ঢাকা ০৩:৩০ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৭ জুলাই ২০২৫, ১২ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বকশীগঞ্জে শিক্ষকের মানসিক চাপে স্কুলছাত্রীর আত্মহত্যার চেষ্টা, প্রশ্নবিদ্ধ প্রধান শিক্ষক

  • ডেস্ক রিপোর্টঃ
  • আপডেট সময় ০৯:২৯:০৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৬ জুলাই ২০২৫
  • ৫৫৮ বার পড়া হয়েছে

এম আর সাইফুল, জামালপুর জেলা প্রতিনিধিঃ

জামালপুরের বকশীগঞ্জে উলফাতুননেছা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী সাথী আক্তার (আলো) ছয়তলা ভবন থেকে লাফিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছে। এই ঘটনায় শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য এবং শিক্ষকের ভূমিকা নিয়ে নতুন করে বিতর্ক উসকে দিয়েছে। গুরুতর আহত সাথী বর্তমানে ঢাকার জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান (নিটোর)-এ আশঙ্কাজনক অবস্থায় চিকিৎসাধীন। ছয় দিন পেরিয়ে গেলেও সে এখনো কথা বলতে পারছে না। এ ঘটনায় বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নূর মোহাম্মদের ভূমিকা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন উঠেছে। সাথী আক্তার আলোর চাচা মুরাদ হো‌সেন বাদী হয়ে বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নূর মোহাম্মদের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রায় গত তিন মাস পূর্বে তৎকালীন প্রধান শিক্ষক আতাউর রহমান ছাত্রীদের একটি কুইজ প্রতিযোগিতায় পাঠান। প্রতিযোগিতা শেষে সাথী আক্তার আলোসহ কয়েকজন বান্ধবী মসজিদে নূরে ঘুরতে যান। সেখানে অপ্রত্যাশিতভাবে বর্তমান ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নূর মোহাম্মদের সঙ্গে তাদের দেখা হয়। তিনি এ ঘটনা তৎকালীন প্রধান শিক্ষককে জানালে ছাত্রীদের সতর্ক করা হয়।
সাবেক প্রধান শিক্ষক বদলি হলে চলতি মাসের ১ তারিখে নূর মোহাম্মদ ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব নেন। দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই তিনি প্রায়ই সাথী আক্তার আলোকে মানসিকভাবে চাপ দিতেন এবং অভিভাবককে স্কুলে নিয়ে আসতে বলতেন। সাথীর সহপাঠী ও কয়েকজন শিক্ষকের ভাষ্যমতে, সোমবার (২১ জুলাই) দুপুরে
ঘটনার দিন ক্লাস চলাকালীন সময়ে নূর মোহাম্মদ ক্লাসে ঢুকে সাথীকে সবার সামনে শাসাতে শুরু করেন। তিনি জানতে চান কেন অভিভাবককে আনা হয়নি। সাথী ক্ষমা চাইলেও, নূর মোহাম্মদের মন গলেনি। তিনি সাফ জানিয়ে দেন, “হয় অভিভাবককে আনতে হবে, নয়তো তাকে টিসি দিয়ে স্কুল থেকে বের করে দেওয়া হবে।” এই চরম হুমকির কিছুক্ষণ পরেই সাথী প্রথমে নিজের হাত কাটে এবং পরবর্তীতে ছয়তলা ভবন থেকে লাফিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করে।
উলফাতুননেছা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শারীরিক শিক্ষা বিষয়ক শিক্ষক ফজলুল হক জানান, সাথী খেলাধুলায় ভালো ছিল। সে ময়মনসিংহ পর্যন্ত কাবাডি খেলেছে এবং ঘটনার দিনও তাকে কাবাডি খেলার টিম লিডার নির্বাচিত করা হয়েছিল, যা তার মানসিক অবস্থার আকস্মিক পরিবর্তনকে আরও রহস্যময় করে তুলেছে।
সাথী আক্তারের বড় বোন আশরাফুন নাহার আখি বলেন, ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নূর মোহাম্মদের ধারাবাহিক মানসিক চাপই তার বোনকে আত্মহত্যার মতো চরম সিদ্ধান্তে ঠেলে দিয়েছে। তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, প্রধান শিক্ষক কেন সরাসরি অভিভাবকদের না জানিয়ে বারবার একজন অপ্রাপ্তবয়স্ক ছাত্রীকে চাপ দিলেন। আমি এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই।
এদিকে, ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নূর মোহাম্মদ জানিয়েছেন, ছাত্রীরা ভূমি অফিসে না গিয়ে মসজিদে নূর ঘুরতে যাওয়ায় তিনি সাথীর অভিভাবককে স্কুলে আসতে বলেছিলেন। অনেক দিন পেরিয়ে গেলেও অভিভাবক না আসায় ঘটনার দিন তিনি আবার সাথীকে এ কথা বলেন, এরপরই তিনি আত্মহত্যার চেষ্টার খবর পান।
বকশীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খন্দকার শাকের আহাম্মেদ জানিয়েছেন, এই ঘটনায় তদন্ত চলমান রয়েছে এবং তদন্ত শেষে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বকশীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মাসুদ রানা বলেন, ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক। দ্রুত একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে এবং তদন্তের মাধ্যমে ঘটনার প্রকৃত কারণ ও ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নূর মোহাম্মদের ভূমিকা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি শিক্ষার্থীদের জন্য নিরাপদ শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

