ঢাকা ০১:৪০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২৮ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

জুলাই সনদ বাস্তবায়ন পদ্ধতির সুরাহা হয়নি, ফের বসবে কমিশন

  • ডেস্ক রিপোর্টঃ
  • আপডেট সময় ১১:২৭:১২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • ৫১৮ বার পড়া হয়েছে

জুলাই সনদের বাস্তবায়ন পদ্ধতি নিয়ে গতকাল বৃহস্পতিবারও সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেনি ঐকমত্য কমিশন এবং রাজনৈতিক দলগুলো। আগামী রোববার দুপুরে আবারও দলগুলোর সঙ্গে বসবে কমিশন। গতকাল রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সংলাপে রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের আগের অবস্থানেই অনড় ছিল। বিএনপি জানায়, যেসব সংস্কার বাস্তবায়নে সংবিধান সংশোধন করতে হবে তা আগামী সংসদে বাস্তবায়ন করতে হবে। জামায়াতে ইসলামী জানায়, বিশেষ সাংবিধানিক আদেশে সংবিধান সংস্কার করে জুলাই সনদের অধীনে নির্বাচন হতে হবে। এনসিপি আগের মতোই গণপরিষদের মাধ্যমে নতুন সংবিধান চেয়েছে। কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজ সাংবাদিকদের বলেছেন, সংলাপে অংশ নেওয়া ৩০ রাজনৈতিক দল এবং জোটকে চূড়ান্ত সনদ পাঠানো হচ্ছে। রোববারের মধ্যে দলগুলোকে দুইজন করে নেতার নাম পাঠাতে হবে, যারা সনদে সই করবেন। ভিন্নমত থাকলেও জুলাই সনদে সই করবে বলে জানিয়েছে বিএনপি, জামায়াতসহ অধিকাংশ দল। গতকালের সংলাপে রাজনৈতিক দলগুলো যেসব সংস্কার বাস্তবায়নে সংবিধান সংশোধনের প্রয়োজন হবে না, সেগুলো আগামী নির্বাচনের আগেই অধ্যাদেশ বা নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে বাস্তবায়নে একমত হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকার তা বাস্তবায়ন করবে। মৌলিক সংস্কার চূড়ান্ত করতে হবে: প্রধান উপদেষ্টা
সংলাপের পর প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে যমুনায় ঐকমত্য কমিশনের সভা হয়। সরকারপ্রধান নিজেই এ কমিশনের সভাপতি। সভা সূত্র জানিয়েছে, আগামী রোববার রাজনৈতিক দলের সংলাপে থাকতে পারেন ড. ইউনূস। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, কমিশন তাদের প্রতিবেদন শিগগিরই সরকারকে দেবে। জুলাই সনদ বাস্তবায়ন পদ্ধতি নিয়ে বিশেষজ্ঞ প্যানেলের মতামত সরকারপ্রধানকে জানানো হয়েছে। ড. ইউনূস বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধানতম তিনটি ম্যান্ডেটের একটি সংস্কার। তাই নির্বাচন ও বিচারের সমান গুরুত্ব দিয়ে জুলাই সনদকে দেখতে হবে। আগামী নির্বাচনে নির্ধারিত হবে আগামীর বাংলাদেশের পথরেখা। নির্বাচন সামনে রেখে অবশ্যই মৌলিক সংস্কার চূড়ান্ত করতে হবে। ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে নির্বাচনের বিকল্প নেই।
কমিশন সদস্য ছাড়াও বৈঠকে ছিলেন উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, আসিফ নজরুল, সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান। সনদ বাস্তবায়নে চার পদ্ধতি সংলাপের পর আলী রীয়াজ বলেছেন, রাজনৈতিক দলগুলোর মতামতে সনদ বাস্তবায়নের ছয়টি পদ্ধতি পাওয়া গিয়েছিল। তবে কমিশনের বিশেষজ্ঞ প্যানেল সংবিধান সংস্কার সভা এবং সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সুপ্রিম কোর্টের মতামতের মাধ্যমে সনদ বাস্তবায়নকে যৌক্তিক মনে করেনি। তারা গণভোট, বিশেষ সাংবিধানিক আদেশ, অধ্যাদেশ ও নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের পরামর্শ দিয়েছে। ঐকমত্য কমিশন দলগুলোকে এটাই সুপারিশ করেছে। আলী রীয়াজ বলেন, এর আগে দুই দফা সনদের অঙ্গীকারনামার খসড়ায় দলগুলোর মতামত নেওয়া হয়েছে। চূড়ান্ত সনদে সেগুলো সন্নিবেশিত হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতামত নেওয়া হয়েছে। তবে সবার মত রাখা সম্ভব নয়। কারণ এক দলের মতামত আরেক দলের সঙ্গে মিলছে না। তিনি জানান, আগামী রোববার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের আগে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আরেকবার বৈঠক করবে কমিশন। আগামী সংসদেই সংবিধান সংস্কার হবে– বিএনপির এ অবস্থান বিষয়ে ইঙ্গিত করে আলী রীয়াজ জানান,  কয়েকটি দল সংলাপে বলেছে, বিদ্যমান কাঠামোতে সংস্কার হবে না। কাঠামোর বাইরে যেতে হবে। সংবিধান সংস্কারের পদ্ধতিগত ত্রুটি থাকলে পরে তা আদালতে বাতিল হতে পারে বলে সংলাপে আশঙ্কা প্রকাশ করেন বিএনপির প্রতিনিধিরা। এ বিষয়ে আলী রীয়াজ বলেছেন, ভবিষ্যতে রাজনৈতিক পরিবর্তন হলেও যেন পদ্ধতিগত ত্রুটির কারণে জুলাই সনদ অনুযায়ী করা সংস্কার বাতিল না হয়– দলগুলো এ নিশ্চয়তা চাইছে। সংবিধান-সংক্রান্ত নয়, এমন সংস্কার করতে পারবে সরকার অধ্যাদেশ এবং নির্বাহী আদেশে জুলাই সনদের যেসব সংস্কার  করা যাবে, সেগুলো সরকার বাস্তবায়ন করতে পারে বলে জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ। সংলাপের পর তিনি সাংবাদিকদের বলেন, এ বিষয়ে লিখিত ও মৌখিক মতামত দেওয়া হয়েছে।সালাহউদ্দিন আহমেদ জানান, কমিশন সনদ বাস্তবায়নের চারটি পদ্ধতি আলোচনায় দিয়েছে। সংবিধান সংশোধনী-সংক্রান্ত ১৯টি মৌলিক বিষয় নির্ধারণ করা হয়েছে। এগুলো বাস্তবায়নে কী প্রক্রিয়া অনুসরণ করা যায়, সে বিষয়ে মতামতের জন্য কমিশন বৈঠক ডেকেছিল। প্রত্যেকে মতামত দিয়েছেন। সনদে যেসব সংস্কারের প্রস্তাব রয়েছে, রাজনৈতিক দলগুলো তা নির্বাচনী ইশতেহারে রাখবে। সনদের অঙ্গীকারে সই করবে। যারাই নির্বাচিত হবে, তারা পরবর্তী দুই বছরে  সংশোধনীগুলো বাস্তবায়নের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকবে। সংসদ ছাড়া সংবিধান সংশোধনের পথ নেই– মন্তব্য করে সালাহউদ্দিন বলেন, প্রশ্ন আসছে, সাংবিধানিক আদেশ জারির মাধ্যমে সংশোধনীগুলোকে এখনই কার্যকর করা যায় কিনা? কোনো কোনো রাজনৈতিক দল রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সময়কার উদাহরণ দিচ্ছে। বলছে, সংবিধান সংশোধন বিষয়ে আমরা যেন সঠিক সিদ্ধান্ত নিই। সালাউদ্দিন আহমেদ বলেন, বিএনপি সনদ সইয়ের জন্য প্রস্তুত। সনদে সই করলেও বিএনপি যেসব সংস্কারে নোট অব ডিসেন্ট (আপত্তি) দিয়েছে, ক্ষমতায় গেলে সেগুলো বাস্তবায়ন করবে কিনা– এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বিএনপি মাত্র দুটি নোট অব ডিসেন্ট দিয়েছে। ক্ষমতায় গেলে যেভাবে নোট অব ডিসেন্ট দিয়েছে, সেভাবেই বাস্তবায়ন করবে।’ বিএনপি পিআর পদ্ধতিতে উচ্চকক্ষ গঠনের সিদ্ধান্তে নোট অব ডিসেন্ট দিয়েছে। সালাহউদ্দিন বলেন, প্রধান উপদেষ্টা নিজেই বলেছেন, যেসব সংস্কারে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য হবে, সেগুলো পরবর্তী সংসদে বাস্তবায়ন হবে। বিএনপি তাঁর বক্তব্যকে সমর্থন করছে।বর্তমান সরকারের সাংবিধানিক আদেশ দেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে কিনা– এ নিয়েও বিতর্ক হয় গতকালের সংলাপে। জামায়াত বলেছে, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে জনগণের অভিপ্রায়ে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের এমন আদেশ জারির ক্ষমতা আছে। তবে সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী আদালতের মতামতে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার সাংবিধানিক সরকার। সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা অক্ষুণ্ন রয়েছে। সংবিধানের কোনো অংশ স্থগিত বা বাতিল হয়নি। তাই সাংবিধানিক আদেশ জারির মাধ্যমে দ্বৈত সংবিধানে যাওয়ার সুযোগ নেই।
সাংবিধানিক আদেশ জারি হলে পদ্ধতিগত ত্রুটির কারণে আদালতে প্রশ্ন উঠতে পারে বলে সতর্ক করেছে বিএনপি। সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, ‘আমরা যেন ভুল সিদ্ধান্ত না নিই।’ সাংবিধানিক আদেশই চায় জামায়াত
জামায়াতের নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, কমিশন পাঁচটি বিকল্প দিলেও জামায়াতের একটি সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব আছে। আশা করি, আলোচনার মাধ্যমে কাছাকাছি আসা যাবে। জামায়াতের প্রস্তাব ব্যাখ্যা করে আইনজীবী শিশির মনির বলেন, সংস্কারের যেসব সিদ্ধান্ত সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক, সেগুলো সংবিধানের ওপরে প্রাধান্য দেওয়া উচিত। বাকি ক্ষেত্রে সংবিধান যেমন আছে, তেমন থাকবে।শিশির মনির বলেন, জনগণের অভিপ্রায় বাস্তবায়নে সংস্কারের সংলাপ চলছে। গণঅভ্যুত্থানের পর যখন সংবিধান, সরকার, বিচার বিভাগ ছিল না– সাংবিধানিক বিধান অনুযায়ী সেই সময়ে জনগণের অভিপ্রায় কার্যকর ছিল। সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৭ অনুযায়ী, জনগণের অভিপ্রায়ের যে পরম অভিব্যক্তি, তার বহিঃপ্রকাশকে বিশেষ আদেশের মাধ্যমে প্রাধান্য দেওয়া হলে আগামী নির্বাচন এর অধীনে হওয়ার পথে বাধা থাকবে না। গণঅভ্যুত্থানের পর সাংবিধানিক ব্যবস্থা অনুসরণের সুযোগ নেই জানিয়ে শিশির মনির বলেন, সংবিধানের ১৫৩টি অনুচ্ছেদের মধ্যে ৫৭টি ইতোমধ্যে অকার্যকর। তাই সাংবিধানিক আদেশ প্রয়োজন। এক প্রশ্নের জবাবে তাহের বলেন, সাংবিধানিক আদেশ জারি না হলে গণভোটকে বিকল্প হিসেবে রেখেছি।আলী রীয়াজের সভাপতিত্বে সংলাপে উপস্থিত ছিলেন কমিশনের সদস্য বদিউল আলম মজুমদার, ইফতেখারুজ্জামান, আইয়ুব আলী মিয়া, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার।

 

 

