ঢাকা ০৫:৪১ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ৩০ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

আগামী সরকারের জন্য ২৮০ গাড়ি কেনার উদ্যোগে বিতর্ক

  • ডেস্ক রিপোর্টঃ
  • আপডেট সময় ১১:৩৫:৪৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • ৫৬১ বার পড়া হয়েছে

অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদে আগামী নির্বাচিত সরকারের মন্ত্রিসভা ও নির্বাচনী দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদের জন্য মোট ২৮০টি নতুন গাড়ি কেনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৬০টি মিতসুবিশি পাজেরো জিপ থাকবে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের জন্য, আর বাকি ২২০টি গাড়ি কেনা হবে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে দায়িত্ব পালনকারী কর্মকর্তাদের জন্য। সব মিলিয়ে ব্যয় হবে প্রায় ৪৪৫ কোটি টাকা।

ব্যয়সাশ্রয়ী নীতি উপেক্ষা

গত ৮ জুলাই জারি করা অর্থ মন্ত্রণালয়ের পরিপত্রে বলা হয়েছিল, চলতি অর্থবছরে নতুন কোনো যানবাহন কেনা যাবে না। শুধুমাত্র ১০ বছরের বেশি পুরোনো গাড়ি অচল হলে অনুমোদন সাপেক্ষে প্রতিস্থাপন করা যাবে। অথচ বিদ্যমান মন্ত্রীদের গাড়িগুলো ৯ বছরের পুরোনো—যা পরিপত্রের শর্ত লঙ্ঘন করছে।

মন্ত্রিসভার আকার নিয়ে প্রশ্ন

জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী নতুন সরকারের মন্ত্রিসভায় সর্বোচ্চ ৩৫ জন (২৩ মন্ত্রী ও ১২ প্রতিমন্ত্রী) রাখার কথা বলা হলেও কেন ৬০টি গাড়ি কেনা হচ্ছে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

টিআইবির সমালোচনা

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেছেন, “পরবর্তী সরকারের জন্য গাড়ি কেনার সিদ্ধান্ত অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নয়। এটি তাদের ‘ম্যান্ডেট’-এর বাইরে। অনতিবিলম্বে এ সিদ্ধান্ত বাতিল করা উচিত।”

খরচের হিসাব

  • প্রতিটি মিতসুবিশি পাজেরো কিউএক্স-২৪২৭ সিসি গাড়ির দাম: ১ কোটি ৬৯ লাখ টাকা

  • মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের জন্য ৬০টি গাড়ি: ১০১ কোটি ৬১ লাখ টাকা

  • জেলা-উপজেলা পর্যায়ের জন্য ২২০টি গাড়ি (১৯৫টি জিপ ও ২৫টি মাইক্রোবাস): ৩৪৩ কোটি ২৩ লাখ টাকা

  • মোট ব্যয়: ৪৪৪ কোটি ৮৪ লাখ টাকা

আইনগত সীমাবদ্ধতা

১৯৭৩ সালের মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের সুবিধা-সংক্রান্ত আইনে বলা আছে, তাদের জন্য সরকারি কার (সেডান) বরাদ্দ থাকবে। জরুরি প্রয়োজনে অতিরিক্ত একটি জিপ ব্যবহার করতে পারবেন। কিন্তু আইন সংশোধন ছাড়াই শুধু জিপ গাড়ি কেনার পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার।

অর্থ বিভাগের শর্ত

অর্থ মন্ত্রণালয় সম্মতি দিলেও শর্ত দিয়েছে যে–

  • কেনা গাড়িগুলো প্রাধিকারভুক্ত হতে হবে,

  • পুরোনো গাড়ি অকেজো ঘোষণার বিআরটিএর প্রতিবেদন জমা দিতে হবে,

  • ক্রয় প্রক্রিয়ায় পাবলিক প্রকিউরমেন্ট আইন ও বিধিমালা মেনে চলতে হবে।

সরকারি খাতে কৃচ্ছ্রসাধনের নীতি চলমান থাকলেও প্রায় সাড়ে চার শ কোটি টাকার গাড়ি কেনার এই উদ্যোগ এখন রাজনৈতিক বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে।

