ঈদের আনন্দ উদযাপন করতে যাওয়ার পথেই ঘটল মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। বৃহস্পতিবার (৫ জুন) রাত ১০টার দিকে বোয়ালখালী থেকে চট্টগ্রাম শহরে ঈদ করতে আসছিলেন সাজ্জাদুন নূর ও জুবাইদা ফেরদৌস ইসরা দম্পতি। সঙ্গে ছিল তাদের দুই বছরের একমাত্র কন্যাশিশু আয়েশা। কিন্তু চট্টগ্রামের কালুরঘাট ব্রিজ পার হওয়ার আগেই থমকে যায় তাদের স্বপ্নভরা যাত্রা।
রাত ১০টা ১৫ মিনিটে কালুরঘাট ব্রিজে উঠে পড়ে পর্যটক এক্সপ্রেস ট্রেনটি। সেই সময় একটি সিএনজি অটোরিকশায় থাকা আয়েশা ও তার মা-বাবার ওপর আচমকা উঠে যায় ট্রেনটি। সজোর ধাক্কায় দুমড়ে-মুচড়ে যায় অটোরিকশাটি। ঘটনাস্থলেই শিশুটি মাথায় আঘাত পেয়ে নিথর হয়ে পড়ে। একই ঘটনায় আরও দুজন নিহত হন।
স্থানীয়দের সহায়তায় মর্মাহত মা-বাবা শিশুটিকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান, কিন্তু চিকিৎসকরা জানান—শিশুটিকে মৃত অবস্থায় আনা হয়েছে। হাসপাতালের করিডোরে দাঁড়িয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন আয়েশার বাবা সাজ্জাদুন নূর। বিলাপ করে তিনি বলেন, “আমার মেয়ে তো কিছুই বুঝত না। আল্লাহর জিম্মায় রেখে যাচ্ছি। আমার আয়েশা! তুমি কোথায় গেলা?”
মা জুবাইদা ফেরদৌস বারবার অজ্ঞান হয়ে পড়ছিলেন। পাশে থাকা আত্মীয় ওয়াহিদ বলেন, “ঈদের আগের রাতে আয়েশার নতুন জামা দেখিয়ে ওর মা খুশিতে কেঁদেছিলেন। আজ তার মুখে শুধু শোক।”
পরিবারটি বোয়ালখালীর মুন্সিপাড়া এলাকার বাসিন্দা। ঈদ উদযাপনের জন্য চট্টগ্রাম শহরে যাচ্ছিলেন তারা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ব্রিজের মুখে আগে থেকেই যানজট ছিল। ট্রেন চলাচলের নিয়ম অনুযায়ী সেখানে ‘ডেড স্টেপেজ’ হিসেবে ট্রেনের থামার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কিন্তু গেটম্যানের লাল পতাকা ও রেড সিগন্যাল থাকা সত্ত্বেও চালক ট্রেন থামাননি। ট্রেনটি কমপক্ষে পাঁচটি যানবাহনে ধাক্কা দিয়ে প্রায় ১৫ হাত দূরে ঠেলে দেয়। এই যানবাহনের মধ্যেই ছিল আয়েশাদের সিএনজি অটোরিকশাটি।
চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার মো. নেজাম উদ্দিন বলেন, “ব্রিজে যানজট দেখে গার্ড রেড সিগন্যাল দেন। কিন্তু চালক তা অমান্য করে এগিয়ে যান।”
ট্রেনে থাকা অনেক যাত্রীও আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। ট্রেন থামার পর জানালা দিয়ে তারা দেখেন সামনে ঘটে যাওয়া ভয়াবহতা।
চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের এক চিকিৎসক জানান, “শিশুটির মাথায় গুরুতর আঘাত ছিল। সঙ্গে থাকা মা-বাবা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত।”