বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক মুখপাত্র উমামা ফাতেমা সম্প্রতি তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে ‘জুলাই অভ্যুত্থান’ প্রসঙ্গে এক আবেগঘন ও গভীর রাজনৈতিক বিশ্লেষণ তুলে ধরেছেন। সেখানে তিনি বলেন, “জুলাই একটি সামষ্টিক অভ্যুত্থান ছিল, যেখানে ব্যক্তির অবদান নয়, বরং সমষ্টিগত চেতনা ছিল মুখ্য।”
উমামা প্রশ্ন তুলেছেন, “যে রিকশাওয়ালা নাফিজের রক্তাক্ত দেহ টানলেন, তার অবদান কি কোনো পাল্লায় মাপা যায়?” তিনি বলেন, ৫ আগস্টের পর আন্দোলনে ব্যক্তিগত অবদানকে ঘিরে এক ধরনের প্রতিযোগিতা তৈরি হয়েছে। অথচ আন্দোলনের সময় অনেকেই সামনে না এসে, নীরবে-নিভৃতেই সর্বোচ্চটা দিয়ে পাশে থেকেছেন।
তিনি আরও তুলে ধরেন কিছু বাস্তব উদাহরণ:
একজন চাকরিজীবী বাবা, যিনি গুলির ভয়াবহতা দেখে নিজে না এলেও আহতদের জন্য রক্ত জোগাড় করেছেন, অর্থ পাঠিয়েছেন, ফোনে রিচার্জ করে আন্দোলনকারীদের পাশে থেকেছেন।
একজন গৃহিণী, যিনি প্রতিদিন রান্না করে খাবার পৌঁছে দিয়েছেন মিছিলের মাঝে।
একজন সাধারণ আঙ্কেল, যিনি মিরপুর থেকে পানি বিতরণ করতে এসেছিলেন শাহবাগে, হিটস্ট্রোক করেছেন, তবু অন্যদের রক্ষা করেছেন।
উমামা বলেন, “তারা যদি আমাদের জায়গায় থাকতেন, তারাও আমাদের মতোই করতেন। তাই অবদানের প্রশ্নটি তোলাটাই অন্যায়।” তিনি সতর্ক করেন, “অবদানের প্রশ্ন তখনই উঠে যখন কেউ আন্দোলনের রাজনৈতিক ফায়দা নিতে চায়।”
উমামা আরও বলেন, আন্দোলনে ত্যাগ-তিতিক্ষা ও অবদানের স্বীকৃতি অনেক সময় ক্ষমতার ঘনিষ্ঠতার ভিত্তিতে নির্ধারিত হয়। “যে ক্ষমতার যত কাছাকাছি, সে তত ত্যাগী ধরে নেওয়া হয়। অথচ প্রকৃত আন্দোলনকারীদের একটি বড় অংশ সবসময়ই থাকে নামহীন ও প্রচারের বাইরে।”
শেষে তিনি আহ্বান জানান, ভবিষ্যতের আন্দোলনে নামার আগে যেন কেউ অবদানের সার্টিফিকেট খুঁজে না ফেরে, বরং নিজের জায়গা থেকে দায়িত্ব পালন করাটাই হোক সবার চেতনা।