ঢাকা ০৫:৫৩ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৫, ৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণ প্রশ্নে ভারতের নীরবতা: রায় ঘোষণার পর কি বদলাবে অবস্থান?

  • ডেস্ক রিপোর্টঃ
  • আপডেট সময় ০৮:২৬:৫৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৫
  • ৫২৮ বার পড়া হয়েছে

বাংলাদেশে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডের রায় ঘোষণার পর আবারও আলোচনায় এসেছে—ভারতের কাছে পাঠানো প্রত্যর্পণ অনুরোধের ভবিষ্যৎ কী হবে। গত বছরের ডিসেম্বরে বাংলাদেশ সরকার দিল্লির কাছে ‘নোট ভার্বাল’ পাঠিয়ে তাকে ফেরত চেয়েছিল। ভারত পত্রটি প্রাপ্তির স্বীকৃতি দিলেও এরপর আর কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি। প্রায় এক বছর ধরে দিল্লি এ বিষয়ে সম্পূর্ণ নীরব।

তখন ভারতের অনানুষ্ঠানিক অবস্থান ছিল, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি অস্থির; শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলা刚 শুরু হয়েছে; ন্যায়বিচারের নিশ্চয়তা নেই—এমন যুক্তি দেখিয়েই তারা প্রতিক্রিয়া এড়িয়ে যায়। আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের ওপর হামলার ঘটনাও ভারতকে আরও সতর্ক করেছিল।

কিন্তু এখন প্রেক্ষাপট ভিন্ন। শেখ হাসিনা বাংলাদেশের আদালতে গণহত্যার মামলায় দণ্ডিত অপরাধী হিসেবে ঘোষিত। তাই আন্তর্জাতিকভাবে ভারতকে প্রশ্নের মুখে পড়তে হবে—একজন দণ্ডপ্রাপ্ত পলাতককে কেন আশ্রয় দিয়ে রাখা হয়েছে? এই চাপের মুখেই ভারতের এখন নীরব থাকা কঠিন হয়ে উঠতে পারে, এবং শিগগিরই তাদের অবস্থান ব্যাখ্যা করতে হতে পারে।

তবুও দিল্লির মৌলিক অবস্থান বদলাবে—এমন ইঙ্গিত নেই। কারণ দুই দেশের ২০১৩ সালের প্রত্যর্পণ চুক্তিতে বড় কিছু ধারা আছে, যেগুলো ভারত সহজেই ব্যবহার করতে পারে। চুক্তির একটি গুরুত্বপূর্ণ ধারা বলছে, কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ যদি ‘রাজনৈতিক প্রকৃতির’ হয়, তাহলে হস্তান্তর নাকচ করা যাবে। যদিও চুক্তিতে হত্যাকাণ্ড, গুম, সন্ত্রাসবাদ ইত্যাদি অপরাধকে রাজনৈতিক নয় বলে উল্লেখ আছে, ভারত চাইলে বলতে পারে—এই মামলা ন্যায়বিচারের স্বার্থে আনা হয়নি অথবা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য রয়েছে। এটিই তাদের প্রধান যুক্তি হতে পারে।

চুক্তি সংশোধনের ফলে এখন অনুরোধকারী দেশকে প্রমাণ দেখানো বাধ্যতামূলক নয়—কেবল গ্রেপ্তারি পরোয়ানা পাঠালেই হবে। তারপরও অনুরোধ-প্রাপক দেশ আইনি খুঁত ধরে অনুরোধ নাকচ করার পূর্ণ অধিকার রাখে। তারা বলতে পারে, বিচার প্রক্রিয়ায় ন্যায্যতা নেই। চাইলে আরও বলতে পারে, অভিযোগগুলো সরল বিশ্বাসে আনা হয়নি। এ সবই ভারতের জন্য নিরাপদ পথ।

সুতরাং, আন্তর্জাতিক চাপ বাড়লেও বাস্তবতা হলো—ভারত শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশের হাতে তুলে দেবে, এমন সম্ভাবনা এখনো খুবই ক্ষীণ। দিল্লি নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করতে বাধ্য হবে ঠিকই, কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা প্রত্যর্পণ এড়ানোর পথই বেছে নেবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে।

জনপ্রিয় সংবাদ

শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণ প্রশ্নে ভারতের নীরবতা: রায় ঘোষণার পর কি বদলাবে অবস্থান?

আপডেট সময় ০৮:২৬:৫৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৫

বাংলাদেশে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডের রায় ঘোষণার পর আবারও আলোচনায় এসেছে—ভারতের কাছে পাঠানো প্রত্যর্পণ অনুরোধের ভবিষ্যৎ কী হবে। গত বছরের ডিসেম্বরে বাংলাদেশ সরকার দিল্লির কাছে ‘নোট ভার্বাল’ পাঠিয়ে তাকে ফেরত চেয়েছিল। ভারত পত্রটি প্রাপ্তির স্বীকৃতি দিলেও এরপর আর কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি। প্রায় এক বছর ধরে দিল্লি এ বিষয়ে সম্পূর্ণ নীরব।

তখন ভারতের অনানুষ্ঠানিক অবস্থান ছিল, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি অস্থির; শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলা刚 শুরু হয়েছে; ন্যায়বিচারের নিশ্চয়তা নেই—এমন যুক্তি দেখিয়েই তারা প্রতিক্রিয়া এড়িয়ে যায়। আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের ওপর হামলার ঘটনাও ভারতকে আরও সতর্ক করেছিল।

কিন্তু এখন প্রেক্ষাপট ভিন্ন। শেখ হাসিনা বাংলাদেশের আদালতে গণহত্যার মামলায় দণ্ডিত অপরাধী হিসেবে ঘোষিত। তাই আন্তর্জাতিকভাবে ভারতকে প্রশ্নের মুখে পড়তে হবে—একজন দণ্ডপ্রাপ্ত পলাতককে কেন আশ্রয় দিয়ে রাখা হয়েছে? এই চাপের মুখেই ভারতের এখন নীরব থাকা কঠিন হয়ে উঠতে পারে, এবং শিগগিরই তাদের অবস্থান ব্যাখ্যা করতে হতে পারে।

তবুও দিল্লির মৌলিক অবস্থান বদলাবে—এমন ইঙ্গিত নেই। কারণ দুই দেশের ২০১৩ সালের প্রত্যর্পণ চুক্তিতে বড় কিছু ধারা আছে, যেগুলো ভারত সহজেই ব্যবহার করতে পারে। চুক্তির একটি গুরুত্বপূর্ণ ধারা বলছে, কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ যদি ‘রাজনৈতিক প্রকৃতির’ হয়, তাহলে হস্তান্তর নাকচ করা যাবে। যদিও চুক্তিতে হত্যাকাণ্ড, গুম, সন্ত্রাসবাদ ইত্যাদি অপরাধকে রাজনৈতিক নয় বলে উল্লেখ আছে, ভারত চাইলে বলতে পারে—এই মামলা ন্যায়বিচারের স্বার্থে আনা হয়নি অথবা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য রয়েছে। এটিই তাদের প্রধান যুক্তি হতে পারে।

চুক্তি সংশোধনের ফলে এখন অনুরোধকারী দেশকে প্রমাণ দেখানো বাধ্যতামূলক নয়—কেবল গ্রেপ্তারি পরোয়ানা পাঠালেই হবে। তারপরও অনুরোধ-প্রাপক দেশ আইনি খুঁত ধরে অনুরোধ নাকচ করার পূর্ণ অধিকার রাখে। তারা বলতে পারে, বিচার প্রক্রিয়ায় ন্যায্যতা নেই। চাইলে আরও বলতে পারে, অভিযোগগুলো সরল বিশ্বাসে আনা হয়নি। এ সবই ভারতের জন্য নিরাপদ পথ।

সুতরাং, আন্তর্জাতিক চাপ বাড়লেও বাস্তবতা হলো—ভারত শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশের হাতে তুলে দেবে, এমন সম্ভাবনা এখনো খুবই ক্ষীণ। দিল্লি নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করতে বাধ্য হবে ঠিকই, কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা প্রত্যর্পণ এড়ানোর পথই বেছে নেবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে।