ভারতের আসাম রাজ্যের ৬৭ বছর বয়সী সাইকেল মেরামতকারক ওফা আলীর জীবনে হঠাৎ করেই নেমে আসে দুর্বিষহ এক অভিজ্ঞতা। ৩১ মে তিনি নিজ ভাড়া বাড়িতে ফিরলেও, তার আগের চারটি দিন কেটেছে বাংলাদেশে ‘আটক অবস্থায়’।
২০২৪ সালের ২৩ মে, আসাম পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে মোরিগাঁও জেলার কুয়াদল গ্রামের বাসা থেকে। সেই অঞ্চলেই ‘ঘোষিত বিদেশি’দের চিহ্নিত করতে অভিযান চালাচ্ছে বিজেপিশাসিত আসাম সরকার। তাকে প্রথমে নিয়ে যাওয়া হয় ভারতের সবচেয়ে বড় অনাবাসিক বন্দিশিবির, গোলপাড়ার মাতিয়া হোল্ডিং সেন্টারে।
সেখান থেকে ২৭ মে ভোরে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) তাকে ও আরও ১৩ জনকে একটি ভ্যানে তুলে নিয়ে যায় ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে। তাদের মধ্যে ৫ জন ছিলেন নারী। উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশে ‘পুশব্যাক’ করা।
“আমি ভারতীয়, তবু আমাকে জোর করে বাংলাদেশে পাঠাতে চেয়েছিল”
ওফা আলী বলেন, “বিএসএফ জোর করে আমাদের বাংলাদেশে ঠেলে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু বিজিবি ও স্থানীয়রা স্পষ্টভাবে বলেছিল, তারা আমাদের নেবে না—কারণ আমরা ভারতীয়।”
এই ঘটনায় স্পষ্ট হয়ে উঠেছে আসামে মুসলিম পরিচয়ের মানুষদের নাগরিকত্ব প্রশ্নে ক্রমবর্ধমান অনিশ্চয়তা ও ভয়। মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা নিজেই রাজ্য বিধানসভায় স্বীকার করেন, মে মাস থেকেই ৩০০-রও বেশি মুসলিমকে বাংলাদেশে পাঠানো হয়েছে। এবং এই ‘পুশব্যাক অভিযান’ ভবিষ্যতে আরও জোরদার করা হবে বলেও তিনি ঘোষণা দেন।
আসামে মুসলিমদের বাস্তুচ্যুতি—এক ‘নীল আকাশের নিচে নরক’
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আসামের রাজনৈতিক ও জাতিগত বাস্তবতা দীর্ঘদিন ধরেই বাংলা ভাষাভাষী মুসলিমদের প্রতি বৈরী। ২০১৬ সালে বিজেপির ক্ষমতায় আসার পর সেই বৈরিতা প্রশাসনিক রূপ পেয়েছে। প্রায় ৩ কোটি ১০ লাখ জনসংখ্যার রাজ্যটিতে এক-তৃতীয়াংশ মুসলিম, যা ভারতের রাজ্যগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ অনুপাতে।
ওফা আলীর অভিজ্ঞতা এখন শুধু তার ব্যক্তিগত যন্ত্রণার গল্প নয়—এটি হয়ে উঠেছে আসামের মুসলিম সম্প্রদায়ের অস্তিত্ব সংকটের প্রতীক।
সূত্র: আল জাজিরা