ঢাকা ০২:৫৩ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৫, ৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

রাতের ভোট বাস্তবায়নে একাই ৫০ কোটি নেন শহীদুল

  • ডেস্ক রিপোর্টঃ
  • আপডেট সময় ০৩:২৬:১৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৫
  • ৫৫২ বার পড়া হয়েছে

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ব্যাপক অনিয়ম, কারচুপি ও কেন্দ্র দখলের কারণে ‘রাতের ভোট’ নামে পরিচিতি পায়। এই বিতর্কিত নির্বাচন পরিচালনায় ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ (বর্তমানে নিষিদ্ধ) গঠন করেছিল প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকার বিশেষ তহবিল। আমার দেশ-এর অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, এই বিপুল অর্থ জোগাড় করা হয় দেশের বিভিন্ন ব্যাংক–বীমা প্রতিষ্ঠান থেকে চাঁদাবাজি, ভুয়া ঋণ এবং টেন্ডারবাণিজ্যের মাধ্যমে।

নির্বাচনের আগে এবং ভোটের দিন নিরাপত্তা বাহিনী, গোয়েন্দা সংস্থা ও প্রশাসনের নির্দিষ্ট কর্মকর্তাদের অনুগত রাখা এবং ভোট ডাকাতির কাজে ব্যবহারের জন্য তহবিলের বড় অংশ বিতরণ করা হয়। তবে সবচেয়ে আলোচিত বিষয়—এই ৮ হাজার কোটি টাকার মধ্য থেকে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা ব্যক্তিগতভাবে আত্মসাৎ করে চার শীর্ষ ব্যক্তি।

তদন্তে উঠে এসেছে, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছোট বোন শেখ রেহানা, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান (বর্তমানে কারাগারে), রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচটি ইমাম এবং এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলম মাসুদ এই অর্থ নিজেদের মাঝে ভাগ করে নেন। দেশের একটি শীর্ষ তদন্ত সংস্থার এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন—তবে গণমাধ্যমে কথা বলার অনুমতি না থাকায় নাম প্রকাশ করেননি।

অন্যদিকে পুলিশের এক তদন্ত কর্মকর্তা জানান, মোট সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা দেশে-বিদেশে নির্বাচন কারচুপির কাজে সরাসরি ব্যয় হয়। এই অর্থ চারটি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, দুটি গোয়েন্দা সংস্থা এবং প্রশাসনের বিভিন্ন ক্যাডারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মধ্যে ভাগ করা হয়।

অর্থ বণ্টনের নেটওয়ার্ক

নির্বাচন ঘিরে গড়ে ওঠে পুলিশের এক গোপন “অর্থ ডিস্ট্রিবিউশন টিম”—যারা কেন্দ্র থেকে সংগৃহীত অবৈধ অর্থ বিভিন্ন রেঞ্জ, ইউনিট এবং পুলিশের জেলা অফিসগুলোতে পৌঁছে দিত। এই নেটওয়ার্কে যুক্ত ছিলেন এলআইসি শাখার এআইজি আনজুমান কালাম, পুলিশ সুপার মীর আবু তৌহিদ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইশতিয়াক উর রশিদ, দেবাশীষ দাস ও নূরে আলম।

২০১৮ সালের ১৭ ডিসেম্বরের পর থেকে ৬৪ জেলার এসপি, রেঞ্জ ডিআইজি, র‍্যাবের প্রধান, আট মেট্রোপলিটন কমিশনারসহ সব ইউনিটপ্রধানকে ভোট ডাকাতির আগাম পুরস্কার হিসেবে বিপুল অঙ্কের টাকা পৌঁছে দেওয়া হয়।

র‍্যাবের সাবেক মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদও নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ১০০ কোটি টাকা নিয়েছিলেন বলে তদন্তে উঠে এসেছে।

কোন ইউনিট কত টাকা পেয়েছিল

ডিএমপি পায় ৫০ কোটি, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) ১৫ কোটি এবং অন্যান্য মেট্রোপলিটন ইউনিট ৭ কোটি টাকা।

এ ছাড়া শীর্ষ কর্মকর্তাদের মধ্যে—

  • এসবি’র অতিরিক্ত আইজি মীর শহীদুল ইসলাম: ৫০ কোটি

  • এপিবিএনের অতিরিক্ত আইজি সিদ্দিকুর রহমান: ১৫ কোটি

  • সিআইডির অতিরিক্ত আইজি শেখ হেমায়েত: ১০ কোটি

  • হাইওয়ে পুলিশের ডিআইজি আতিকুল ইসলাম: ১০ কোটি

  • রেলওয়ে পুলিশের অতিরিক্ত আইজি আবুল কাশেম: ৭ কোটি

  • টিঅ্যান্ডআইএম এর অতিরিক্ত আইজি ইকবাল বাহার: ১০ কোটি

  • পিবিআইয়ের ডিআইজি বনজ কুমার: ১০ কোটি

গোপন অর্থ পরিবহনে যুক্ত ছিলেন যারা

অবৈধ অর্থ বিতরণের গোটা নেটওয়ার্ক পরিচালনায় সহযোগিতা করেছেন—
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাবেক যুগ্ম সচিব হারুন-অর-রশিদ, উপসচিব ধনঞ্জয় কুমার দাস, পুলিশ সদর দপ্তরের সাবেক ডিআইজি হাবিবুর রহমান, সাবেক ডিসি (সিটিটিসি) প্রলয় কুমার জোয়ারদার, ঢাকা জেলার সাবেক পুলিশ সুপার শাহ মিজান এবং সাবেক পুলিশ সুপার মিলন মাহমুদ।

