ইরানের সঙ্গে চলমান যুদ্ধ পরিস্থিতির জেরে আবারও ব্যক্তিগত জীবন থেকে এক ধাপ পিছিয়ে গেলেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। চলমান সংঘাতের মধ্যে তিনি জানিয়েছেন, তার ছেলে আবনার নেতানিয়াহুর বিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো পিছিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছেন। এ সিদ্ধান্তের পেছনে রয়েছে যুদ্ধকালীন বাস্তবতা এবং পারিবারিক নিরাপত্তাজনিত উদ্বেগ।
নেতানিয়াহু নিজেই এই ঘোষণা দিয়ে বলেন,
“এই যুদ্ধের জন্য আমাকে ও আমার পরিবারকে ‘ব্যক্তিগত মাশুল’ চোকাতে হচ্ছে। আমার স্ত্রী সারা ও ছেলে আবনার খুব কষ্ট পেয়েছে, কিন্তু দেশের এই অবস্থায় ত্যাগ ছাড়া উপায় নেই।”
তিনি আরও বলেন,
“আমার পরিবার অন্য সবার মতোই ত্যাগ স্বীকার করছে। আমরা সবাই যুদ্ধের ভারী মূল্য দিচ্ছি।”
আবনারের বিয়ের প্রথম তারিখ নির্ধারিত ছিল ২০২৪ সালের নভেম্বরে। কিন্তু ঠিক তার আগেই হিজবুল্লাহর ড্রোন হামলায় প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে বিস্ফোরণ ঘটে, ফলে সেই বিয়েও স্থগিত করা হয়। তখনও গাজা থেকে বহু ইসরায়েলি নাগরিক বন্দি ছিলেন—এ প্রেক্ষাপটে বিয়ের আয়োজন করায় নেতানিয়াহু সমালোচিত হন।
চলতি বছরের ১৬ জুন নতুন করে বিয়ের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছিল। কিন্তু ইসরায়েলের ইরান আক্রমণ এবং তেহরানের পাল্টা প্রতিক্রিয়ার প্রেক্ষিতে সেই অনুষ্ঠানও স্থগিত করা হয়।
বিয়ের স্থগিতাদেশ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে সোরোকা হাসপাতালের সামনে দাঁড়িয়ে নেতানিয়াহু বলেন,
“আমরা এখন এমন এক মুহূর্তে আছি যা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ব্রিটেনের মতো। আমার স্ত্রী সারা একজন হিরো, যিনি পারিবারিক আঘাত সামলে যুদ্ধকালীন বাস্তবতা মেনে নিচ্ছেন।”
তবে নেতানিয়াহুর এই আবেগঘন বক্তব্য ইসরায়েলিদের কাছে ভালোভাবে ধরা পড়েনি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও ইসরায়েলি বিশ্লেষকদের একাংশ বলছেন,
“একজন প্রধানমন্ত্রী যখন দেশজুড়ে নিরাপত্তাহীনতা, সেনা হতাহত, যুদ্ধের ধ্বংসযজ্ঞ চলছে—সেই সময়ে নিজের পরিবারের বিয়ে স্থগিতের গল্প বলে তিনি যেন পরিস্থিতিকে লঘু করে দেখালেন।”
বিশেষ করে স্ত্রী সারাকে ‘হিরো’ আখ্যা দেওয়া নিয়েও অনেকে নেতানিয়াহুকে ‘আত্মমুগ্ধ’ ও ‘আলোচনায় থাকার জন্য নাটকীয়তা করার’ অভিযোগ তুলেছেন।
নিউইয়র্ক টাইমস-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নেতানিয়াহুর এমন মন্তব্যে জনসাধারণের মধ্যে বিভাজন তৈরি হয়েছে। অনেকে একে মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি বলে দেখলেও, আরও বড় একটি অংশ মনে করছেন—একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের প্রধানমন্ত্রীর ভাবনায় জাতির চেয়ে পারিবারিক ক্ষতির প্রাধান্য পাওয়া উচিত নয়।