চীনের রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার মাধ্যম CCTV-13 সম্প্রতি প্রথমবারের মতো জে-৩৫এ (J-35A) স্টিলথ যুদ্ধবিমানের সরাসরি উৎপাদন লাইনের দৃশ্য সম্প্রচার করেছে। শেনইয়াং এয়ারক্রাফট কর্পোরেশন (Shenyang Aircraft Corporation) পরিচালিত কারখানায় অন্তত ৫ থেকে ৬টি জে-৩৫ দৃশ্যমান হয়, যার মধ্যে একটির সিরিয়াল নম্বর “০৪০০৭০”—যা ইঙ্গিত দেয় যে বিমানগুলো এখন আর শুধুমাত্র পরীক্ষামূলক নয়, বরং পূর্ণাঙ্গ উৎপাদন পর্যায়ে পৌঁছে গেছে।
জে-৩৫ একটি পঞ্চম প্রজন্মের স্টিলথ মাল্টিরোল ফাইটার যা চীনের জে-২০ এর পাশাপাশি দেশটির বিমান সক্ষমতাকে আরও প্রসারিত করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের পর চীনই এখন একমাত্র দেশ, যার হাতে দুটি ভিন্ন ধরনের ফিফথ-জেনারেশন যুদ্ধবিমান রয়েছে—জে-২০ (বড়, দূরপাল্লার জন্য) এবং জে-৩৫ (কম্প্যাক্ট, ক্যারিয়ার উপযোগী)।
বিমানের বিশেষ বৈশিষ্ট্য:
-
AESA রাডার (অ্যাকটিভ ইলেকট্রনিকালি স্ক্যানড অ্যারে)
-
ইআরএসটি (ইলেকট্রো-অপটিক ইনফ্রারেড সার্চ ও ট্র্যাক)
-
উন্নত ইলেকট্রনিক ওয়্যারফেয়ার সিস্টেম
-
হেলমেট-মাউন্টেড টার্গেটিং ডিসপ্লে
-
অন্তর্মুখী অস্ত্র ধারণক্ষমতা — স্টিলথ রক্ষা করে
-
আধুনিক ‘ডাইভারজেন্ট সাসশন ইনলেট’ (DSI) ডিজাইন
জে-৩৫ এর ক্যারিয়ার-ভিত্তিক রূপ ইতিমধ্যেই চীনের সর্বাধুনিক এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার টাইপ-০০৩ ফুজিয়ান (Fujian)-এ পরীক্ষামূলকভাবে দেখা গেছে। এর অনন্য বৈশিষ্ট্য:
-
ফোল্ডিং উইংস
-
ক্যাটাপাল্ট-লঞ্চিংয়ের উপযোগী নাক-গিয়ার
-
সামুদ্রিক পরিবেশে অভিযোজিত আইসওয়ার্দি ডিজাইন
চীনের পরিকল্পনা অনুযায়ী, ২০৩০ সালের মধ্যে বিভিন্ন ক্যারিয়ারে ৪৮ থেকে ৭২টি জে-৩৫/জে-১৫ মিশ্রিতভাবে মোতায়েন করা হবে। Liaoning ও Shandong ছাড়াও ভবিষ্যৎ পারমাণবিক-চালিত ক্যারিয়ারগুলোতেও এই যুদ্ধবিমান মোতায়েনের পরিকল্পনা রয়েছে।
যদিও পাকিস্তানি গণমাধ্যম ৪০টি জে-৩৫ কেনার ইচ্ছা প্রকাশ করলেও পাকিস্তান সরকার তা অস্বীকার করেছে। তবে চীন ‘J-35E’ নামে রপ্তানি সংস্করণ নিয়ে কাজ করছে, বিশেষ করে সৌদি আরব, মিশর, ও আলজেরিয়ার মতো দেশগুলোর জন্য, যেগুলো মার্কিন F-35 কিনতে বাধাগ্রস্ত।
এটি মার্কিন প্রভাবিত অস্ত্রনীতির বাইরে গিয়ে নতুন কৌশলগত মিত্রতা গড়ে তুলতে চীনের একটি জিওস্ট্র্যাটেজিক কৌশল বলে ধারণা করা হচ্ছে।
জে-২০ ও জে-৩৫ উভয়ই পিপল’স লিবারেশন আর্মি এয়ার ফোর্সে যুক্ত হয়ে একটি দ্বৈত-প্ল্যাটফর্ম স্ট্র্যাটেজি তৈরি করেছে, যার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের আধিপত্য চ্যালেঞ্জ করা সম্ভব। এই যুদ্ধবিমানগুলো চীনের ‘অ্যান্টি-অ্যাক্সেস/এরিয়া ডিনায়াল (A2/AD)’ কৌশলকে সমর্থন করে এবং ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে তাদের কার্যক্ষম পরিসর বাড়াতে ভূমিকা রাখে।