জনপ্রিয় সংবাদ

পাকিস্তানে ১৯ সেনা নিহত হওয়ার পর কঠোর হুঁশিয়ারি দিলেন শাহবাজ শরিফ

আগামী সরকারের জন্য ২৮০ গাড়ি কেনার উদ্যোগে বিতর্ক

আপডেট সময় ১১:৩৫:৪৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫

অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদে আগামী নির্বাচিত সরকারের মন্ত্রিসভা ও নির্বাচনী দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদের জন্য মোট ২৮০টি নতুন গাড়ি কেনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৬০টি মিতসুবিশি পাজেরো জিপ থাকবে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের জন্য, আর বাকি ২২০টি গাড়ি কেনা হবে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে দায়িত্ব পালনকারী কর্মকর্তাদের জন্য। সব মিলিয়ে ব্যয় হবে প্রায় ৪৪৫ কোটি টাকা।

ব্যয়সাশ্রয়ী নীতি উপেক্ষা

গত ৮ জুলাই জারি করা অর্থ মন্ত্রণালয়ের পরিপত্রে বলা হয়েছিল, চলতি অর্থবছরে নতুন কোনো যানবাহন কেনা যাবে না। শুধুমাত্র ১০ বছরের বেশি পুরোনো গাড়ি অচল হলে অনুমোদন সাপেক্ষে প্রতিস্থাপন করা যাবে। অথচ বিদ্যমান মন্ত্রীদের গাড়িগুলো ৯ বছরের পুরোনো—যা পরিপত্রের শর্ত লঙ্ঘন করছে।

মন্ত্রিসভার আকার নিয়ে প্রশ্ন

জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী নতুন সরকারের মন্ত্রিসভায় সর্বোচ্চ ৩৫ জন (২৩ মন্ত্রী ও ১২ প্রতিমন্ত্রী) রাখার কথা বলা হলেও কেন ৬০টি গাড়ি কেনা হচ্ছে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

টিআইবির সমালোচনা

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেছেন, “পরবর্তী সরকারের জন্য গাড়ি কেনার সিদ্ধান্ত অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নয়। এটি তাদের ‘ম্যান্ডেট’-এর বাইরে। অনতিবিলম্বে এ সিদ্ধান্ত বাতিল করা উচিত।”

খরচের হিসাব

  • প্রতিটি মিতসুবিশি পাজেরো কিউএক্স-২৪২৭ সিসি গাড়ির দাম: ১ কোটি ৬৯ লাখ টাকা

  • মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের জন্য ৬০টি গাড়ি: ১০১ কোটি ৬১ লাখ টাকা

  • জেলা-উপজেলা পর্যায়ের জন্য ২২০টি গাড়ি (১৯৫টি জিপ ও ২৫টি মাইক্রোবাস): ৩৪৩ কোটি ২৩ লাখ টাকা

  • মোট ব্যয়: ৪৪৪ কোটি ৮৪ লাখ টাকা

আইনগত সীমাবদ্ধতা

১৯৭৩ সালের মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের সুবিধা-সংক্রান্ত আইনে বলা আছে, তাদের জন্য সরকারি কার (সেডান) বরাদ্দ থাকবে। জরুরি প্রয়োজনে অতিরিক্ত একটি জিপ ব্যবহার করতে পারবেন। কিন্তু আইন সংশোধন ছাড়াই শুধু জিপ গাড়ি কেনার পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার।

অর্থ বিভাগের শর্ত

অর্থ মন্ত্রণালয় সম্মতি দিলেও শর্ত দিয়েছে যে–

  • কেনা গাড়িগুলো প্রাধিকারভুক্ত হতে হবে,

  • পুরোনো গাড়ি অকেজো ঘোষণার বিআরটিএর প্রতিবেদন জমা দিতে হবে,

  • ক্রয় প্রক্রিয়ায় পাবলিক প্রকিউরমেন্ট আইন ও বিধিমালা মেনে চলতে হবে।

সরকারি খাতে কৃচ্ছ্রসাধনের নীতি চলমান থাকলেও প্রায় সাড়ে চার শ কোটি টাকার গাড়ি কেনার এই উদ্যোগ এখন রাজনৈতিক বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে।