চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ-১৯৭৩ অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিনির্ধারণী পর্ষদ হলো সিনেট। এতে ৫ জন শিক্ষার্থী প্রতিনিধি নির্বাচনের বিধান থাকলেও চবিতে এই নির্বাচন কখনোই অনুষ্ঠিত হয়নি। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) ও হল সংসদে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কেউই হতে পারবেন না সিনেট সদস্য। সিনেট সদস্য নির্বাচিত হওয়ার জন্য আলাদাভাবে নির্বাচন আয়োজন করতে হয়। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের সঙ্গে সিনেটে শিক্ষার্থী প্রতিনিধি নির্বাচন হওয়ার রীতি রয়েছে। তবে এবারের চাকসু নির্বাচনে ভিন্ন পরিস্থিতি। দীর্ঘ ৩৫ বছর পরে চাকসু নির্বাচন হলেও সিনেটে শিক্ষার্থী প্রতিনিধি নির্বাচন হচ্ছে না। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিনির্ধারণী পর্ষদ সিনেটে শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিত্বের সুযোগ পাবেন না।
বিশ্ববিদ্যালয় আইন-১৯৭৩ এর ২২ নম্বর অনুচ্ছেদের ১নং ধারায় নীতিনির্ধারণী পর্ষদ সিনেট গঠনের নিয়মাবলি উল্লেখ করা হয়েছে। এই ধারায় বর্ণিত হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, উপ-উপাচার্যদ্বয়, ৫ জন সরকারি কর্মকর্তা, ৫ জন এমপি, ৫ জন শিক্ষাবিদ, গবেষণা সংস্থাসমুহের ৫ জন প্রতিনিধি, ৫ জন কলেজ অধ্যক্ষ, ১০ জন কলেজ শিক্ষক, কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান, ২৫ জন রেজিস্টার্ড গ্রাজুয়েট, বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৩ জন নির্বাচিত শিক্ষক প্রতিনিধি এবং ৫ জন নির্বাচিত শিক্ষার্থী প্রতিনিধিসহ সর্বমোট ১০২ সদস্য বিশিষ্ট সিনেট গঠিত হবে।
অনুচ্ছেদের ১নং ধারার (ঠ) এ বলা হয়েছে, “বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের দ্বারা নির্বাচিত ৫ জন শিক্ষার্থী প্রতিনিধি সিনেট সদস্য হবেন।” আইনের এই ধারা অনুযায়ী সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা হয়েছে। এই আইনের ২ নং ধারায় সিনেটের শিক্ষার্থী প্রতিনিধিদের মেয়াদকাল নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। আইন অনুযায়ী, “শিক্ষার্থী প্রতিনিধি সিনেট সদস্যদের কার্যকাল হবে এক বছর। শিক্ষার্থী প্রতিনিধি সদস্যগণ বিশ্ববিদ্যালয়ে তাদের ছাত্রত্ব শেষ হলে সদস্যপদও হারাবে।” এই আইনের ৩ নং ধারায় সিনেটের সদস্য নির্বাচন পদ্ধতি উল্লেখ করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, “সিনেটের সদস্য নির্বাচন সংবিধি দ্বারা নির্দেশিত পদ্ধতিতে অনুষ্ঠিত হবে।” অর্থাৎ শিক্ষার্থী প্রতিনিধি নির্বাচনের জন্য পৃথক পদ্ধতি অনুসরণের কথা বিশ্ববিদ্যালয় আইনে বলা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় আইেনর ৪ নং সংবিধিতে সিনেটে শিক্ষার্থী প্রতিনিধি নির্বাচনের বিষয়ে সুস্পষ্ট পদ্ধতি অনুসরণ করার নীতিমালা রয়েছে। সংবিধি অনুসারে, এই নির্বাচন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য কর্তৃক নির্ধারিত তারিখে অনুষ্ঠিত হবে। তবে তিনি কোনো ছুটির দিনে নির্বাচনের তারিখ দিতে পারবেন না। নির্বাচনের জন্য রিটার্নিং অফিসার নিয়োগ দিবেন উপাচার্য। নির্বাচনের অন্তত ১৫ দিন আগে রিটার্নিং অফিসার নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করবেন। রিটার্নিং অফিসার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার অন্তত ১২ দিন আগে চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রস্তুত এবং প্রকাশ করবেন। পরে তফসিল অনুযায়ী প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করবেন।
সংবিধিতে আরও বলা হয়েছে, নির্বাচনে অংশ নিতে আগ্রহী প্রার্থীগণ যথাযথভাবে পূরণকৃত মনোনয়নপত্র নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কমপক্ষে দশ (১০) দিন আগে রিটার্নিং অফিসারের নিকট জমা দিতে হবে। পরে রিটার্নিং অফিসার তার নিকট প্রাপ্ত মনোনয়নপত্রগুলোর যাচাই-বাছাই করবেন এবং বৈধভাবে মনোনীত প্রার্থীদের তালিকা প্রকাশ করবেন। কোনো প্রার্থী চাইলে নিজ হাতে লিখিতভাবে তার প্রার্থিতা প্রত্যাহার করতে পারবেন। তবে সেটি নির্বাচন তারিখের ছয় (৬) দিন আগে রিটার্নিং অফিসারের নিকট জমা দিতে হবে। নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কমপক্ষে পাঁচ (৫) দিন আগে রিটার্নিং অফিসার নির্বাচনের চূড়ান্ত প্রার্থীর তালিকা নির্বাচন প্রকাশ করবেন। প্রত্যেক ভোটার উপাচার্যের অনুমোদিত ফরম অনুযায়ী প্রস্তুত ব্যালট পেপারের মাধ্যমে ভোট প্রদান করবেন। ভোটগ্রহণ গোপন ব্যালটের মাধ্যমে সম্পন্ন হবে। প্রত্যেক ভোটার প্রতিটি শূন্য পদের জন্য একটি করে ভোট দেওয়ার অধিকার রাখবেন, তবে তিনি ইচ্ছা করলে এক বা একাধিক ভোট না-ও দিতে পারবেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদ্যমান আইন ও সিনেটে শিক্ষার্থী প্রতিনিধি নির্বাচনের সংবিধি অনুসারে চাকসু নির্বাচনের সঙ্গে সিনেটের নির্বাচন আয়োজনের সুযোগ থাকলেও এটি যথাযথভাবে কাজে লাগাতে পারেনি কতৃপক্ষ। এছাড়া উপাচার্য দপ্তর, নির্বাচন কমিশন ও নির্বাচন পরিচালনা শাখায় সিনেটে শিক্ষার্থী প্রতিনিধি নির্বাচনের বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে যথাযথ উত্তর পাওয়া নি। সংশ্লিষ্টদের মধ্যে এই নির্বাচন নিয়ে পূর্ণাঙ্গ কোনো ধারণা নেই। অনেকেই সিনেট নির্বাচনের এই আইন ও সংবিধি সম্পর্কে অবগত নয়।