ঢাকা ০৫:১৬ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ৩ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

জুলাই সনদ ঘিরে রাজনৈতিক অচলাবস্থা: আইনগত স্বীকৃতির দাবিতে বাড়ছে চাপ

  • ডেস্ক রিপোর্টঃ
  • আপডেট সময় ১০:৫০:৫৫ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • ৫৩৯ বার পড়া হয়েছে

গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর দেশে নতুন রাজনৈতিক বাস্তবতা তৈরি হয়। গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থাকে স্বৈরাচারমুক্ত রাখার লক্ষ্যে বিভিন্ন মহল থেকে সাংবিধানিক সংস্কারের দাবি ওঠে। সেই প্রেক্ষাপটে চলতি বছরের ১২ জুলাই অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে সভাপতি করে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠিত হয়। কমিশনে সহ-সভাপতির দায়িত্ব পান সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান অধ্যাপক আলী রীয়াজ।

এ কমিশন ৬৪ জেলায় নাগরিক সংলাপ, ৩০টিরও বেশি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক ও বিশেষজ্ঞ মতামতের ভিত্তিতে জুলাই সনদের খসড়া চূড়ান্ত করেছে। এতে মোট ৯৫টি প্রস্তাব রাখা হয়েছে—৮৪টিতে সর্বসম্মতি এবং ১১টিতে ‘নোট অব ডিসেন্ট’ যুক্ত হয়েছে।

তবে জুলাই সনদের আইনগত ভিত্তি নিয়েই এখন সবচেয়ে বড় মতবিরোধ তৈরি হয়েছে। বিএনপি বলছে, সনদ সংসদে পাশ না হলে তা সংবিধানের ঊর্ধ্বে চলে যাবে। তারা উচ্চকক্ষ গঠন, দুদক ও সাংবিধানিক নিয়োগ কমিটি, প্রধানমন্ত্রীর একাধিক পদে থাকার প্রস্তাবের বিরোধিতা করছে। অন্যদিকে জামায়াত, এনসিপি ও আরও কয়েকটি দল চাইছে সনদকে অবিলম্বে আইনি স্বীকৃতি দিতে হবে, নইলে এটি বাস্তবায়ন অনিশ্চিত হয়ে পড়বে।

জামায়াত, এনসিপি, ইসলামী আন্দোলন, এবি পার্টি, গণঅধিকার পরিষদসহ সাতটি রাজনৈতিক দল ইতোমধ্যে বৈঠক করে জুলাই সনদের অধীনে নির্বাচন আয়োজনের দাবি তুলেছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, আইনগত স্বীকৃতি দেরি হলে রাজপথে অস্থিরতা বাড়বে। সব দলের ঐকমত্যে সনদ স্বাক্ষরিত হলেও বাস্তবায়ন না হলে এটি কেবল একটি কাগুজে দলিলে পরিণত হতে পারে। অন্তর্বর্তী সরকার প্রধান অধ্যাপক ইউনূস ও বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার বৈঠক সমস্যার সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে বলেও তারা মনে করেন।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ গণমাধ্যমকে বলেছেন, কোনো দলিল সংবিধানের ঊর্ধ্বে যেতে পারে না। সংবিধানের ভেতর থেকেই সমঝোতা দলিলকে বৈধতা দিতে হবে। এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব বলেন, জুলাই সনদের আইনগত ভিত্তি না হলে তারা স্বাক্ষর করবে না। প্রয়োজনে গণভোটও হওয়া উচিত। জামায়াত নেতা শফিকুল ইসলাম মাসুদ বলেছেন, আইনি ভিত্তি ছাড়া সনদ বাস্তবায়নের নিশ্চয়তা নেই। ইসলামী আন্দোলনের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমানের মতে, সনদ কেবল দলিল আকারে থাকলে ভবিষ্যৎ সরকার তা বাস্তবায়ন না-ও করতে পারে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, জুলাই সনদের আইনগত ভিত্তি নিশ্চিত করা গেলে রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনী প্রস্তুতিতে মনোযোগী হবে। তবে আইনগত স্বীকৃতি নিয়ে অনিশ্চয়তা দীর্ঘ হলে দেশের রাজনীতি ফের অচলাবস্থার দিকে যেতে পারে। এখন প্রশ্ন হলো, জুলাই সনদ দ্রুত আইনগত স্বীকৃতি পাবে কিনা, নাকি দলগুলোর মতপার্থক্যের কারণে কেবল একটি প্রতিশ্রুতির দলিল হয়েই থেকে যাবে।

