ঢাকা ০২:৪৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৫, ৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

“৭৪৮২ দিনের গল্প: পরিশ্রম, অভিমান আর অবিচল নিষ্ঠায় মুশফিকুর রহিমের শততম টেস্টের মহাকাব্য”

  • ডেস্ক রিপোর্টঃ
  • আপডেট সময় ১১:৩৭:১৪ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৫
  • ৫১৯ বার পড়া হয়েছে

 

রং চটে যাওয়া সেই টুপি, সেলাইয়ের জায়গায় বারবার সুঁই-সুতার স্পর্শ—সবকিছুর পরও তার সম্ভ্রমে এতটুকু ঘাটতি হয়নি। লর্ডসে সদ্য গোঁফ ওঠা কিশোরের মাথায় উঠেছিল যে টেস্ট ক্যাপ, সময়ের ঘূর্ণনে আজ সেই কিশোর মধ্যবয়সী এক কিংবদন্তি। মাঝে কেটে গেছে ৭ হাজার ৪৮২ দিন। সেই দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে আজ খেলতে নামছেন তিনি—বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে একমাত্র ক্রিকেটার হিসেবে শততম টেস্টে।

কত না বলা উপেক্ষা, কত অজানা বেদনা, কত সংগ্রামের ক্ষত নিয়ে দুই দশক ধরে বৃদ্ধ বটবৃক্ষের মতো দলের পাশে থেকেছেন মুশফিকুর রহিম। দলের দুর্যোগে তাঁর ব্যাট হয়ে উঠেছে ভরসার মাস্তুল। তাই লোকে তাঁকে ‘মিস্টার ডিপেন্ডেবল’ বলে—আবেগের চেয়ে বেশি সম্ভ্রমে, শ্রদ্ধায়।

‘পঞ্চপাণ্ডব’-এর যুগেও ড্রেসিংরুমে তিনি ছিলেন পার্শ্বচরিত্রের মতো। কখনো বাজার কাটতির পদ্যের স্রোতে ভাসেননি; কখনো নিজের কৃতিত্বের ঢাক বাজাননি। তিন তিনবার দ্বিশতক করেও আত্মতৃপ্তি নয়, দলীয় সাফল্যেই খুঁজেছেন নিজের আনন্দ।

সকালবেলার ঘুম ভেঙে অনুশীলনে ছোটা, একা একা জিম-নেট—অধ্যবসায়ের এই গল্প অনেকেই জানেন। কিন্তু তাঁর ভেতরে জমে থাকা অভিমান আর উপেক্ষার পাহাড়? সে গল্প তিনি বলেননি। নেতৃত্বে নিয়ে ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়াকে হারালেও প্রাপ্য স্বীকৃতি পাননি। ড্রেসিংরুমে বন্ধুর মতো মিশতে গেলেও পেয়েছেন নীরব উপেক্ষা। একজন কোচের ‘গুড বয়’ না হওয়ায় হারিয়েছেন কিপিং গ্লাভসের অধিকারও।

কিন্তু কিছু হারাননি—ক্রিকেটের প্রতি তাঁর আগুনে বিশ্বাস। লর্ডসে অভিষেকের আগে উচ্চতা নিয়ে ঠাট্টা করা ইংলিশ সাংবাদিককে বলেছিলেন—“ক্রিকেট বয়স বা উচ্চতার খেলা নয়।” সেই জবাবের পর চমকে গিয়েছিলেন সাংবাদিক। আজ ১৯ রান থেকে শুরু করা কিশোরের ঝুলিতে ৬,৩৫১ রান।

জাভেদ ওমর থেকে শুরু করে সাকিব-তামিম হয়ে শান্ত—তিন প্রজন্মের সঙ্গে খেলেছেন তিনি। অনেকে এসেছেন, বিদায় নিয়েছেন, কেউ এখন কোচ। কিন্তু মুশফিকুর রহিম—তিনি এক ও অদ্বিতীয়। বাংলাদেশ ড্রেসিংরুমের ‘মিতু নাম্বার ওয়ান’।

শেষ পর্যন্ত ক্রিকেটার হিসেবে নয়, মানুষ হিসেবে মনে রাখতেই চান তিনি। নিজের রুচি, অভিমত ও নীতিতে তৈরি করেছেন এক নীরব বৃত্ত—যেখানে প্রবেশাধিকার খুব কম জনের।

কুড়ি বছর ধরে শরীর, মন, পরিশ্রম, নিষ্ঠা—সবকিছু উৎসর্গ করে আজ তিনি দাঁড়িয়ে আছেন অদম্য, অনমনীয় এক প্রতীক হয়ে। শততম টেস্টের গৌরব তাঁর মাথায় না, বরং সেই রংচটা স্বপ্ন-টুপিটিতে, যা সবকিছুর সাক্ষী হয়ে আছে।

মুশফিকুর রহিম—বাংলাদেশ ক্রিকেটের ইতিহাসে নিজেকে লিখে রেখেছেন অমোচনীয় অক্ষরে।

জনপ্রিয় সংবাদ

ইসির আচরণবিধিতে দ্বৈত নীতি ও অস্পষ্টতা: পোস্টার নিষেধাজ্ঞা নিয়ে প্রশ্ন তুললেন শিশির মনির

“৭৪৮২ দিনের গল্প: পরিশ্রম, অভিমান আর অবিচল নিষ্ঠায় মুশফিকুর রহিমের শততম টেস্টের মহাকাব্য”

আপডেট সময় ১১:৩৭:১৪ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৫

 

রং চটে যাওয়া সেই টুপি, সেলাইয়ের জায়গায় বারবার সুঁই-সুতার স্পর্শ—সবকিছুর পরও তার সম্ভ্রমে এতটুকু ঘাটতি হয়নি। লর্ডসে সদ্য গোঁফ ওঠা কিশোরের মাথায় উঠেছিল যে টেস্ট ক্যাপ, সময়ের ঘূর্ণনে আজ সেই কিশোর মধ্যবয়সী এক কিংবদন্তি। মাঝে কেটে গেছে ৭ হাজার ৪৮২ দিন। সেই দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে আজ খেলতে নামছেন তিনি—বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে একমাত্র ক্রিকেটার হিসেবে শততম টেস্টে।

কত না বলা উপেক্ষা, কত অজানা বেদনা, কত সংগ্রামের ক্ষত নিয়ে দুই দশক ধরে বৃদ্ধ বটবৃক্ষের মতো দলের পাশে থেকেছেন মুশফিকুর রহিম। দলের দুর্যোগে তাঁর ব্যাট হয়ে উঠেছে ভরসার মাস্তুল। তাই লোকে তাঁকে ‘মিস্টার ডিপেন্ডেবল’ বলে—আবেগের চেয়ে বেশি সম্ভ্রমে, শ্রদ্ধায়।

‘পঞ্চপাণ্ডব’-এর যুগেও ড্রেসিংরুমে তিনি ছিলেন পার্শ্বচরিত্রের মতো। কখনো বাজার কাটতির পদ্যের স্রোতে ভাসেননি; কখনো নিজের কৃতিত্বের ঢাক বাজাননি। তিন তিনবার দ্বিশতক করেও আত্মতৃপ্তি নয়, দলীয় সাফল্যেই খুঁজেছেন নিজের আনন্দ।

সকালবেলার ঘুম ভেঙে অনুশীলনে ছোটা, একা একা জিম-নেট—অধ্যবসায়ের এই গল্প অনেকেই জানেন। কিন্তু তাঁর ভেতরে জমে থাকা অভিমান আর উপেক্ষার পাহাড়? সে গল্প তিনি বলেননি। নেতৃত্বে নিয়ে ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়াকে হারালেও প্রাপ্য স্বীকৃতি পাননি। ড্রেসিংরুমে বন্ধুর মতো মিশতে গেলেও পেয়েছেন নীরব উপেক্ষা। একজন কোচের ‘গুড বয়’ না হওয়ায় হারিয়েছেন কিপিং গ্লাভসের অধিকারও।

কিন্তু কিছু হারাননি—ক্রিকেটের প্রতি তাঁর আগুনে বিশ্বাস। লর্ডসে অভিষেকের আগে উচ্চতা নিয়ে ঠাট্টা করা ইংলিশ সাংবাদিককে বলেছিলেন—“ক্রিকেট বয়স বা উচ্চতার খেলা নয়।” সেই জবাবের পর চমকে গিয়েছিলেন সাংবাদিক। আজ ১৯ রান থেকে শুরু করা কিশোরের ঝুলিতে ৬,৩৫১ রান।

জাভেদ ওমর থেকে শুরু করে সাকিব-তামিম হয়ে শান্ত—তিন প্রজন্মের সঙ্গে খেলেছেন তিনি। অনেকে এসেছেন, বিদায় নিয়েছেন, কেউ এখন কোচ। কিন্তু মুশফিকুর রহিম—তিনি এক ও অদ্বিতীয়। বাংলাদেশ ড্রেসিংরুমের ‘মিতু নাম্বার ওয়ান’।

শেষ পর্যন্ত ক্রিকেটার হিসেবে নয়, মানুষ হিসেবে মনে রাখতেই চান তিনি। নিজের রুচি, অভিমত ও নীতিতে তৈরি করেছেন এক নীরব বৃত্ত—যেখানে প্রবেশাধিকার খুব কম জনের।

কুড়ি বছর ধরে শরীর, মন, পরিশ্রম, নিষ্ঠা—সবকিছু উৎসর্গ করে আজ তিনি দাঁড়িয়ে আছেন অদম্য, অনমনীয় এক প্রতীক হয়ে। শততম টেস্টের গৌরব তাঁর মাথায় না, বরং সেই রংচটা স্বপ্ন-টুপিটিতে, যা সবকিছুর সাক্ষী হয়ে আছে।

মুশফিকুর রহিম—বাংলাদেশ ক্রিকেটের ইতিহাসে নিজেকে লিখে রেখেছেন অমোচনীয় অক্ষরে।