ঢাকা ০৬:৪২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ০৭ নভেম্বর ২০২৫, ২৩ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বগুড়ায় শিল্পীর রং-তুলির শেষ আঁচড়ে ফুটে উঠেছে দেবী দুর্গার রূপ: অপেক্ষা মণ্ডপে তোলার

  • ডেস্ক রিপোর্টঃ
  • আপডেট সময় ০৮:১৭:৫০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • ৫৮৭ বার পড়া হয়েছে

আর মাত্র দু’দিন পরেই শুরু হতে যাচ্ছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। বগুড়ার নন্দীগ্রামে মণ্ডপগুলোতে জাঁকজমকভাবে চলছে পূজার প্রস্তুতি। শিল্পীর রং-তুলির আঁচড়ে প্রতিমার সাজসজ্জাও প্রায় শেষের দিকে। এখন অপেক্ষা প্রতিমাগুলোকে মণ্ডপে তোলার। ষষ্ঠীর সময় এগিয়ে আসায় প্রতিমা শিল্পীদের যেন দম ফেলানোর সময় নেই। সময়মতো প্রতিমা হস্তান্তরে ব্যস্ত সময় পার করছেন শিল্পী ও কারিগররা। তুলির আঁচড়ে তারা ফুটিয়ে তুলছেন দেব-দেবীর সৌন্দর্য। সরেজমিনে বিভিন্ন মন্দিরে গিয়ে দেখা গেছে, দিনরাত অক্লান্ত পরিশ্রম করে প্রতিমা তৈরির পর এখন রং তুলিতে সাজাচ্ছেন শিল্পীরা। তুলির আঁচড়ে সেজে উঠেছে দেবী দুর্গা, লক্ষ্মী, সরস্বতী, গণেশ-কার্তিকসহ বিভিন্ন প্রতিমা। মন্দিরগুলো ঘুরে দেখা গেছে, শিল্পীদের কেউ প্রতিমায় দেওয়ার রং তৈরি করছেন, কেউ প্রতিমায় তুলির আঁচড় দিচ্ছেন আবার কেউবা প্রতিমায় অলংকার পরাতে ব্যস্ত সময় পার করছেন।দুর্গাপূজা উপলক্ষে পুরুষদের মত বাড়িতে বাড়িতে গৃহবধূরাও নাড়ু, মোয়া ও মুড়কি তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। দুর্গা মায়ের আগমন উপলক্ষে উৎসবের ধুম লেগেছে প্রতিটি সনাতনীর মনে। নিজেদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজার জোর প্রস্তুতি নিচ্ছে এই উপজেলার সনাতন ধর্মাবলম্বীরা।নন্দীগ্রাম কলেজ পাড়ার গৃহবধূ রম্পা রানী দাস বলেন, দুর্গপূজা আমাদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় অনুষ্ঠান। এ অনুষ্ঠানকে ঘিরে প্রতিটি পরিবারে বিভিন্ন ধরনের নাড়ু, মোয়া ও মুড়কি তৈরি করা হয়। আমাদের সমাজে এটি যুগ যুগ ধরে চলে আসছে। আমি প্রতিবেশীদের নিয়ে নাড়ু, মোয়া ও মুড়কি তৈরির কাজ শেষ করলাম। আমি তিলের নাড়ু, দুুই ধরনের নারিকেলের নাড়ু, গঙ্গাজলী নাড়ু, মুড়ির মোয়া, চিড়ার মোয়া, চানাচুরের মোয়া, দুধের নাড়ু ও মুড়কি তৈরি করেছি।কারু শিল্পীরা জানান, ২৭ সেপ্টেম্বরের আগে প্রতিমা মণ্ডপে তুলতে হবে। কারণ, ২৮ তারিখ মহাষষ্ঠী। সেদিন থেকে শুরু হবে দুর্গাপূজার মূল আয়োজন। যদিও গত ২১ সেপ্টেম্বর মহালয়ার মধ্যে দিয়ে দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়ে গেছে।প্রতিমা তৈরির কারিগর মনোরঞ্জন মালাকার বলেন, আমি এবছর ৬টি প্রতিমা তৈরি করছি। এখন রঙের কাজ চলছে। প্রতিমা তৈরিতে যে জিনিসপত্র লাগে তার দাম বেশি। এজন্য লাভ খুব বেশি হয় না। ২০-৩০ হাজার টাকা প্রতিটি প্রতিমার মজুরি নিচ্ছি।বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ নন্দীগ্রাম উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক সুকুমার সরকার বলেন, রঙ তুলিড় নিপুণ আঁচড়ে দেবী দুর্গাকে জীবন্ত করে তুলছেন শিল্পীরা। নানা রঙে বর্ণিল আলোকসজ্জায় সাজছে মন্ডপগুলো। মন্ডপে মন্ডপে এখন চলছে উৎসবের শেষ মুহুর্তের প্রস্তুতি। এবার নন্দীগ্রামে ৪৭টি মন্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। পুজার সব প্রস্তুতি প্রায় শেষ পর্যায়ে। প্রশাসন সহ দলীয় নেতৃবৃন্দদের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। তারা সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়ে আমাদের আশ্বস্ত করেছেন। তিনি আরও জানান, রোববার (২৮ সেপ্টেম্বর) মহা ষষ্ঠীপূজার মধ্য দিয়ে শুরু হবে শারদীয় দুর্গোৎসব। বৃহস্পতিবার (২ অক্টোবর) দেবীর বিসর্জনের মধ্যে দিয়ে এ উৎসব শেষ হবে।এদিকে গেল মঙ্গলবার নন্দীগ্রাম উপজেলা পূজা উদযাপন কমিটির নেতৃবৃন্দের সাথে মতবিনিময় করেছেন বগুড়া -০৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আলহাজ্ব মোশাররফ হোসেন। মতবিনিময় কালে তিনি দুর্গোৎসবে পাশে থেকে সকল ধরনের সহযোগিতা করার আশ্বাস দিয়েছেন।বসে নেই জামায়াত নেতাকর্মীরাও। যাচ্ছেন বিভিন্ন মন্ডপে মন্ডপে। পূজাকে ঘিরে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সাথে করছেন বৈঠক। দিচ্ছেন পাশে থেকে সকল ধরনের সহযোগিতা করার আশ্বাস।শারদীয় দুর্গোৎসবকে ঘিরে নিয়মিত পূজা মন্ডপ পরিদর্শন সহ কঠোর অবস্থানে রয়েছে উপজেলা প্রশাসন। ইতিমধ্যই উপজেলার বিভিন্ন পূজা মন্ডপ পরিদর্শন করেছে নন্দীগ্রাম সহকারী কমিশনার ও (ভারপ্রাপ্ত) উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রোহান সরকার। তিনি জানান, পূজাকে ঘিরে কোথাও যেন অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে এজন্য ৪৭ টি পূজা মন্ডপে ৪শ’ জনের অধিক আনসার সদস্যরা সব সময় পাহারায় নিয়োজিত থাকবেন। এছাড়াও উপজেলা প্রশাসন সবসময় তৎপর রয়েছে। পূজা উদযাপন উপলক্ষে প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রতিটা মন্দিরে মন্দিরে ৫০০ কেজি করে চাল ও প্রদান করা হয়েছে।নন্দীগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফইম উদ্দিন বলেন, দুর্গাপূজা উপলক্ষে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। মন্ডপের গুরুত্ব বুঝে পুরুষ ও মহিলা পুলিশ সদস্যরা প্রতিটি মণ্ডপে থাকবে। এছাড়া তিন থেকে আটজন করে আনসার সদস্য প্রতিটি মণ্ডপে মোতায়েন থাকবে। নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনা করে পুলিশ সদস্যরা টহলে থাকবে।

