এবার রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক বজায় রাখায় ভারত ও চীনের মতো দেশগুলোর ওপর ৫০০ শতাংশ আমদানি শুল্ক আরোপ করতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সমর্থিত এই প্রস্তাবিত বিলটি যদি পাস হয়, তাহলে তা দুই এশীয় অর্থনীতির জন্যই কড়া বার্তা হয়ে উঠবে। খবর ইন্ডিয়া টুডে
এই বিলের লক্ষ্য রাশিয়াকে অর্থনৈতিকভাবে একঘরে করে ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে আলোচনার টেবিলে আনা। কিন্তু এতে ভারত ও চীনের সঙ্গে কূটনৈতিক ও বাণিজ্যিক টানাপোড়েন বাড়ার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। বিশেষত এমন সময়, যখন ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র একটি দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে চূড়ান্ত পর্যায়ের আলোচনায় রয়েছে। রিপাবলিকান সিনেটর লিন্ডসে গ্রাহাম এবিসি নিউজকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “যদি কেউ রাশিয়া থেকে পণ্য কেনে এবং ইউক্রেনকে সাহায্য না করে, তাহলে তাদের পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের সময় ৫০০ শতাংশ শুল্ক বসবে।” গ্রাহামের ভাষায়, “ভারত ও চীন মিলে পুতিনের ৭০ শতাংশ তেল কিনছে। ওর যুদ্ধযন্ত্র চালু রাখতে এরাই সাহায্য করছে।”
এই বিলটি আনুষ্ঠানিকভাবে আগস্টে সিনেটে উত্থাপিত হতে পারে বলে জানা গেছে। এটি পাস হলে, ভারত ও চীনের মতো দেশগুলোর ওপর বড় ধরনের অর্থনৈতিক চাপ সৃষ্টি হতে পারে, বিশেষত ভারতের ওষুধ, টেক্সটাইল ও আইটি পরিষেবার মতো প্রধান রপ্তানি খাতে। ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর আগে ভারত মূলত মধ্যপ্রাচ্য থেকেই অধিকাংশ অপরিশোধিত তেল কিনত। কিন্তু ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া ইউক্রেনে আক্রমণ চালানোর পর ভারত ব্যাপক হারে রাশিয়ান তেল আমদানি শুরু করে। চলতি বছরেই ভারত প্রায় ৪৯ বিলিয়ন ইউরো মূল্যের রাশিয়ান তেল কিনেছে।
এই প্রস্তাব এমন সময় সামনে এলো, যখন ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বহু প্রতীক্ষিত একটি বাণিজ্য চুক্তি প্রায় চূড়ান্ত। মার্কিন ট্রেজারি সেক্রেটারি স্কট বেসেন্ট সম্প্রতি বলেছেন, “চুক্তিটি খুবই কাছাকাছি পর্যায়ে পৌঁছেছে।” যদিও ভারতের কৃষিভিত্তিক কিছু দাবি নিয়ে আলোচনা এখনও আটকে আছে। এই বিলের সহ-প্রস্তাবক হিসেবে রয়েছেন ডেমোক্র্যাট সিনেটর রিচার্ড ব্লুমেনথালও। ইতোমধ্যেই ৮৪ জন সিনেটর এই বিলের সহ-সমর্থক হয়েছেন। বিলটি মূলত পুতিনের ‘যুদ্ধ অর্থনীতি’ দুর্বল করে শান্তি আলোচনায় টানার কৌশল হিসেবে তৈরি করা হয়েছে।
গ্রাহাম বলেন, “গতকাল প্রথমবারের মতো প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নিজে আমাকে বললেন ‘তোমার বিলটি এখন সামনে আনার সময় এসেছে।’ আমরা গলফ খেলতে গিয়ে এই কথা বলেছি।” প্রথমবার এই বিলটি মার্চ মাসে প্রস্তাবিত হয়েছিল। তবে হোয়াইট হাউজের আপত্তির কারণে বিলটি তখন সামনে এগোয়নি। পরে ট্রাম্প প্রশাসন বিলের বাধ্যতামূলক ভাষা ‘হবে’ পরিবর্তন করে নমনীয় ‘হতে পারে’ শব্দে রূপান্তরের পরামর্শ দেয়।
গ্রাহাম পরে ইউক্রেনকে সহায়তাকারী দেশগুলোর জন্য বিলটিতে বিশেষ ছাড় রাখার কথাও বলেন, যাতে ইউরোপীয় মিত্রদের উদ্বেগ কিছুটা প্রশমিত হয়। যদি এই বিল আইন হিসেবে পাস হয়, তাহলে তা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারত ও চীনের বাণিজ্য সম্পর্ক আমূল পাল্টে দিতে পারে। বিশেষত, যুক্তরাষ্ট্র যেহেতু ভারতের প্রধান রপ্তানি বাজার, সেহেতু এই নীতির প্রভাবে ভারতের অর্থনীতি ও কূটনৈতিক ভারসাম্যে বড় ধাক্কা লাগতে পারে।