ঢাকা ০৮:৪৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৬ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বগুড়ায় ভুয়া সেনা সদস্য সেজে তিন বিয়ে, হাতিয়ে নিয়েছে অর্ধ কোটি টাকা

  • ডেস্ক রিপোর্টঃ
  • আপডেট সময় ১০:৩২:২৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫
  • ৫৪৩ বার পড়া হয়েছে

বগুড়ার নন্দীগ্রাম পৌর এলাকার কলেজ পাড়ায় এক লাখ টাকা নিতে এসে ভুয়া সেনা সদস্য শ্রী সাগর নামের একজন স্থানীয়দের হাতে আটক হয়েছে। শুক্রবার (২৬ ডিসেম্বর) দুপুরে তাকে থানা পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়। ভুয়া সেনা সদস্য পরিচয় দেওয়া আটক ব্যক্তি নওগাঁ জেলার নিয়ামতপুর উপজেলার ভাদরন্ড গ্রামের মৃত জোগেন্দ্র নাথের ছেলে।

নন্দীগ্রাম কলেজ পাড়ার ভুক্তভোগী সুখিল চন্দ্র বলেন, গত ফালœুন মাসে সেনা সদস্য পরিচয়ে সে আমার মেয়েকে বিয়ে করে। সে বলেছিল আমার বাবা-মা কেউ নাই। বগুড়ার মাঝিরা ক্যান্টনমেন্টে সে চাকুরী করেন। বাড়ি গোপালগঞ্জে। একটি ভোটার আইডি কার্ডও সে দেখায়। পাশাপাশি বগুড়া মাঝিরা ক্যান্টনমেন্টের সেনা সদস্যের আইডি কার্ড দেখায়। সে বলে আমার কেউ নাই। আমি বিয়ের অনুমতি এখনো পায়নি তাই গোপনে বিয়ে করতে হবে। আমরা তার কথা বিশ্বাস করে নগদ সাড়ে আট লাখ টাকা ও ১১ ভড়ি সোনার গোহনা দিয়ে বিয়ে দিয়েছি। ১১ ভড়ি সোনার গোহনার দাম আনুমানিক ২৪ লাখ টাকা। কয়েক দিন আগে রাজশাহীতে জায়গা কেনার কথা বলে আবার এক লাখ টাকা আমার কাছে সে চায়। বগুড়া বাসা ভাড়া নিয়ে তিন মাস আমার মেয়েকে রেখেছিল। পরে আমার বাড়িতে মেয়েকে রেখে যায়। তিন দিন আগে নওগাঁ থেকে এসে এক মেয়ে বলে সে সাগরের বউ। বিয়ের কিছু ভিডিও ও ছবি দেখায়। তখন আমি এক লাখ টাকা দেয়ার কথা বলে সাগরকে আমার বাড়িতে আসতে বলি। এর মাঝে নওগাঁর ওই মেয়ে আমার এখানে আসে। পরে লোকজন ও ওই বাটপারকে নিয়ে বসার পরে সে স্বীকার করে যে সে তিন বিয়ে করেছে। তার চাকুরী কথা ভুয়া।

নওগাঁ থেকে আসা ভুক্তভোগী পাপিয়া মহন্ত বলেন, আমারদেরকেও সেনা সদস্য পরিচয় দিয়ে এ বছরের মার্চ মাসে বিয়ে করে। আমার বাবা তাকে নগদ সাড়ে তিন লাখ টাকা ও সাড়ে তিন ভড়ি সোনার গোহনা দিয়ে বিয়ে দিয়েছে। সাড়ে তিন ভড়ি সোনার গোহনার আনুমানিক দাম সাড়ে সাত লাখ টাকা। বগুড়া বাসা ভাড়া নিয়ে আমাকে বগুড়ায় রাখতো। সে বাসায় ১৫ -২০ দিন পরপর আসতো। সে বলতো আমার বিয়ের অনুমতি নাই। ক্যান্টনমেন্টেই থাকতে হয়। পরে ক্যান্টনমেন্টে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি সাগর নামে কোন সেনা সদস্য নাই। একটি মাধ্যমে এটাও জানতে পারি নন্দীগ্রামে সে আবার বিয়ে করেছে।

