গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর অবশেষে ইসরায়েলি নাগরিক মেন্দি এন সাফাদির সঙ্গে সাক্ষাতের বিষয়টি স্বীকার করেছেন। বৃহস্পতিবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস) আয়োজিত পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক এক সেমিনারে এই স্বীকারোক্তি দেন তিনি।
অনুষ্ঠানে অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ সাফাদির সঙ্গে নুরের পূর্ববর্তী সাক্ষাৎ নিয়ে কথা বললে তার প্রতিক্রিয়ায় নুর বলেন, “স্যার (কলিমুল্লাহ) একটু বাড়িয়ে বলছেন, যা বিভ্রান্তি তৈরি করবে। আমি বাইরে গেলে অনেকের সঙ্গে দেখা হয়, হতেই পারে।” তিনি স্বীকার করেন, “এক কফিশপে দাঁড়িয়ে ছবি তুলেছিলাম। কফি-টফি, মিটিং-টিটিং কিছুই হয়নি। আমি তখন অনেক বিড়ম্বনায় ছিলাম, অনেক ধকল সহ্য করতে হয়েছে।”
ঘটনাটি সামনে আসে প্রায় দুই বছর আগে, যখন ২০২৩ সালের মাঝামাঝি সময়ে কাতার সফরের সময় নুরুল হক নুর ও মেন্দি সাফাদির মধ্যে সাক্ষাৎ হয়েছিল বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়। যদিও তখন নুর একে ‘ষড়যন্ত্র’ ও ‘অপপ্রচার’ বলেছিলেন, তবে সাফাদি নিজেই তখন সাক্ষাতের বিষয়টি নিশ্চিত করেছিলেন। এরপর থেকেই গোয়েন্দা সংস্থার নজরে আসেন নুর, এবং রাজনৈতিকভাবে খানিকটা কোণঠাসা হয়ে পড়েন তিনি।
সেমিনারে অধ্যাপক কলিমুল্লাহ বলেন, “ইসরায়েলের কোনো নাগরিকের সঙ্গে কেউ কথা বললে তাকেও বিপদে পড়তে হয়। নুরুল হক নুর হাসিনার আমলে মধ্যপ্রাচ্যে ভ্রমণ করছিলেন, তখন মেন্দি সাফাদির সঙ্গে কফি মিটিং করছিলেন বলে নানা ঝামেলায় পড়তে হয়েছিল।” তবে পরে সেমিনারের সঞ্চালক জিল্লুর রহমান সংশোধন করে বলেন, “দ্রুজ আসলে মুসলিম নয়, এটি একটি আলাদা ধর্ম।”
সাফাদির পরিচয় নিয়ে রাজনৈতিক জল্পনা দীর্ঘদিনের। ২০১৬ সালে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব আসলাম চৌধুরীর সঙ্গে তার বৈঠকের খবর সামনে এলে তাকে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়। সাফাদিকে অনেকেই ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত বললেও এ বিষয়ে নিশ্চিত প্রমাণ কখনো মেলেনি। তিনি ইসরায়েলের লিকুদ পার্টির সদস্য এবং একসময় সাবেক মন্ত্রী আয়ুব কারারের চিফ অব স্টাফ ছিলেন। বর্তমানে তিনি ‘সাফাদি সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল ডিপ্লোম্যাসি’ নামক একটি সংগঠনের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশের সংখ্যালঘু ও রাজনৈতিক ইস্যু নিয়ে কাজ করেন বলে দাবি করেন।
ঢাকায় নিযুক্ত ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রদূতের বরাতে জানা যায়, কাতার, দুবাই ও ভারতে নুর-সাফাদি সাক্ষাতের কিছু ছবি তাদের গোয়েন্দা সংস্থার হাতে এসেছে। যদিও বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে সরাসরি কোনো মন্তব্য আসেনি।
তবে এই বিতর্ক নতুন মাত্রা পায় ২০২১ সালে, যখন বাংলাদেশের পাসপোর্ট থেকে ‘ইসরায়েল ভ্রমণ নিষিদ্ধ’ শব্দটি তুলে নেওয়া হয়। একইসঙ্গে ইসরায়েলি দৈনিক হারেৎজ দাবি করে, বাংলাদেশ সরকার একটি ইসরায়েলি কোম্পানি থেকে নজরদারি প্রযুক্তিও কিনেছে—যদিও এ নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক বক্তব্য নেই।