“আমরা জিতলে একসঙ্গে জিতব, ঠকলেও একসঙ্গে ঠকবো। কিন্তু মাঝপথে আপনি রণভঙ্গ দেবেন, আর মাঝপথে সমুদ্রে আপনি আমাদেরকে ফেলে চলে যাবেন—এটা হতে পারে না।”
এমন মন্তব্য করে প্রধান উপদেষ্টাকে আশ্বস্ত করেছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির ও চরমোনাইয়ের পীর সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম।
রবিবার (২৫ মে) রাতে রাজধানীর রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি।
তিনি বলেন, নির্বাচন আয়োজন করা অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব, তবে তারও আগে প্রয়োজনীয় ও মৌলিক সংস্কার এবং ফ্যাসিবাদের বিচার নিশ্চিত করা এই সরকারের অপরিহার্য কর্তব্য। এ দায়িত্ব থেকে পিছিয়ে আসার কোনো সুযোগ নেই বলে তিনি মন্তব্য করেন।
চরমোনাই পীর বলেন,
“জুনের একদিনের পরেও এই সরকার থাকবে না ২০২৬—এটা আপনি নিশ্চিত থাকেন।”
তিনি আরও বলেন, দেশের এক সংকটময় মুহূর্তে আমরা এসেছিলাম সম্মানিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ইউনূস সাহেবের সঙ্গে একান্ত আলোচনার জন্য। আমরা তাকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছি, জুলাই-আগস্টের যে অভ্যুত্থান ঘটেছিল, সেখানে হাজার হাজার মা তাঁদের সন্তান হারিয়েছেন, বাংলাদেশ অনেক দিক থেকে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
তিনি বলেন,
“অনেকে চোখ হারিয়েছেন, অনেকে পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন। এত রক্ত, ত্যাগ, বেদনার পর আমরা এই দেশটিকে একটি ন্যায়ের ভিত্তিতে গঠিত সুন্দর রাষ্ট্র হিসেবে দেখতে চাই।”
তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, তখন উপদেষ্টা দেশে ছিলেন না, কিন্তু দেশের প্রয়োজনে জনগণের আহ্বানে তাকে আনা হয়েছিল। তিনি বলেন, “আমরা তাকে নিয়ে একসঙ্গে কাজ করতে চেয়েছিলাম, একটি সুন্দর দেশ গড়ার লক্ষ্যে।”
তিনি আরও বলেন,
“মাঝপথে আপনি হয়তো কষ্ট পাচ্ছেন, বা কাজ করার সুযোগ পাচ্ছেন না। নানা উপায়ে আপনাকে মানসিক চাপ দেওয়া হচ্ছে—এটা আমরা বুঝতে পারি। কিন্তু যারা রাজপথে আছি, আন্দোলনে আছি, যারা দেশ গড়ার জন্য যুদ্ধ করছি, তাদের পক্ষ থেকে বলছি: আমরা জিতলে একসঙ্গে জিতব, ঠকলেও একসঙ্গে ঠকবো। কিন্তু মাঝপথে রণভঙ্গ দিয়ে চলে যাওয়া চলবে না। এই চিন্তা আপনার মাথায় যেন না আসে, সে আশ্বাস আমরা দিয়েছি।”
সংস্কারের বিষয়ে চরমোনাইয়ের পীর বলেন,
“আমার ভাই তো বলেছেনই, প্রয়োজনীয় সংস্কার না হলে জাতির প্রত্যাশিত একটি সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব হবে না। সেখানে পেশিশক্তি, কালো টাকার দৌরাত্ম্যসহ নানা ফাঁদে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হবে।”
তিনি সতর্ক করেন, যদি সংস্কার না হয়, তাহলে আবার সেই কলঙ্কিত ইতিহাস ফিরে আসবে। তিনি বলেন, ২৪ আগস্টের অভ্যুত্থানের পুনরাবৃত্তি আমরা চাই না।
এই জন্য তিনি জোর দিয়ে বলেন:
“সংস্কারগুলো দৃশ্যমান হতে হবে। যারা মায়েদের কোল খালি করেছে, সন্তানহীন করেছে, পঙ্গু করেছে, ‘আয়নাঘর’ বানিয়েছে—তাদের বিচার করতে হবে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী।”
স্থানীয় নির্বাচন প্রসঙ্গে, তিনি বলেন,
“স্থানীয় নির্বাচন যদি আগে হয়, তাহলে কালো টাকা ও পেশিশক্তির প্রভাব কিছুটা হলেও ঠেকানো সম্ভব হবে। এতে করে জনপ্রতিনিধিত্বের একটি গ্রহণযোগ্য ও স্বচ্ছ প্ল্যাটফর্ম গড়ে উঠতে পারে।”
তিনি আরও বলেন,
“আপনাদের সবাইকে ধন্যবাদ জানাই, যেন আমরা এই দেশ গড়ার কাজে একসঙ্গে কাজ করতে পারি। অন্তর্বর্তী সরকার, রাজনৈতিক দল, যুব অভ্যুত্থানের যোদ্ধারা, প্রশাসন এবং সাংবাদিক বন্ধুরা—সবাই মিলে যেন আমরা দেশের উন্নয়নে অবদান রাখতে পারি।”
আলোচনার ফলাফল সম্পর্কে তিনি বলেন,
“আলোচনা অত্যন্ত ফলপ্রসূ হয়েছে। কেউ ডিসেম্বর চায়, কেউ রমজান, কেউ আবার অন্য সময় নির্বাচন চায়। কিন্তু প্রধান উপদেষ্টা আমাদের স্পষ্ট করে বলেছেন, জুনের একদিনের পরেও এই সরকার থাকবে না ২০২৬ পর্যন্ত। এতে আমরা আস্থা রাখতে পারি।”
আলোচনার একপর্যায়ে চরমোনাইয়ের পীর আরও বলেন,
“যেসব বিষয়ে বিতর্ক তৈরি হয়, সেসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে সরকার যেন আরও সচেতন থাকে। প্রয়োজনে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে স্পর্শকাতর সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।”