ভুয়া সেনা সদস্যের প্রথম স্ত্রী লক্ষী রানী বলেন, আমি জানতামনা সে এসব করে বেড়াচ্ছে। আমাকে সে বলে আমি গাড়ী চালাই। নন্দীগ্রামে এসে দেখছি অনেক কান্ডু ঘটছে। আমার বাবা তাকে বাড়ি করার জন্য ২ শতক জায়গা দিয়েছে। টাকা ও গহনা দিয়ে বিয়ে দিয়েছে। আমার ছোট ছোট দুইটি ছেলে-মেয়ে। এখন আমার কি করা উচিত বুঝতেই পারছিনা।

ভুয়া সেনা সদস্য শ্রী সাগর বলেন, আমার এই দুই বউ ছাড়াও রাজশাহীতে আরেক বউ আছে। ওই পক্ষে নয় বছরের এক ছেলে ও তিন মাসের একটি মেয়ে আছে। সে এসব ঘটনার সত্যা স্বীকার করেন। তিনি আরো বলেন, আমি প্রথমে আমার এলাকার ছাত্ররা গ্রামে বিয়ে করি। সে রাজশাহীতে থাকে। পরে নওগাঁ সদরের পাপিয়া মহন্তকে বিয়ে করি। তার কিছুদিন পরে নন্দীগ্রামে বিয়ে করেছি। সেনা সদস্যের আইডি কার্ডা ও পোশাক ঢাকা থেকে বানিয়ে নিয়েছি। এসব টাকা নিয়ে আমি আমার গ্রামে বাড়ি বানিয়েছি ও কিছু টাকা খরচ করেছি। আমার সব ভুল হয়েছে।

নন্দীগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমান বলেন, সে এখন পুলিশ হেফাজতে রয়েছে। ভুক্তভোগীরা মামলা করলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

জনপ্রিয় সংবাদ

বহিষ্কারের দুদিন আগেই পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছিলেন হাসান মামুন, আজ বহিষ্কার করল বিএনপি

বগুড়ায় ভুয়া সেনা সদস্য সেজে তিন বিয়ে, হাতিয়ে নিয়েছে অর্ধ কোটি টাকা

আপডেট সময় ১০:৩২:২৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫

বগুড়ার নন্দীগ্রাম পৌর এলাকার কলেজ পাড়ায় এক লাখ টাকা নিতে এসে ভুয়া সেনা সদস্য শ্রী সাগর নামের একজন স্থানীয়দের হাতে আটক হয়েছে। শুক্রবার (২৬ ডিসেম্বর) দুপুরে তাকে থানা পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়। ভুয়া সেনা সদস্য পরিচয় দেওয়া আটক ব্যক্তি নওগাঁ জেলার নিয়ামতপুর উপজেলার ভাদরন্ড গ্রামের মৃত জোগেন্দ্র নাথের ছেলে।

