ঢাকার সাভার উপজেলার সাদা–কালো এক জীবন্ত ট্র্যাজেডির নাম হয়ে উঠেছেন উম্মে সাহেদীনা টুনি (৩৫)। স্বামীর প্রাণ বাঁচাতে নিজের একটি কিডনি দান করেছিলেন তিনি, অথচ সুস্থ হয়ে ওঠার পর সেই স্বামী মোহাম্মদ তারেক অনলাইন জুয়া ও পরকীয়ায় জড়িয়ে টুনিকেই ঘরছাড়া করেছেন। অমানবিক নির্যাতনের দায়ে স্বামীর বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেছেন এই কিডনি দাতা স্ত্রী।
২০০৬ সালে পারিবারিকভাবে তারেক–টুনির বিয়ে। পরের বছর তাঁদের কোলজুড়ে আসে একটি পুত্রসন্তান। সুখের গল্প বদলে যায় ২০০৮ সালে, যখন ধরা পড়ে তারেকের দুটি কিডনিই অচল। চিকিৎসকের পরামর্শে ডায়ালাইসিস শুরু হয়; উন্নত চিকিৎসার আশায় টুনি স্বামীর হাত ধরে পাড়ি জমান ভারতে। কয়েক বছর চিকিৎসা–দৌড়ঝাঁপের পর দিল্লির অ্যাপোলো হাসপাতালে ২০১৯ সালের ২৬ অক্টোবর সফল কিডনি প্রতিস্থাপন হয়—দাতা কেউ নন, টুনি নিজেই। স্বামীর চিকিৎসা খরচ মেটাতে তিনি নিজ বাড়িতে চালু করেন বিউটি পার্লার ও বুটিক, মাসে রোজগার করেন ৪০–৫০ হাজার টাকা। সেই আয়, জমানো সঞ্চয় আর গয়না বিক্রি—সবটাই ঢেলে দেন স্বামীর সুস্থতায়।
কিন্তু নতুন কিডনি পেয়ে তারেকের মনের বদল যেন আরও নির্মম। চিকিৎসাপরবর্তী সময়ে তিনি অনলাইন জুয়া আর তাহমিনা নামে এক ডিভোর্সি নারীর সঙ্গে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়েন। শুরু হয় টুনির ওপর চাপ—উপার্জিত সব টাকা দিতে হবে, শ্বশুরবাড়ি থেকেও আনতে হবে অর্থ। প্রতিবাদ করলেই চলে লাঞ্ছনা, শারীরিক নির্যাতন। একপর্যায়ে তাঁকে বাড়ি থেকে বের করে দেন তারেক; নিজে থাকেন প্রেমিকার সঙ্গে।
নির্যাতন সইতে না পেরে টুনি ২ ফেব্রুয়ারি সাভার মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন। তারেক মুচলেকা দিয়ে অভিযোগ তুলে নিলেও অত্যাচার থামেনি। শেষমেশ ২২ এপ্রিল টুনি আদালতে যৌতুক ও নারী নির্যাতনের মামলা দায়ের করেন। পুলিশ তারেককে গ্রেপ্তার করলেও তিনি এখন জামিনে মুক্ত এবং পলাতক।
টুনির মা আক্ষেপ করে বলেন, “আমার পেনশনের সব টাকা ওর চিকিৎসায় খরচ করেছি, আজ সেই ছেলে আমার মেয়েকেই তাড়িয়ে দিল।” পরিবারের দাবি, আদালত যেন ন্যায্য বিচার নিশ্চিত করে—যাতে আর কোনো নারীর জীবন এভাবে ছিন্নভিন্ন না হয়।