জনপ্রিয় সংবাদ

জুলাই সনদ ঘিরে রাজনৈতিক অচলাবস্থা: আইনগত স্বীকৃতির দাবিতে বাড়ছে চাপ

আপডেট সময় ১০:৫০:৫৫ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫

গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর দেশে নতুন রাজনৈতিক বাস্তবতা তৈরি হয়। গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থাকে স্বৈরাচারমুক্ত রাখার লক্ষ্যে বিভিন্ন মহল থেকে সাংবিধানিক সংস্কারের দাবি ওঠে। সেই প্রেক্ষাপটে চলতি বছরের ১২ জুলাই অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে সভাপতি করে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠিত হয়। কমিশনে সহ-সভাপতির দায়িত্ব পান সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান অধ্যাপক আলী রীয়াজ।

এ কমিশন ৬৪ জেলায় নাগরিক সংলাপ, ৩০টিরও বেশি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক ও বিশেষজ্ঞ মতামতের ভিত্তিতে জুলাই সনদের খসড়া চূড়ান্ত করেছে। এতে মোট ৯৫টি প্রস্তাব রাখা হয়েছে—৮৪টিতে সর্বসম্মতি এবং ১১টিতে ‘নোট অব ডিসেন্ট’ যুক্ত হয়েছে।

তবে জুলাই সনদের আইনগত ভিত্তি নিয়েই এখন সবচেয়ে বড় মতবিরোধ তৈরি হয়েছে। বিএনপি বলছে, সনদ সংসদে পাশ না হলে তা সংবিধানের ঊর্ধ্বে চলে যাবে। তারা উচ্চকক্ষ গঠন, দুদক ও সাংবিধানিক নিয়োগ কমিটি, প্রধানমন্ত্রীর একাধিক পদে থাকার প্রস্তাবের বিরোধিতা করছে। অন্যদিকে জামায়াত, এনসিপি ও আরও কয়েকটি দল চাইছে সনদকে অবিলম্বে আইনি স্বীকৃতি দিতে হবে, নইলে এটি বাস্তবায়ন অনিশ্চিত হয়ে পড়বে।

জামায়াত, এনসিপি, ইসলামী আন্দোলন, এবি পার্টি, গণঅধিকার পরিষদসহ সাতটি রাজনৈতিক দল ইতোমধ্যে বৈঠক করে জুলাই সনদের অধীনে নির্বাচন আয়োজনের দাবি তুলেছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, আইনগত স্বীকৃতি দেরি হলে রাজপথে অস্থিরতা বাড়বে। সব দলের ঐকমত্যে সনদ স্বাক্ষরিত হলেও বাস্তবায়ন না হলে এটি কেবল একটি কাগুজে দলিলে পরিণত হতে পারে। অন্তর্বর্তী সরকার প্রধান অধ্যাপক ইউনূস ও বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার বৈঠক সমস্যার সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে বলেও তারা মনে করেন।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ গণমাধ্যমকে বলেছেন, কোনো দলিল সংবিধানের ঊর্ধ্বে যেতে পারে না। সংবিধানের ভেতর থেকেই সমঝোতা দলিলকে বৈধতা দিতে হবে। এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব বলেন, জুলাই সনদের আইনগত ভিত্তি না হলে তারা স্বাক্ষর করবে না। প্রয়োজনে গণভোটও হওয়া উচিত। জামায়াত নেতা শফিকুল ইসলাম মাসুদ বলেছেন, আইনি ভিত্তি ছাড়া সনদ বাস্তবায়নের নিশ্চয়তা নেই। ইসলামী আন্দোলনের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমানের মতে, সনদ কেবল দলিল আকারে থাকলে ভবিষ্যৎ সরকার তা বাস্তবায়ন না-ও করতে পারে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, জুলাই সনদের আইনগত ভিত্তি নিশ্চিত করা গেলে রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনী প্রস্তুতিতে মনোযোগী হবে। তবে আইনগত স্বীকৃতি নিয়ে অনিশ্চয়তা দীর্ঘ হলে দেশের রাজনীতি ফের অচলাবস্থার দিকে যেতে পারে। এখন প্রশ্ন হলো, জুলাই সনদ দ্রুত আইনগত স্বীকৃতি পাবে কিনা, নাকি দলগুলোর মতপার্থক্যের কারণে কেবল একটি প্রতিশ্রুতির দলিল হয়েই থেকে যাবে।