ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের উত্তাল সময়ে, ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির পুরনো কিছু সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট হঠাৎ করেই ভাইরাল হয়ে উঠেছে। এই পোস্টগুলোতে দেখা যাচ্ছে এমন এক খামেনিকে, যিনি নারী অধিকারের কথা বলছেন, কবিতার প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করছেন, ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার আন্দোলনের প্রতি সমর্থন জানাচ্ছেন, এমনকি নিজের শৈশবের দুষ্টুমি নিয়েও খোলামেলা কথা বলছেন।
এইসব পোস্টের অনেকগুলোই প্রায় এক দশক আগের। কিন্তু বর্তমানে যখন তিনি কঠোর এক রাজনৈতিক নেতা, যিনি যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলকে প্রকাশ্যে হুমকি দিচ্ছেন, তখন তার অতীতের এই আবেগপ্রবণ, মানবিক ও অন্তর্মুখী সুর অনেকের কাছেই বিস্ময়কর ঠেকছে। কেউ কেউ মন্তব্য করছেন, এই দুই রূপ যেন এক ব্যক্তির ভেতর দুই সম্পূর্ণ ভিন্ন মানুষকে প্রকাশ করছে।
একটি পুরনো পোস্টে খামেনি লেখেন, “পুরুষের দায়িত্ব নারীর চাহিদা ও অনুভূতি বোঝা। তার আবেগীয় অবস্থার প্রতি উপেক্ষা করা উচিত নয়।” এই কথার নিচে একজন মন্তব্য করেছেন, “আমি ক্ষমা চাই, আয়াতুল্লাহ খামেনি। আমি আপনার গেম চিনতাম না।” আরেকজন লেখেন, “প্রেমিক হিসেবে জন্মেছিলেন, কিন্তু হয়েছেন সর্বোচ্চ নেতা!”
২০১৩ সালের এক পোস্টে খামেনি তার শৈশবের স্মৃতিচারণ করে লিখেছেন, “আমি ছোটবেলা থেকেই ক্লোক পরে স্কুলে যেতাম। এটা পরা অস্বস্তিকর ছিল, তাই অন্য বাচ্চাদের সামনে দুষ্টুমি ও খেলায় মেতে থাকতাম।” অন্য এক জায়গায় তিনি উল্লেখ করেছেন, ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর লেখা ‘Glimpses of World History’ বইটি পড়ে তিনি ভারতের ঔপনিবেশিক ইতিহাস সম্পর্কে অনেক কিছু জেনেছেন।
এইসব পোস্টে তার সাহিত্যিক ও দার্শনিক প্রবণতা স্পষ্ট হয়ে ওঠে। একজন ব্যবহারকারী মজা করে মন্তব্য করেন, “পুরনো টুইট ভাইরাল হলেও যিনি আন-ক্যানসেলড হতে পেরেছেন, তিনি হলেন আয়াতুল্লাহ খামেনি।”
কিন্তু এই মানবিক মুখের ঠিক বিপরীতেই রয়েছে বর্তমানের যুদ্ধাবস্থার কঠিন বাস্তবতা। ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রকে হুঁশিয়ার করে খামেনি সম্প্রতি বলেছেন, “যদি যুক্তরাষ্ট্র এই সংঘাতে সরাসরি জড়ায়, তাহলে তারা এমন ক্ষতির মুখে পড়বে যা আর পূরণ করা যাবে না।” তিনি এখন যুদ্ধকালীন একজন অনড় ও কঠোর নেতা, যিনি কোনো আপস না করার অঙ্গীকারে স্থির।
এই দুই মূর্তির খামেনি—একদিকে প্রেমিক, দার্শনিক ও কবিতামনস্ক মানুষ, আর অন্যদিকে অনমনীয় নেতা—আজকের পৃথিবীতে রাজনৈতিক নেতাদের চরিত্র ও ব্যক্তিত্বের জটিলতাকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে।


