জনপ্রিয় সংবাদ

ওমরাহ করতে গিয়ে সৌদিতে সড়ক দুর্ঘটনায় একই পরিবারের ৭ জনের মৃত্যু

বকশীগঞ্জে শিক্ষকের মানসিক চাপে স্কুলছাত্রীর আত্মহত্যার চেষ্টা, প্রশ্নবিদ্ধ প্রধান শিক্ষক

আপডেট সময় ০৯:২৯:০৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৬ জুলাই ২০২৫

এম আর সাইফুল, জামালপুর জেলা প্রতিনিধিঃ

জামালপুরের বকশীগঞ্জে উলফাতুননেছা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী সাথী আক্তার (আলো) ছয়তলা ভবন থেকে লাফিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছে। এই ঘটনায় শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য এবং শিক্ষকের ভূমিকা নিয়ে নতুন করে বিতর্ক উসকে দিয়েছে। গুরুতর আহত সাথী বর্তমানে ঢাকার জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান (নিটোর)-এ আশঙ্কাজনক অবস্থায় চিকিৎসাধীন। ছয় দিন পেরিয়ে গেলেও সে এখনো কথা বলতে পারছে না। এ ঘটনায় বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নূর মোহাম্মদের ভূমিকা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন উঠেছে। সাথী আক্তার আলোর চাচা মুরাদ হো‌সেন বাদী হয়ে বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নূর মোহাম্মদের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রায় গত তিন মাস পূর্বে তৎকালীন প্রধান শিক্ষক আতাউর রহমান ছাত্রীদের একটি কুইজ প্রতিযোগিতায় পাঠান। প্রতিযোগিতা শেষে সাথী আক্তার আলোসহ কয়েকজন বান্ধবী মসজিদে নূরে ঘুরতে যান। সেখানে অপ্রত্যাশিতভাবে বর্তমান ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নূর মোহাম্মদের সঙ্গে তাদের দেখা হয়। তিনি এ ঘটনা তৎকালীন প্রধান শিক্ষককে জানালে ছাত্রীদের সতর্ক করা হয়।
সাবেক প্রধান শিক্ষক বদলি হলে চলতি মাসের ১ তারিখে নূর মোহাম্মদ ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব নেন। দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই তিনি প্রায়ই সাথী আক্তার আলোকে মানসিকভাবে চাপ দিতেন এবং অভিভাবককে স্কুলে নিয়ে আসতে বলতেন। সাথীর সহপাঠী ও কয়েকজন শিক্ষকের ভাষ্যমতে, সোমবার (২১ জুলাই) দুপুরে
ঘটনার দিন ক্লাস চলাকালীন সময়ে নূর মোহাম্মদ ক্লাসে ঢুকে সাথীকে সবার সামনে শাসাতে শুরু করেন। তিনি জানতে চান কেন অভিভাবককে আনা হয়নি। সাথী ক্ষমা চাইলেও, নূর মোহাম্মদের মন গলেনি। তিনি সাফ জানিয়ে দেন, “হয় অভিভাবককে আনতে হবে, নয়তো তাকে টিসি দিয়ে স্কুল থেকে বের করে দেওয়া হবে।” এই চরম হুমকির কিছুক্ষণ পরেই সাথী প্রথমে নিজের হাত কাটে এবং পরবর্তীতে ছয়তলা ভবন থেকে লাফিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করে।
উলফাতুননেছা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শারীরিক শিক্ষা বিষয়ক শিক্ষক ফজলুল হক জানান, সাথী খেলাধুলায় ভালো ছিল। সে ময়মনসিংহ পর্যন্ত কাবাডি খেলেছে এবং ঘটনার দিনও তাকে কাবাডি খেলার টিম লিডার নির্বাচিত করা হয়েছিল, যা তার মানসিক অবস্থার আকস্মিক পরিবর্তনকে আরও রহস্যময় করে তুলেছে।
সাথী আক্তারের বড় বোন আশরাফুন নাহার আখি বলেন, ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নূর মোহাম্মদের ধারাবাহিক মানসিক চাপই তার বোনকে আত্মহত্যার মতো চরম সিদ্ধান্তে ঠেলে দিয়েছে। তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, প্রধান শিক্ষক কেন সরাসরি অভিভাবকদের না জানিয়ে বারবার একজন অপ্রাপ্তবয়স্ক ছাত্রীকে চাপ দিলেন। আমি এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই।
এদিকে, ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নূর মোহাম্মদ জানিয়েছেন, ছাত্রীরা ভূমি অফিসে না গিয়ে মসজিদে নূর ঘুরতে যাওয়ায় তিনি সাথীর অভিভাবককে স্কুলে আসতে বলেছিলেন। অনেক দিন পেরিয়ে গেলেও অভিভাবক না আসায় ঘটনার দিন তিনি আবার সাথীকে এ কথা বলেন, এরপরই তিনি আত্মহত্যার চেষ্টার খবর পান।
বকশীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খন্দকার শাকের আহাম্মেদ জানিয়েছেন, এই ঘটনায় তদন্ত চলমান রয়েছে এবং তদন্ত শেষে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বকশীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মাসুদ রানা বলেন, ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক। দ্রুত একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে এবং তদন্তের মাধ্যমে ঘটনার প্রকৃত কারণ ও ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নূর মোহাম্মদের ভূমিকা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি শিক্ষার্থীদের জন্য নিরাপদ শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।