জনপ্রিয় সংবাদ

রাতের ভোট বাস্তবায়নে একাই ৫০ কোটি নেন শহীদুল

আপডেট সময় ০৩:২৬:১৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৫

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ব্যাপক অনিয়ম, কারচুপি ও কেন্দ্র দখলের কারণে ‘রাতের ভোট’ নামে পরিচিতি পায়। এই বিতর্কিত নির্বাচন পরিচালনায় ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ (বর্তমানে নিষিদ্ধ) গঠন করেছিল প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকার বিশেষ তহবিল। আমার দেশ-এর অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, এই বিপুল অর্থ জোগাড় করা হয় দেশের বিভিন্ন ব্যাংক–বীমা প্রতিষ্ঠান থেকে চাঁদাবাজি, ভুয়া ঋণ এবং টেন্ডারবাণিজ্যের মাধ্যমে।

নির্বাচনের আগে এবং ভোটের দিন নিরাপত্তা বাহিনী, গোয়েন্দা সংস্থা ও প্রশাসনের নির্দিষ্ট কর্মকর্তাদের অনুগত রাখা এবং ভোট ডাকাতির কাজে ব্যবহারের জন্য তহবিলের বড় অংশ বিতরণ করা হয়। তবে সবচেয়ে আলোচিত বিষয়—এই ৮ হাজার কোটি টাকার মধ্য থেকে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা ব্যক্তিগতভাবে আত্মসাৎ করে চার শীর্ষ ব্যক্তি।

তদন্তে উঠে এসেছে, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছোট বোন শেখ রেহানা, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান (বর্তমানে কারাগারে), রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচটি ইমাম এবং এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলম মাসুদ এই অর্থ নিজেদের মাঝে ভাগ করে নেন। দেশের একটি শীর্ষ তদন্ত সংস্থার এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন—তবে গণমাধ্যমে কথা বলার অনুমতি না থাকায় নাম প্রকাশ করেননি।

অন্যদিকে পুলিশের এক তদন্ত কর্মকর্তা জানান, মোট সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা দেশে-বিদেশে নির্বাচন কারচুপির কাজে সরাসরি ব্যয় হয়। এই অর্থ চারটি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, দুটি গোয়েন্দা সংস্থা এবং প্রশাসনের বিভিন্ন ক্যাডারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মধ্যে ভাগ করা হয়।

অর্থ বণ্টনের নেটওয়ার্ক

নির্বাচন ঘিরে গড়ে ওঠে পুলিশের এক গোপন “অর্থ ডিস্ট্রিবিউশন টিম”—যারা কেন্দ্র থেকে সংগৃহীত অবৈধ অর্থ বিভিন্ন রেঞ্জ, ইউনিট এবং পুলিশের জেলা অফিসগুলোতে পৌঁছে দিত। এই নেটওয়ার্কে যুক্ত ছিলেন এলআইসি শাখার এআইজি আনজুমান কালাম, পুলিশ সুপার মীর আবু তৌহিদ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইশতিয়াক উর রশিদ, দেবাশীষ দাস ও নূরে আলম।

২০১৮ সালের ১৭ ডিসেম্বরের পর থেকে ৬৪ জেলার এসপি, রেঞ্জ ডিআইজি, র‍্যাবের প্রধান, আট মেট্রোপলিটন কমিশনারসহ সব ইউনিটপ্রধানকে ভোট ডাকাতির আগাম পুরস্কার হিসেবে বিপুল অঙ্কের টাকা পৌঁছে দেওয়া হয়।

র‍্যাবের সাবেক মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদও নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ১০০ কোটি টাকা নিয়েছিলেন বলে তদন্তে উঠে এসেছে।

কোন ইউনিট কত টাকা পেয়েছিল

ডিএমপি পায় ৫০ কোটি, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) ১৫ কোটি এবং অন্যান্য মেট্রোপলিটন ইউনিট ৭ কোটি টাকা।

এ ছাড়া শীর্ষ কর্মকর্তাদের মধ্যে—

  • এসবি’র অতিরিক্ত আইজি মীর শহীদুল ইসলাম: ৫০ কোটি

  • এপিবিএনের অতিরিক্ত আইজি সিদ্দিকুর রহমান: ১৫ কোটি

  • সিআইডির অতিরিক্ত আইজি শেখ হেমায়েত: ১০ কোটি

  • হাইওয়ে পুলিশের ডিআইজি আতিকুল ইসলাম: ১০ কোটি

  • রেলওয়ে পুলিশের অতিরিক্ত আইজি আবুল কাশেম: ৭ কোটি

  • টিঅ্যান্ডআইএম এর অতিরিক্ত আইজি ইকবাল বাহার: ১০ কোটি

  • পিবিআইয়ের ডিআইজি বনজ কুমার: ১০ কোটি

গোপন অর্থ পরিবহনে যুক্ত ছিলেন যারা

অবৈধ অর্থ বিতরণের গোটা নেটওয়ার্ক পরিচালনায় সহযোগিতা করেছেন—
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাবেক যুগ্ম সচিব হারুন-অর-রশিদ, উপসচিব ধনঞ্জয় কুমার দাস, পুলিশ সদর দপ্তরের সাবেক ডিআইজি হাবিবুর রহমান, সাবেক ডিসি (সিটিটিসি) প্রলয় কুমার জোয়ারদার, ঢাকা জেলার সাবেক পুলিশ সুপার শাহ মিজান এবং সাবেক পুলিশ সুপার মিলন মাহমুদ।