ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে কাজ করতে যাওয়া পশ্চিমবঙ্গের বাঙালি শ্রমিকরা এখন বাংলা ভাষায় কথা বলতেও ভয় পাচ্ছেন। কারণ, বাংলা বললেই তাদের সন্দেহ করা হচ্ছে ‘বাংলাদেশি’ হিসেবে। এমনই ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছে ভারতের প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম দ্য টেলিগ্রাফ ইন্ডিয়া, বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে।
পশ্চিমবঙ্গের উত্তর দিনাজপুর জেলার মোজাহের শেখ জানান, তাদের এলাকার প্রায় ২৫০ জন শ্রমিক রাজস্থানে কাজ করেন। সম্প্রতি পুলিশ শুধু বাংলা ভাষায় কথা বলার কারণে তাদের ৯ ঘণ্টা আটক রেখে জিজ্ঞাসাবাদ করে।
“আমরা নিজেদের মধ্যে এখন হিন্দিতে কথা বলি”
মোজাহের বলেন, “মঙ্গলবার আমাদের আটক করা হয়। পুলিশ আমাদের নিয়ে যায় একটি কমিউনিটি হলে—অম্বেদকর ভবনে। সেখানে জিজ্ঞাসাবাদ চলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। কারণ একটাই—আমরা বাংলা ভাষায় কথা বলছিলাম।”
তিনি আরও বলেন, “এরপর থেকেই আমরা হিন্দিতে কথা বলা শুরু করেছি। নিজেদের মধ্যে বাংলায় কথা বলতেও ভয় পাচ্ছি। যাতে কেউ না ভাবে আমরা বাংলাদেশি।”
এই অভিজ্ঞতা শুধু মোজাহেরদের নয়—পুরো উত্তর দিনাজপুর জেলার বহু গরিব বাঙালি শ্রমিক এখন একই আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন।
ভাষার ভিত্তিতে পরিচয় সংকট: ‘বাঙালি’ মানেই বাংলাদেশি?
বিশ্লেষকদের মতে, ভারতের অভ্যন্তরে জাতিগত ও ভাষাগত বৈচিত্র্য থাকলেও হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির উত্থানের পর থেকে বাংলা ভাষা ও মুসলিম পরিচয়ের সঙ্গে ‘বিদেশি’ তকমা জুড়ে দেওয়ার একটি প্রবণতা তৈরি হয়েছে।
মানবাধিকারকর্মীরা বলছেন, ভাষার ভিত্তিতে বৈষম্য করা ভারতীয় সংবিধানের মৌলিক অধিকারের পরিপন্থী। এই প্রবণতা বাড়তে থাকলে শুধু বাঙালি মুসলমান নয়, হিন্দু বাঙালিরাও সন্দেহের শিকার হতে পারেন।
চরম নিরাপত্তাহীনতা ও আত্মপরিচয়ের সংকট
রাজস্থানে কর্মরত একাধিক শ্রমিক জানিয়েছেন, এখন তারা কাজে যাবার সময় জাতীয় পরিচয়পত্র ও ভোটার কার্ড সঙ্গে রাখছেন। এক শ্রমিক বলেন, “আমরা যে ভারতীয়, সেটা প্রমাণ করেই কাজে ঢুকতে হয়। যেন বাংলা বলার আগেই পরিচয়পত্র দেখিয়ে নিতে হয়।”
এই ঘটনাগুলো ভারতের মধ্যে চলমান ভাষাভিত্তিক বৈষম্য এবং ধর্ম-ভিত্তিক প্রোফাইলিং-এর ভয়াবহ বাস্তব চিত্র তুলে ধরছে।
সূত্র: দ্য টেলিগ্রাফ ইন্ডিয়া