জনপ্রিয় সংবাদ

দক্ষিণ আফ্রিকায় বাংলাদেশি খুন, দোকানের ফ্রিজে মিলল মরদেহ

জুলাই সনদ বাস্তবায়ন পদ্ধতির সুরাহা হয়নি, ফের বসবে কমিশন

আপডেট সময় ১১:২৭:১২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৫

জুলাই সনদের বাস্তবায়ন পদ্ধতি নিয়ে গতকাল বৃহস্পতিবারও সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেনি ঐকমত্য কমিশন এবং রাজনৈতিক দলগুলো। আগামী রোববার দুপুরে আবারও দলগুলোর সঙ্গে বসবে কমিশন। গতকাল রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সংলাপে রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের আগের অবস্থানেই অনড় ছিল। বিএনপি জানায়, যেসব সংস্কার বাস্তবায়নে সংবিধান সংশোধন করতে হবে তা আগামী সংসদে বাস্তবায়ন করতে হবে। জামায়াতে ইসলামী জানায়, বিশেষ সাংবিধানিক আদেশে সংবিধান সংস্কার করে জুলাই সনদের অধীনে নির্বাচন হতে হবে। এনসিপি আগের মতোই গণপরিষদের মাধ্যমে নতুন সংবিধান চেয়েছে। কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজ সাংবাদিকদের বলেছেন, সংলাপে অংশ নেওয়া ৩০ রাজনৈতিক দল এবং জোটকে চূড়ান্ত সনদ পাঠানো হচ্ছে। রোববারের মধ্যে দলগুলোকে দুইজন করে নেতার নাম পাঠাতে হবে, যারা সনদে সই করবেন। ভিন্নমত থাকলেও জুলাই সনদে সই করবে বলে জানিয়েছে বিএনপি, জামায়াতসহ অধিকাংশ দল। গতকালের সংলাপে রাজনৈতিক দলগুলো যেসব সংস্কার বাস্তবায়নে সংবিধান সংশোধনের প্রয়োজন হবে না, সেগুলো আগামী নির্বাচনের আগেই অধ্যাদেশ বা নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে বাস্তবায়নে একমত হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকার তা বাস্তবায়ন করবে। মৌলিক সংস্কার চূড়ান্ত করতে হবে: প্রধান উপদেষ্টা
সংলাপের পর প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে যমুনায় ঐকমত্য কমিশনের সভা হয়। সরকারপ্রধান নিজেই এ কমিশনের সভাপতি। সভা সূত্র জানিয়েছে, আগামী রোববার রাজনৈতিক দলের সংলাপে থাকতে পারেন ড. ইউনূস। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, কমিশন তাদের প্রতিবেদন শিগগিরই সরকারকে দেবে। জুলাই সনদ বাস্তবায়ন পদ্ধতি নিয়ে বিশেষজ্ঞ প্যানেলের মতামত সরকারপ্রধানকে জানানো হয়েছে। ড. ইউনূস বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধানতম তিনটি ম্যান্ডেটের একটি সংস্কার। তাই নির্বাচন ও বিচারের সমান গুরুত্ব দিয়ে জুলাই সনদকে দেখতে হবে। আগামী নির্বাচনে নির্ধারিত হবে আগামীর বাংলাদেশের পথরেখা। নির্বাচন সামনে রেখে অবশ্যই মৌলিক সংস্কার চূড়ান্ত করতে হবে। ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে নির্বাচনের বিকল্প নেই।
