ইরান-ইসরায়েল ১২ দিনের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পর যে যুদ্ধবিরতি মঙ্গলবার ভোরে কার্যকর হয়েছে, তা টিকে থাকবে কি-না—এ নিয়ে তেল আবিব-তেহরান উভয় শিবিরেই ঘোর অনিশ্চয়তা। তেহরান দাবি করছে “প্রতিরোধ টিকে আছে”, কিন্তু সামরিক বিশ্লেষকেরা বলছেন, হামলার প্রথম ঘণ্টাতেই আকাশ প্রতিরক্ষা ভেঙে পড়ায় ইরান আকাশের নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছিল; বহু স-৩০০ ব্যাটারি ও পুরোনো যুদ্ধবিমান ধ্বংস হয়, যেগুলোর বিকল্প দ্রুত জোগাড় করা কঠিন।
তুরস্ক-ভিত্তিক প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক মুরাত আসলানের মতে, সাময়িক বিরতি পেলেও তেহরানের সামনে তিনটি তাত্ক্ষণিক কাজ রয়েছে। প্রথমত, অভ্যন্তরীণ বিভাজন—আবাসিক এলাকায় ক্ষয়ক্ষতি আর অর্থনৈতিক চাপ ইরানের শাসনব্যবস্থার ভিত নড়বড়ে করেছে, একে ঐক্যবদ্ধ করা জরুরি। দ্বিতীয়ত, আকাশ প্রতিরক্ষা ও বিমানশক্তি পুনর্গঠন; স-৩০০–এর ক্ষতি পূরণে রাশিয়ার কাছ থেকে আধুনিক স-৪০০ বা তাদের নিজস্ব বাভার-৩৭৩-এর উন্নত সংস্করণ কেনার, আর জঙ্গিবিমান ঘাটতি মেটাতে চীনের জে-১০সি কিংবা রাশিয়ার সুখোই-৩৫ প্যাকেজের দিকে তাকিয়ে আছে তেহরান। তৃতীয়ত, নৌশক্তি শক্তিশালী করে উপসাগরে যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েলের ‘প্রক্সি ঘাঁটিগুলোর’ বিরুদ্ধে বিশ্বাসযোগ্য প্রতিরোধ গড়তে হবে।
গত কয়েক বছরে ড্রোন ও ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রে অনেকটা স্বনির্ভরতা গড়ে তুললেও ইরানের বিমানবাহিনী এখনও ১৯৭০-এর দশকের কাঠামোয় টিকে আছে; আধুনিক এয়ার-টু-এয়ার ক্ষেপণাস্ত্র বা নির্ভুল রাডারভিত্তিক সতর্ক-ব্যবস্থার অভাব স্পষ্ট হয়ে গেছে সাম্প্রতিক যুদ্ধে। ফলে যুদ্ধবিরতি দীর্ঘস্থায়ী না হলে পরের ধাক্কা ঠেকাতে কেবল ক্ষেপণাস্ত্র-নির্ভরতা যথেষ্ট হবে না—আকাশ আর নৌপথে পাল্টা প্রতিরোধের সক্ষমতাও চাই বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকেরা।
রাশিয়ার নিজস্ব যুদ্ধক্ষেত্রের চাপে সিস্টেম সরবরাহ সীমিত, আবার চীনের কাছে গেলেও পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার ঝুঁকি রয়েছে; তাই তেহরান কোনো “চীনা-রুশ হাইব্রিড” চুক্তিতে যেতে পারে—বাভার-৩৭৩-এর নতুন ব্লক, চীনা জে-১০সি ও স্বল্প-দৃষ্টিগোচর ইউএভির সমন্বিত প্যাকেজ, যার অর্থায়নে তারা তেল-বরাবর-অস্ত্র বিনিময় মডেল বেছে নিতে পারে বলে কূটনীতিকেরা ধারণা করছেন।
সব মিলিয়ে সাময়িক শান্তির প্রহরে ইরান কেবল রাজনৈতিক সমঝোতার পথ খুঁজছে না; সম্ভাব্য পরের সংঘর্ষে ‘আকাশ হারালে যুদ্ধও হারাবে’—এই উপলব্ধি থেকেই রাশিয়া-চীনের দরজায় আধুনিক প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম চাইতে যাচ্ছে। যুদ্ধবিরতি ভঙ্গ হলে মধ্যপ্রাচ্যের শক্তিসাম্য যে আরও অস্থির হবে, সে বিষয়ে আঞ্চলিক সব শক্তিই দিনে দিনে বেশি সতর্ক হয়ে উঠছে।