নন্দীগ্রাম কলেজ পাড়ার ভুক্তভোগী সুখিল চন্দ্র বলেন, গত ফালœুন মাসে সেনা সদস্য পরিচয়ে সে আমার মেয়েকে বিয়ে করে। সে বলেছিল আমার বাবা-মা কেউ নাই। বগুড়ার মাঝিরা ক্যান্টনমেন্টে সে চাকুরী করেন। বাড়ি গোপালগঞ্জে। একটি ভোটার আইডি কার্ডও সে দেখায়। পাশাপাশি বগুড়া মাঝিরা ক্যান্টনমেন্টের সেনা সদস্যের আইডি কার্ড দেখায়। সে বলে আমার কেউ নাই। আমি বিয়ের অনুমতি এখনো পায়নি তাই গোপনে বিয়ে করতে হবে। আমরা তার কথা বিশ্বাস করে নগদ সাড়ে আট লাখ টাকা ও ১১ ভড়ি সোনার গোহনা দিয়ে বিয়ে দিয়েছি। ১১ ভড়ি সোনার গোহনার দাম আনুমানিক ২৪ লাখ টাকা। কয়েক দিন আগে রাজশাহীতে জায়গা কেনার কথা বলে আবার এক লাখ টাকা আমার কাছে সে চায়। বগুড়া বাসা ভাড়া নিয়ে তিন মাস আমার মেয়েকে রেখেছিল। পরে আমার বাড়িতে মেয়েকে রেখে যায়। তিন দিন আগে নওগাঁ থেকে এসে এক মেয়ে বলে সে সাগরের বউ। বিয়ের কিছু ভিডিও ও ছবি দেখায়। তখন আমি এক লাখ টাকা দেয়ার কথা বলে সাগরকে আমার বাড়িতে আসতে বলি। এর মাঝে নওগাঁর ওই মেয়ে আমার এখানে আসে। পরে লোকজন ও ওই বাটপারকে নিয়ে বসার পরে সে স্বীকার করে যে সে তিন বিয়ে করেছে। তার চাকুরী কথা ভুয়া।

নওগাঁ থেকে আসা ভুক্তভোগী পাপিয়া মহন্ত বলেন, আমারদেরকেও সেনা সদস্য পরিচয় দিয়ে এ বছরের মার্চ মাসে বিয়ে করে। আমার বাবা তাকে নগদ সাড়ে তিন লাখ টাকা ও সাড়ে তিন ভড়ি সোনার গোহনা দিয়ে বিয়ে দিয়েছে। সাড়ে তিন ভড়ি সোনার গোহনার আনুমানিক দাম সাড়ে সাত লাখ টাকা। বগুড়া বাসা ভাড়া নিয়ে আমাকে বগুড়ায় রাখতো। সে বাসায় ১৫ -২০ দিন পরপর আসতো। সে বলতো আমার বিয়ের অনুমতি নাই। ক্যান্টনমেন্টেই থাকতে হয়। পরে ক্যান্টনমেন্টে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি সাগর নামে কোন সেনা সদস্য নাই। একটি মাধ্যমে এটাও জানতে পারি নন্দীগ্রামে সে আবার বিয়ে করেছে।

ভুয়া সেনা সদস্যের প্রথম স্ত্রী লক্ষী রানী বলেন, আমি জানতামনা সে এসব করে বেড়াচ্ছে। আমাকে সে বলে আমি গাড়ী চালাই। নন্দীগ্রামে এসে দেখছি অনেক কান্ডু ঘটছে। আমার বাবা তাকে বাড়ি করার জন্য ২ শতক জায়গা দিয়েছে। টাকা ও গহনা দিয়ে বিয়ে দিয়েছে। আমার ছোট ছোট দুইটি ছেলে-মেয়ে। এখন আমার কি করা উচিত বুঝতেই পারছিনা।

ভুয়া সেনা সদস্য শ্রী সাগর বলেন, আমার এই দুই বউ ছাড়াও রাজশাহীতে আরেক বউ আছে। ওই পক্ষে নয় বছরের এক ছেলে ও তিন মাসের একটি মেয়ে আছে। সে এসব ঘটনার সত্যা স্বীকার করেন। তিনি আরো বলেন, আমি প্রথমে আমার এলাকার ছাত্ররা গ্রামে বিয়ে করি। সে রাজশাহীতে থাকে। পরে নওগাঁ সদরের পাপিয়া মহন্তকে বিয়ে করি। তার কিছুদিন পরে নন্দীগ্রামে বিয়ে করেছি। সেনা সদস্যের আইডি কার্ডা ও পোশাক ঢাকা থেকে বানিয়ে নিয়েছি। এসব টাকা নিয়ে আমি আমার গ্রামে বাড়ি বানিয়েছি ও কিছু টাকা খরচ করেছি। আমার সব ভুল হয়েছে।

নন্দীগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমান বলেন, সে এখন পুলিশ হেফাজতে রয়েছে। ভুক্তভোগীরা মামলা করলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।