গাজা উপত্যকার পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। বৃহস্পতিবার থেকে ‘অপারেশন গিদিয়নস চ্যারিয়ট’ নামে ইসরায়েলি বাহিনী গাজার উত্তর ও দক্ষিণে ভয়াবহ স্থল অভিযান শুরু করার পর তিনি এই ঘোষণা দেন।
নেতানিয়াহু এক ভিডিওবার্তায় বলেন, “লড়াই চলছে এবং আমরা অগ্রসর হচ্ছি। গাজার পুরো ভূখণ্ড আমাদের নিয়ন্ত্রণে আনব। হাল ছাড়ব না। তবে এমনভাবে এগোতে হবে, যাতে কেউ আমাদের থামাতে না পারে।”
এদিকে, ইসরায়েলি বাহিনী জানায়, দক্ষিণ গাজার খান ইউনিস, বানি সুওহেইলা ও আশপাশের এলাকায় হামাসের আস্তানাগুলো লক্ষ্য করে ‘ব্যাপক’ হামলা চালানো হচ্ছে। আইডিএফের আরবিভাষী মুখপাত্র আভিচে আদরি বলেন, “এই অঞ্চল এখন থেকে ভয়াবহ যুদ্ধক্ষেত্র। বাসিন্দারা যেন অবিলম্বে পশ্চিমের মাওয়াসি এলাকায় সরে যান।”
বার্তা সংস্থা এএফপির তথ্যমতে, গত ২৪ ঘণ্টায় গাজায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় কমপক্ষে ১৪৮ জন নিহত হয়েছেন।
তবে সামরিক অভিযানের মধ্যেও আন্তর্জাতিক চাপের মুখে গাজায় সীমিত পরিমাণে খাদ্য সহায়তা প্রবেশের অনুমতি দিয়েছেন নেতানিয়াহু। তিনি বলেন, “দুর্ভিক্ষ মানবিক ও কূটনৈতিক—উভয় কারণেই ঠেকাতে হবে। আমাদের মিত্ররাও গণ-অনাহারের ছবি সহ্য করবে না।”
ইসরায়েলের অভ্যন্তরেও এই সিদ্ধান্ত ঘিরে তীব্র বিতর্ক দেখা দিয়েছে। চরম ডানপন্থী জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী ইতামার বেন গাভির বলেন, “আমাদের জিম্মিরা কোনো সহায়তা পাচ্ছে না, তাহলে আমরা কেন দেব? প্রধানমন্ত্রী গুরুতর ভুল করছেন।”
জাতিসংঘ ও ফুড সিকিউরিটি ফেজ ক্ল্যাসিফিকেশনের (IPC) মতে, গাজায় দুর্ভিক্ষের গুরুতর ঝুঁকি দেখা দিয়েছে। সেখানে প্রায় ২২ শতাংশ মানুষ মানবিক বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে।
ইসরায়েল দাবি করেছে, হামাসের চাপ মোকাবেলায় ২ মার্চ থেকে তারা অবরোধ কঠোর করে। তবে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা বলছে, এই অবরোধের ফলে খাদ্য, পানি, জ্বালানি ও ওষুধের চরম সংকট চলছে গাজায়।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও স্বীকার করেছেন, “গাজায় বহু মানুষ না খেয়ে রয়েছে। এই সমস্যার সমাধান করতে হবে।”
এই সংকটময় পরিস্থিতিতে কাতার, মিসর ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় দোহায় আবারও আলোচনার চেষ্টা চলছে। তবে এখনো কোনো বড় ধরনের অগ্রগতি হয়নি। নেতানিয়াহুর কার্যালয় জানিয়েছে, মার্কিন দূত স্টিভ উইটকফের প্রস্তাবনা অনুযায়ী যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, গত মার্চে দুই মাসের যুদ্ধবিরতি চুক্তি ভেঙে গেলে গাজায় নতুন করে অভিযান শুরু করে ইসরায়েল। এরপর থেকে টানা উত্তেজনা ও সংঘাত অব্যাহত রয়েছে।