 

জনপ্রিয় সংবাদ

নিরপরাধ মানুষ হত্যা পৃথিবীকে হত্যার সমতুল্য

বগুড়ায় শিল্পীর রং-তুলির শেষ আঁচড়ে ফুটে উঠেছে দেবী দুর্গার রূপ: অপেক্ষা মণ্ডপে তোলার

আপডেট সময় ০৮:১৭:৫০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫

আর মাত্র দু’দিন পরেই শুরু হতে যাচ্ছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। বগুড়ার নন্দীগ্রামে মণ্ডপগুলোতে জাঁকজমকভাবে চলছে পূজার প্রস্তুতি। শিল্পীর রং-তুলির আঁচড়ে প্রতিমার সাজসজ্জাও প্রায় শেষের দিকে। এখন অপেক্ষা প্রতিমাগুলোকে মণ্ডপে তোলার। ষষ্ঠীর সময় এগিয়ে আসায় প্রতিমা শিল্পীদের যেন দম ফেলানোর সময় নেই। সময়মতো প্রতিমা হস্তান্তরে ব্যস্ত সময় পার করছেন শিল্পী ও কারিগররা। তুলির আঁচড়ে তারা ফুটিয়ে তুলছেন দেব-দেবীর সৌন্দর্য। সরেজমিনে বিভিন্ন মন্দিরে গিয়ে দেখা গেছে, দিনরাত অক্লান্ত পরিশ্রম করে প্রতিমা তৈরির পর এখন রং তুলিতে সাজাচ্ছেন শিল্পীরা। তুলির আঁচড়ে সেজে উঠেছে দেবী দুর্গা, লক্ষ্মী, সরস্বতী, গণেশ-কার্তিকসহ বিভিন্ন প্রতিমা। মন্দিরগুলো ঘুরে দেখা গেছে, শিল্পীদের কেউ প্রতিমায় দেওয়ার রং তৈরি করছেন, কেউ প্রতিমায় তুলির আঁচড় দিচ্ছেন আবার কেউবা প্রতিমায় অলংকার পরাতে ব্যস্ত সময় পার করছেন।দুর্গাপূজা উপলক্ষে পুরুষদের মত বাড়িতে বাড়িতে গৃহবধূরাও নাড়ু, মোয়া ও মুড়কি তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। দুর্গা মায়ের আগমন উপলক্ষে উৎসবের ধুম লেগেছে প্রতিটি সনাতনীর মনে। নিজেদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজার জোর প্রস্তুতি নিচ্ছে এই উপজেলার সনাতন ধর্মাবলম্বীরা।নন্দীগ্রাম কলেজ পাড়ার গৃহবধূ রম্পা রানী দাস বলেন, দুর্গপূজা আমাদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় অনুষ্ঠান। এ অনুষ্ঠানকে ঘিরে প্রতিটি পরিবারে বিভিন্ন ধরনের নাড়ু, মোয়া ও মুড়কি তৈরি করা হয়। আমাদের সমাজে এটি যুগ যুগ ধরে চলে আসছে। আমি প্রতিবেশীদের নিয়ে নাড়ু, মোয়া ও মুড়কি তৈরির কাজ শেষ করলাম। আমি তিলের নাড়ু, দুুই ধরনের নারিকেলের নাড়ু, গঙ্গাজলী নাড়ু, মুড়ির মোয়া, চিড়ার মোয়া, চানাচুরের মোয়া, দুধের নাড়ু ও মুড়কি তৈরি করেছি।কারু শিল্পীরা জানান, ২৭ সেপ্টেম্বরের আগে প্রতিমা মণ্ডপে তুলতে হবে। কারণ, ২৮ তারিখ মহাষষ্ঠী। সেদিন থেকে শুরু হবে দুর্গাপূজার মূল আয়োজন। যদিও গত ২১ সেপ্টেম্বর মহালয়ার মধ্যে দিয়ে দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়ে গেছে।প্রতিমা তৈরির কারিগর মনোরঞ্জন মালাকার বলেন, আমি এবছর ৬টি প্রতিমা তৈরি করছি। এখন রঙের কাজ চলছে। প্রতিমা তৈরিতে যে জিনিসপত্র লাগে তার দাম বেশি। এজন্য লাভ খুব বেশি হয় না। ২০-৩০ হাজার টাকা প্রতিটি প্রতিমার মজুরি নিচ্ছি।বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ নন্দীগ্রাম উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক সুকুমার সরকার বলেন, রঙ তুলিড় নিপুণ আঁচড়ে দেবী দুর্গাকে জীবন্ত করে তুলছেন শিল্পীরা। নানা রঙে বর্ণিল আলোকসজ্জায় সাজছে মন্ডপগুলো। মন্ডপে মন্ডপে এখন চলছে উৎসবের শেষ মুহুর্তের প্রস্তুতি। এবার নন্দীগ্রামে ৪৭টি মন্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। পুজার সব প্রস্তুতি প্রায় শেষ পর্যায়ে। প্রশাসন সহ দলীয় নেতৃবৃন্দদের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। তারা সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়ে আমাদের আশ্বস্ত করেছেন। তিনি আরও জানান, রোববার (২৮ সেপ্টেম্বর) মহা ষষ্ঠীপূজার মধ্য দিয়ে শুরু হবে শারদীয় দুর্গোৎসব। বৃহস্পতিবার (২ অক্টোবর) দেবীর বিসর্জনের মধ্যে দিয়ে এ উৎসব শেষ হবে।এদিকে গেল মঙ্গলবার নন্দীগ্রাম উপজেলা পূজা উদযাপন কমিটির নেতৃবৃন্দের সাথে মতবিনিময় করেছেন বগুড়া -০৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আলহাজ্ব মোশাররফ হোসেন। মতবিনিময় কালে তিনি দুর্গোৎসবে পাশে থেকে সকল ধরনের সহযোগিতা করার আশ্বাস দিয়েছেন।বসে নেই জামায়াত নেতাকর্মীরাও। যাচ্ছেন বিভিন্ন মন্ডপে মন্ডপে। পূজাকে ঘিরে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সাথে করছেন বৈঠক। দিচ্ছেন পাশে থেকে সকল ধরনের সহযোগিতা করার আশ্বাস।শারদীয় দুর্গোৎসবকে ঘিরে নিয়মিত পূজা মন্ডপ পরিদর্শন সহ কঠোর অবস্থানে রয়েছে উপজেলা প্রশাসন। ইতিমধ্যই উপজেলার বিভিন্ন পূজা মন্ডপ পরিদর্শন করেছে নন্দীগ্রাম সহকারী কমিশনার ও (ভারপ্রাপ্ত) উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রোহান সরকার। তিনি জানান, পূজাকে ঘিরে কোথাও যেন অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে এজন্য ৪৭ টি পূজা মন্ডপে ৪শ’ জনের অধিক আনসার সদস্যরা সব সময় পাহারায় নিয়োজিত থাকবেন। এছাড়াও উপজেলা প্রশাসন সবসময় তৎপর রয়েছে। পূজা উদযাপন উপলক্ষে প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রতিটা মন্দিরে মন্দিরে ৫০০ কেজি করে চাল ও প্রদান করা হয়েছে।নন্দীগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফইম উদ্দিন বলেন, দুর্গাপূজা উপলক্ষে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। মন্ডপের গুরুত্ব বুঝে পুরুষ ও মহিলা পুলিশ সদস্যরা প্রতিটি মণ্ডপে থাকবে। এছাড়া তিন থেকে আটজন করে আনসার সদস্য প্রতিটি মণ্ডপে মোতায়েন থাকবে। নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনা করে পুলিশ সদস্যরা টহলে থাকবে।