এক বছর আগে সশস্ত্র বিদ্রোহীরা সিরিয়ার নেতা বাশার আল-আসাদকে ক্ষমতাচ্যুত করে তার রেখে যাওয়া ‘কুখ্যাত কারাগারগুলো বন্ধ’ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু সেই কারাগারগুলোই এবং আটক কেন্দ্রগুলো আবার পূর্ণ হচ্ছে। মারধর, চাঁদাবাজি, হেফাজতে মৃত্যু এবং অন্যান্য নির্যাতন আবার দেখা দিয়েছে।
সোমবার (২২ ডিসেম্বর) এক বিশেষ প্রতিবেদনে বার্তা সংস্থা রয়টার্স এমনটাই বলেছে।
প্রতিবেদন অনুসারে, নতুন সিরিয়ায় ধরপাকড়ের প্রথম ঢেউটি শুরু হয়েছিল – বিজয়ী বিদ্রোহীরা আসাদের কুখ্যাত কারাগারের দরজা খুলে দেওয়ার ঠিক পরেই।
গত ডিসেম্বরে তার পতনের পর আসাদের শাসনামলে নিখোঁজ হওয়া প্রিয়জনদের খোঁজে সাধারণ সিরিয়ানরা যখন আটক কেন্দ্রগুলোতে হামলা চালায়- তখন আসাদের আমলের হাজার হাজার সৈন্য, অফিসার এবং অন্যান্যদের বন্দী করা হয়।
এরপর শীতের শেষের দিকে দ্বিতীয় ঢেউ আসে- যখন সিরিয়ার নতুন কর্তৃপক্ষ দেশজুড়ে আলাউইত সম্প্রদায়ের শত শত লোককে ধরে নিয়ে যায়। মার্চ মাসে উপকূলীয় অঞ্চলে একটি সংক্ষিপ্ত বিদ্রোহে কয়েক ডজন নিরাপত্তা বাহিনী নিহত হওয়ার পর, তাদের আটকের সংখ্যা আরও বেড়ে যায় এবং প্রতিশোধমূলক হামলায় প্রায় ১৫০০ আলাউইত নিহত হয়। আজও তাদের ধরপাকড় অব্যাহত রয়েছে।
গ্রীষ্মের শুরুতে আবারও গণহারে আটকের ঘটনা ঘটে- এবার দক্ষিণাঞ্চলের সংখ্যালঘু ড্রুজ সম্প্রদায়ের মধ্যে। সহিংসতায় শত শত লোকের মৃত্যু হয়। সরকারি বাহিনীর বিরুদ্ধে ‘সংক্ষিপ্ত মৃত্যুদণ্ড’ এবং অন্যান্য নির্যাতনের অভিযোগ ওঠে।
নিরাপত্তার নামে অন্যান্য সকল সম্প্রদায়ের লোকজনকেও আটক করা হয়েছে। আসাদের সঙ্গে ‘অস্পষ্ট’ সংযোগের অভিযোগে সিরিয়ার সুন্নি সংখ্যাগরিষ্ঠদের মধ্যে বিপুল সংখ্যক লোক, মানবাধিকার কর্মী, খ্রিস্টান, এননকি শিয়া মুসলিমদের চেকপয়েন্ট থেকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। অনেকের বিরুদ্ধে ইরান বা হিজবুল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক থাকার অভিযোগ তোলা হয়েছে।
রয়টার্সের এক তদন্তে দেখা গেছে, এসব কারণে আসাদের শাসনামলে হাজার হাজার মানুষকে কারাবন্দী করে রাখা সেই আটক কেন্দ্রগুলো এখন প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারার নিরাপত্তা বাহিনীর আটককৃত লোকদের দিয়ে পরিপূর্ণ হয়ে গেছে।
রয়টার্সের অনুসন্ধ্যানে এক বছর আগে আসাদের পতনের পর থেকে নিরাপত্তাজনিত কারণে আটক কমপক্ষে ৮২৯ জনের নাম পাওয়া গেছে। এটি মূলত বন্দীদের পরিবারের সদস্যদের এবং যারা নিজেরাই আটক ছিলেন তাদের সাক্ষাৎকার অনুসারে একটি অনুমান।
সাক্ষাৎকার, বন্দীদের তালিকা এবং কারাগারগুলোতে অতিরিক্ত বন্দীর উপস্থিতির একাধিক বিবরণ থেকে বোঝা যায়, রয়টার্স যে সংখ্যাটি পেয়েছে, তার চেয়ে বন্দীর সংখ্যা অনেক বেশি।
বেশ কয়েকজনের সাক্ষাৎকার অনুসারে, আসাদের পতনের পর সিরিয়ার মানুষ যেসব নির্যাতনের অবসান আশা করেছিল, তার কিছু স্থলাভিষিক্ত হয়েছে নতুন সরকারের আমলে। অভিযোগ বা যাচাই-বাছাই ছাড়াই আটক, নির্যাতনের একই পদ্ধতি এবং আটক অবস্থায় মৃত্যু হচ্ছে। ১৪টি পরিবারের সাক্ষাৎকার অনুসারে, কিছু বন্দী চাঁদাবাজিরও শিকার হয়েছে।
২০২৪ সালের ডিসেম্বরে বিদ্রোহী নেতা আহমেদ আল-শারা ‘স্বৈরশাসকের কুখ্যাত কারাগারগুলো বন্ধ’ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু রয়টার্স দেখেছে, গত এক বছরে আসাদ আমলের কমপক্ষে ২৮টি কারাগার এবং আটক কেন্দ্র আবার চালু করা হয়েছে।
এই প্রতিবেদন সম্পর্কে মন্তব্য জানতে চাওয়া হলে সিরিয়ার তথ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, আসাদের নির্যাতনের সঙ্গে জড়িতদের বিচারের আওতায় আনার প্রয়োজনীয়তার কারণে অনেক আটক এবং কিছু কার্যক্রম পুনরায় চালু করা হয়েছে।



