কমিশন সদস্য ছাড়াও বৈঠকে ছিলেন উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, আসিফ নজরুল, সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান। সনদ বাস্তবায়নে চার পদ্ধতি সংলাপের পর আলী রীয়াজ বলেছেন, রাজনৈতিক দলগুলোর মতামতে সনদ বাস্তবায়নের ছয়টি পদ্ধতি পাওয়া গিয়েছিল। তবে কমিশনের বিশেষজ্ঞ প্যানেল সংবিধান সংস্কার সভা এবং সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সুপ্রিম কোর্টের মতামতের মাধ্যমে সনদ বাস্তবায়নকে যৌক্তিক মনে করেনি। তারা গণভোট, বিশেষ সাংবিধানিক আদেশ, অধ্যাদেশ ও নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের পরামর্শ দিয়েছে। ঐকমত্য কমিশন দলগুলোকে এটাই সুপারিশ করেছে। আলী রীয়াজ বলেন, এর আগে দুই দফা সনদের অঙ্গীকারনামার খসড়ায় দলগুলোর মতামত নেওয়া হয়েছে। চূড়ান্ত সনদে সেগুলো সন্নিবেশিত হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতামত নেওয়া হয়েছে। তবে সবার মত রাখা সম্ভব নয়। কারণ এক দলের মতামত আরেক দলের সঙ্গে মিলছে না। তিনি জানান, আগামী রোববার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের আগে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আরেকবার বৈঠক করবে কমিশন। আগামী সংসদেই সংবিধান সংস্কার হবে– বিএনপির এ অবস্থান বিষয়ে ইঙ্গিত করে আলী রীয়াজ জানান,  কয়েকটি দল সংলাপে বলেছে, বিদ্যমান কাঠামোতে সংস্কার হবে না। কাঠামোর বাইরে যেতে হবে। সংবিধান সংস্কারের পদ্ধতিগত ত্রুটি থাকলে পরে তা আদালতে বাতিল হতে পারে বলে সংলাপে আশঙ্কা প্রকাশ করেন বিএনপির প্রতিনিধিরা। এ বিষয়ে আলী রীয়াজ বলেছেন, ভবিষ্যতে রাজনৈতিক পরিবর্তন হলেও যেন পদ্ধতিগত ত্রুটির কারণে জুলাই সনদ অনুযায়ী করা সংস্কার বাতিল না হয়– দলগুলো এ নিশ্চয়তা চাইছে। সংবিধান-সংক্রান্ত নয়, এমন সংস্কার করতে পারবে সরকার অধ্যাদেশ এবং নির্বাহী আদেশে জুলাই সনদের যেসব সংস্কার  করা যাবে, সেগুলো সরকার বাস্তবায়ন করতে পারে বলে জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ। সংলাপের পর তিনি সাংবাদিকদের বলেন, এ বিষয়ে লিখিত ও মৌখিক মতামত দেওয়া হয়েছে।সালাহউদ্দিন আহমেদ জানান, কমিশন সনদ বাস্তবায়নের চারটি পদ্ধতি আলোচনায় দিয়েছে। সংবিধান সংশোধনী-সংক্রান্ত ১৯টি মৌলিক বিষয় নির্ধারণ করা হয়েছে। এগুলো বাস্তবায়নে কী প্রক্রিয়া অনুসরণ করা যায়, সে বিষয়ে মতামতের জন্য কমিশন বৈঠক ডেকেছিল। প্রত্যেকে মতামত দিয়েছেন। সনদে যেসব সংস্কারের প্রস্তাব রয়েছে, রাজনৈতিক দলগুলো তা নির্বাচনী ইশতেহারে রাখবে। সনদের অঙ্গীকারে সই করবে। যারাই নির্বাচিত হবে, তারা পরবর্তী দুই বছরে  সংশোধনীগুলো বাস্তবায়নের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকবে। সংসদ ছাড়া সংবিধান সংশোধনের পথ নেই– মন্তব্য করে সালাহউদ্দিন বলেন, প্রশ্ন আসছে, সাংবিধানিক আদেশ জারির মাধ্যমে সংশোধনীগুলোকে এখনই কার্যকর করা যায় কিনা? কোনো কোনো রাজনৈতিক দল রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সময়কার উদাহরণ দিচ্ছে। বলছে, সংবিধান সংশোধন বিষয়ে আমরা যেন সঠিক সিদ্ধান্ত নিই। সালাউদ্দিন আহমেদ বলেন, বিএনপি সনদ সইয়ের জন্য প্রস্তুত। সনদে সই করলেও বিএনপি যেসব সংস্কারে নোট অব ডিসেন্ট (আপত্তি) দিয়েছে, ক্ষমতায় গেলে সেগুলো বাস্তবায়ন করবে কিনা– এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বিএনপি মাত্র দুটি নোট অব ডিসেন্ট দিয়েছে। ক্ষমতায় গেলে যেভাবে নোট অব ডিসেন্ট দিয়েছে, সেভাবেই বাস্তবায়ন করবে।’ বিএনপি পিআর পদ্ধতিতে উচ্চকক্ষ গঠনের সিদ্ধান্তে নোট অব ডিসেন্ট দিয়েছে। সালাহউদ্দিন বলেন, প্রধান উপদেষ্টা নিজেই বলেছেন, যেসব সংস্কারে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য হবে, সেগুলো পরবর্তী সংসদে বাস্তবায়ন হবে। বিএনপি তাঁর বক্তব্যকে সমর্থন করছে।বর্তমান সরকারের সাংবিধানিক আদেশ দেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে কিনা– এ নিয়েও বিতর্ক হয় গতকালের সংলাপে। জামায়াত বলেছে, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে জনগণের অভিপ্রায়ে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের এমন আদেশ জারির ক্ষমতা আছে। তবে সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী আদালতের মতামতে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার সাংবিধানিক সরকার। সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা অক্ষুণ্ন রয়েছে। সংবিধানের কোনো অংশ স্থগিত বা বাতিল হয়নি। তাই সাংবিধানিক আদেশ জারির মাধ্যমে দ্বৈত সংবিধানে যাওয়ার সুযোগ নেই।
সাংবিধানিক আদেশ জারি হলে পদ্ধতিগত ত্রুটির কারণে আদালতে প্রশ্ন উঠতে পারে বলে সতর্ক করেছে বিএনপি। সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, ‘আমরা যেন ভুল সিদ্ধান্ত না নিই।’ সাংবিধানিক আদেশই চায় জামায়াত
জামায়াতের নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, কমিশন পাঁচটি বিকল্প দিলেও জামায়াতের একটি সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব আছে। আশা করি, আলোচনার মাধ্যমে কাছাকাছি আসা যাবে। জামায়াতের প্রস্তাব ব্যাখ্যা করে আইনজীবী শিশির মনির বলেন, সংস্কারের যেসব সিদ্ধান্ত সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক, সেগুলো সংবিধানের ওপরে প্রাধান্য দেওয়া উচিত। বাকি ক্ষেত্রে সংবিধান যেমন আছে, তেমন থাকবে।শিশির মনির বলেন, জনগণের অভিপ্রায় বাস্তবায়নে সংস্কারের সংলাপ চলছে। গণঅভ্যুত্থানের পর যখন সংবিধান, সরকার, বিচার বিভাগ ছিল না– সাংবিধানিক বিধান অনুযায়ী সেই সময়ে জনগণের অভিপ্রায় কার্যকর ছিল। সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৭ অনুযায়ী, জনগণের অভিপ্রায়ের যে পরম অভিব্যক্তি, তার বহিঃপ্রকাশকে বিশেষ আদেশের মাধ্যমে প্রাধান্য দেওয়া হলে আগামী নির্বাচন এর অধীনে হওয়ার পথে বাধা থাকবে না। গণঅভ্যুত্থানের পর সাংবিধানিক ব্যবস্থা অনুসরণের সুযোগ নেই জানিয়ে শিশির মনির বলেন, সংবিধানের ১৫৩টি অনুচ্ছেদের মধ্যে ৫৭টি ইতোমধ্যে অকার্যকর। তাই সাংবিধানিক আদেশ প্রয়োজন। এক প্রশ্নের জবাবে তাহের বলেন, সাংবিধানিক আদেশ জারি না হলে গণভোটকে বিকল্প হিসেবে রেখেছি।আলী রীয়াজের সভাপতিত্বে সংলাপে উপস্থিত ছিলেন কমিশনের সদস্য বদিউল আলম মজুমদার, ইফতেখারুজ্জামান, আইয়ুব আলী মিয়া, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার।