাজ শুরু করেছি। আমরা আগে থেকেই মাঠে মিশনে নেমে গেছি। মানুষের সঙ্গে গণসংযোগ চলছে। আমি দল থেকে প্রাথমিকভাবে মনোনয়ন পেয়েছি এবং আমি আশাবাদী ইনশাআল্লাহ দল আমাকে চ‚ড়ান্ত মনোনয়ন দেবে।

অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামী দলের ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শাখার সহকারী সেক্রেটারি মো. জোনায়েদ হাসানকে দল থেকে মনোনীত করেছে। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী অধ্যাপক জুনায়েদ হাসান ভোটের মাঠে আগে থেকেই কাজ করছেন। অধ্যাপক জুনায়েদ হাসান জেলা জামায়াতে ইসলামীর জেলা কমিটির সহ-সাধারণ সম্পাদক পদে নিয়োজিত আছেন। তিনি বেশ কয়েকমাস যাবৎ বিভিন্ন জনসমাবেশ এবং নির্বাচনী সংসদীয় আসন এলাকায় ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।

এনসিপি নেতা মো. আতাউল্লাহ বলেন, জেলার প্রতিটি আসন থেকে এনসিপির চার থেকে পাঁচজন দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। দ্রুত মনোনয়ন চ‚ড়ান্ত করে প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করা হবে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ (কসবা ও আখাউড়া) \ এই আসনে ভোটের হিসাবে বিএনপি, আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি শক্তিশালী হলেও ভোটের মাঠে জাতীয় পার্টি ও আওয়ামী লীগ না থাকায় বিএনপি এখন শক্ত অবস্থানে রয়েছে। এই আসনে জামায়াতে ইসলামীর তেমন ভোট না থাকলেও জোর প্রচারে রয়েছে তারা। ভোটের তফসিল ঘোষণা হয়নি। তারপরও এই আসনের দুই উপজেলা আখাউড়া ও কসবায় নির্বাচনী উত্তাপ ছড়িয়ে পড়েছে।

এই আসনে বিএনপি থেকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে সাবেক সংসদ সদস্য ও খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা মুশফিকুর রহমানকে। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী মনোনয়ন দিয়েছে মো. আতাউর রহমানকে। আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির প্রার্থী না থাকায় বিএনপির প্রার্থী অনেক এগিয়ে রয়েছেন। জামায়াতে ইসলামীও প্রতিদ্ব›িদ্বতায় আসার জন্য নির্বাচনী মাঠে সরব রয়েছে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল মনসুর মিশন বলেন, এ আসনে বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা সাবেক এমপি মুশফিকুর রহমানকে মনোনয়ন দেওয়ায় তৃণমূল নেতাকর্মীরা উজ্জীবিত। সংসদ সদস্য থাকার সময় তিনি এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন। তার রয়েছে বর্ণাঢ্য পারিবারিক ইতিহাস। সজ্জন মানুষ হিসেবে আলোচিত। মুশফিকুর রহমান একমাত্র জীবিত সিএসপি অফিসার, যিনি এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন। এখানে তিনি মনোনয়ন পাওয়ায় তৃণমূল নেতাকর্মীরা আনন্দিত। নেতাকর্মী সকলে এককাট্টা হয়ে তার পক্ষে কাজ করছে।

এদিকে আসনটিতে জামায়াত ঢাকা মহানগর উত্তরের প্রচার ও মিডিয়া সম্পাদক মো. আতাউর রহমান সরকারকে প্রার্থী করা হয়েছে। আখাউড়া জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি বোরহান উদ্দিন খান বলেন, এই আসনে পরিবর্তনের হাওয়া বইছে। জনগণ নতুন নেতৃত্ব চাচ্ছে। আশা করছি এই আসনটিতে জামায়াতে ইসলামী জয়লাভ করবে।

এই আসনে জাতীয় পার্টি, নাগরিক পার্টি এনসিপি এখনো চূড়ান্ত প্রার্থী দেয়নি। এ আসন থেকে ইতোমধ্যে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ আলহাজ মুফতি জসিম উদ্দিন, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস থেকে মাওলানা জয়নাল আবেদীনকে চূড়ান্ত করেছে তাদের দল।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৫ (নবীনগর) \ নবীনগর উপজেলা বিএনপির সভাপতি মো. আবদুল মান্নানকে মনোনয়ন দিয়েছে বিএনপি। আবদুল মান্নান বলেন, যদি নির্বাচনে বিজয়ী হই তাহলে নবীনগরের দুর্নীতিবাজ, চাঁদাবাজচক্র এবং বালুমহালের অবৈধ কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হবে। নবীনগর টু ঢাকা ও নবীনগর টু আশুগঞ্জ সড়ক দ্রুত সংস্কার করে জনগণের দীর্ঘদিনের ভোগান্তি দূর করা হবে। একই সঙ্গে নবীনগরে গ্যাস সরবরাহের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হবে। সবাইকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে চাই।

আসনটিতে আইনজীবী আবদুল বাতেনকে প্রার্থী করেছে জামায়াতে ইসলামী। এছাড়া এনসিপির জেলার সংগঠক এ বি এম কবির আলম, ইসলামী আন্দোলনের প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মাওলানা আবদুল কাইয়ুম ফারুকী, সিপিবির উপজেলা সাধারণ সম্পাদক শাহিন খান ও গণসংহতি আন্দোলনের নাহিদা সাহান মাঠে আছেন।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৬ (বাঞ্ছারামপুর) \ এ আসনে বিএনপির ডজনখানেক মনোনয়নপ্রত্যাশী থাকলেও মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন জামায়াতের একক প্রার্থী অধ্যাপাক দেওয়ান মো. নকিবুল হুদা। বিএনপি ও জামায়াতসহ অন্যান্য দলের প্রার্থীরা ইউনিয়ন-ওয়ার্ড পর্যায়ে সভা-সমাবেশ, ধর্মীয় ও সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে ভোটারদের কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা চালাচ্ছেন।

জামায়াতের প্রার্থী অধ্যাপক দেওয়ান মো. নকিবুল হুদা নির্বাচনী এলাকায় সক্রিয়। তিনি জানিয়েছেন, নির্বাচিত হলে এলাকার মানুষ আর বঞ্চিত বা বৈষ্যমের শিকার হবেন না। তিনি কেন্দ্রীয় শূরা সদস্য ও কুমিল্লা অঞ্চল টিমের বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সাত্তারকে মাঠে নিয়ে সমাবেশ আয়োজন করেছেন। উপজেলা জামায়াতের সেক্রেটারি মো. শামীম নূর ইসলাম জানিয়েছেন, অধ্যাপক দেওয়ান মো. নকিবুল হুদার অবদান অনন্য এবং দল তাকে মনোনয়ন দিয়েছে।

বিএনপিতে ডজনখানেক মনোনয়নপ্রত্যাশীর মধ্যে দলের একাংশ এম এ খালেক পিএসসিকে (অব.) অনুসরণ করছে, অপরাংশ কৃষিবিদ মেহেদী হাসান পলাশকে কেন্দ্র করে। আলোচনায় রয়েছেন অ্যাডভোকেট রফিক সিকদার, অ্যাডভোকেট জিয়া উদ্দিন জিয়া, মেজর এসএম সাইদুল ইসলাম পিএসসি (অব.), আনিসুর রহমান (সুজন) ও সাবেক এমপি এটিএম ওয়ালী আশরাফের মেয়ে রাইকা ওয়ালী খান। বিএনপির একাংশ আশাবাদী দল মনোনয়ন যাকে দিক ভোটাররা তাকে বিজয়ী করবেন।

তবে দলের ভেতরের বিভাজন প্রতিযোগিতাকে জটিল করেছে, যা জামায়াতের জন্য সুবিধাজনক। এই আসনে প্রথমবারের মতো মনোনয়নপ্রত্যাশী হয়েছেন ছাত্রদল মনোনীত (বাকসু) সাবেক ভিপি ও সাবেক জাতিসংঘ কর্মকর্তা প্রকৌশলী ড. মো. সাইদুজ্জামান কামাল। তিনি ‘ক্লিন ইমেজ’ প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার আশা প্রকাশ করেছেন।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ কাজী মোহাম্মদ আলী এবং খেলাফত মজলিস মাওলানা আব্দুল মজিদ মোল্লাকে মনোনয়ন দিয়েছে। জাতীয় নাগরিক পার্টির মোহাম্মদ মাইনউদ্দিনও অংশ নিচ্ছেন। তবে জোটগত কারণে এই আসন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকির জন্য ছেড়ে দিতে হতে পারে বিএনপিকে।

জোনায়েদ সাকি জানান, তিনি বাঞ্ছারামপুরের মানুষের আশা-আকাক্সক্ষা পূরণে অবিরাম কাজ করে যাচ্ছেন এবং জোট বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। উপজেলা বিএনপির সভাপতি কৃষিবিদ মেহেদী হাসান পলাশ আশাবাদী বাঞ্ছারামপুর বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে আসন্ন নির্বাচনে দল বিপুল ব্যবধানে জয়ী হবে। মনোনয়ন যাকে দেওয়া হবে ভোটাররা তাকে নির্বাচিত করবেন।

বাঞ্ছারামপুরে বিএনপির শক্তিশালী ভিত্তি থাকা সত্তে¡ও মনোনয়নপ্রত্যাশীর ভিড় ও দলের ভেতরের বিভাজন তাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অন্যদিকে জামায়াত একক প্রার্থী হিসেবে মাঠে সক্রিয় এবং বিভাজিত প্রতিদ্ব›দ্বীদের সুযোগ নিয়ে এগিয়ে আছেন। নতুন মুখ ও ক্লিন ইমেজ প্রার্থীর আগমনে ভোটের গতি-প্রকৃতি আরও গতিশীল ও অনিশ্চিত হয়ে উঠেছে। ভোটারদের মনস্তাত্তি¡ক প্রভাব, স্থানীয় জনমতের ধারা এবং দলের ঐক্য ভবিষ্যতের ফলাফলের মূল নির্ধারক হবে।