বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনের সবচেয়ে উজ্জ্বল নক্ষত্র সাকিব আল হাসান—যিনি একাধারে বিশ্বের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার, আবার একই সঙ্গে নানা বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দু। মাঠের পারফরম্যান্সে দেশকে যেমন গর্বিত করেছেন, মাঠের বাইরের কর্মকাণ্ডেও প্রায়ই সমালোচনার মুখে পড়েছেন তিনি। এবার আলোচনায় এসেছে তার কর ফাঁকি ও সম্পদ গোপনের অভিযোগ।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) আয়কর তদন্ত গোয়েন্দা ইউনিটের অনুসন্ধানে জানা গেছে, সাকিবের নামে ১০৬ কোটি টাকার বেশি জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ৩০ কোটির বেশি কর ফাঁকি দিয়েছেন তিনি বলে প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে।
গোয়েন্দাদের তথ্য অনুযায়ী, ব্যাংকের এফডিআর, শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ, বিদেশি টি-২০ লিগ থেকে উপার্জিত অর্থ, এমনকি ম্যান অব দ্য ম্যাচ ও সিরিজ পুরস্কারের অর্থও কর নথিতে উল্লেখ করেননি সাকিব। বিসিবি ও কিছু বিজ্ঞাপনী চুক্তির আয়ের তথ্য থাকলেও বিশ্বের বিভিন্ন লিগ থেকে পাওয়া বিশাল অঙ্কের অর্থ কর রিটার্নে অনুপস্থিত।
তদন্তে আরও জানা গেছে, ২০২১-২২ করবর্ষ থেকে সাকিবের এফডিআরের পরিমাণ কমতে থাকে। গোয়েন্দারা ধারণা করছেন, তিনি অর্থ দেশের বাইরে সরিয়ে নিয়েছেন। এ সময় যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে সাকিবের বাড়ির তথ্যও প্রকাশ্যে আসে। সেখানে জাতীয় দলের খেলোয়াড়দের আতিথ্য দেওয়ার ছবিও ভাইরাল হয়েছিল।
অর্থ ফাঁকির এই ঘটনায় ‘সাকিব আল হাসান ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট’ ও ‘সাকিব আল হাসান ক্যানসার ফাউন্ডেশন’ নামের দুটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমেও কর ফাঁকির সম্ভাবনা তদন্ত করা হচ্ছে।
আয়কর গোয়েন্দা ও তদন্ত ইউনিটের কমিশনার আবদুর রকিব জানিয়েছেন, “সাকিবের কর ফাঁকির বিষয়ে তদন্ত চলছে। জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদের সন্ধান পাওয়া গেছে এবং সরকারের রাজস্ব আদায়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।”
তথ্য অনুযায়ী, ২০০৬-০৭ করবর্ষ থেকে রিটার্ন দাখিল করছেন সাকিব, তবে ২০২৪-২৫ করবর্ষের রিটার্ন এখনো জমা দেননি। তদন্ত কর্মকর্তাদের মতে, শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর তিনি দেশে অবস্থান না করায় এ রিটার্ন দাখিল করা হয়নি।
অভিযোগ রয়েছে, তিনি ২৩টি প্রতিষ্ঠানের পরিচালক হিসেবে যুক্ত থাকলেও কর নথিতে দেখানো হয়েছে মাত্র ৯টি। অনেক কোম্পানির নিবন্ধন করা হয়েছে এক ঠিকানায়—যা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন গোয়েন্দারা। এছাড়া ২০ কোটি ৫০ লাখ টাকায় র্যাংকন গ্রুপ থেকে কেনা ফ্ল্যাট এবং অন্যান্য বিনিয়োগের তথ্যও গোপন করেছেন তিনি।
রাজনীতিতেও সাকিবের সম্পৃক্ততা নতুন নয়। ২০১৮ সালে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে মাগুরা-১ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি। পরে ২০২৩ সালে সংসদ সদস্যপদ থেকে ইস্তফা দিলেও আওয়ামী রাজনীতির সঙ্গেই তার নাম জড়িয়ে থাকে।
বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করা এই ক্রিকেটার সর্বশেষ গত বছরের নভেম্বরে দেশে ফিরেছিলেন বিসিবির সঙ্গে চুক্তি আলোচনার জন্য। কিন্তু আলোচনা ভেস্তে গেলে তিনি দেশ ছাড়েন।
সাকিবের কর ফাঁকি ও সম্পদ গোপন নিয়ে তদন্ত এখনো চলছে। তবে যে তথ্যগুলো সামনে এসেছে, তাতে একথা স্পষ্ট—মাঠের পারফরম্যান্সে যেমন সাকিব ছিলেন ‘নাম্বার ওয়ান’, সম্পদ গোপনেও এবার সেই আসনেই বসেছেন তিনি।