বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় যাত্রাবাড়ীতে কিশোর আব্দুল কাইয়ূম আহাদ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হককে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত। বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. ছানাউল্যাহ এই আদেশ দেন।
সন্ধ্যা ৭টা ৪৫ মিনিটে পুলিশের কঠোর নিরাপত্তায় খায়রুল হককে আদালতে হাজির করা হয়। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা যাত্রাবাড়ী থানার পরিদর্শক খালেদ হাসান তাকে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন। আবেদনে উল্লেখ করা হয়, তিনি সাবেক প্রধান বিচারপতি হিসেবে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে প্রতারণা ও রাষ্ট্রদ্রোহিতার মতো অপরাধে যুক্ত ছিলেন। এছাড়া তার বিরুদ্ধে নারায়ণগঞ্জসহ বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। একজন প্রভাবশালী ব্যক্তি হওয়ায় জামিনে মুক্তি পেলে মামলার তদন্তে বিঘ্ন ঘটতে পারে বলে জানায় পুলিশ।
আদালতে খায়রুল হকের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেন বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা। তাঁকে ‘শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদের কারিগর’ আখ্যা দিয়ে বলেন, এই বিচারপতির হাতেই তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল হয়েছে, যার ফলশ্রুতিতে দেশে একতরফা নির্বাচন ও দমন-পীড়নের পথ উন্মুক্ত হয়। আইনজীবীরা আরও অভিযোগ করেন, তাঁর সিদ্ধান্তে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে দুর্নীতির সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।
অতিরিক্ত পিপি আজিজুল হক দিদার বলেন, খায়রুল হক ছিলেন ‘হাসিনার কৃতদাস’। তিনি বিচার বিভাগ ধ্বংস করে দিয়েছেন। আইনের শাসনের কারণেই তাকে গণপিটুনির পরিবর্তে আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
আদালত চলাকালীন সময় খায়রুল হক ছিলেন একেবারেই নীরব। পুরো শুনানিতে মাথা নিচু করে কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে ছিলেন তিনি। কোনো বক্তব্য দেননি। তার চোখেমুখে ক্লান্তি ও চাপ স্পষ্ট ছিল।
বিচারক বলেন, মানুষের প্রতি শ্রদ্ধা তার কর্ম দিয়ে অর্জিত হয়। যারা দায়িত্বে ছিলেন, তাদের কাজ দেখে মানুষ এখন বিচার ব্যবস্থার ওপর আস্থা হারাচ্ছে। সবাইকে কর্মের ফল ভোগ করতে হয়। এরপর রাত ৮টা ৩৬ মিনিটে বিচারক এজলাস ত্যাগ করেন।
শুনানি শেষে আদালত চত্বরে বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা সাবেক প্রধান বিচারপতির ফাঁসি দাবিতে স্লোগান দেন। ‘এই কুখ্যাত বিচারকের একমাত্র শাস্তি ফাঁসি’—এমন বক্তব্যে আদালত এলাকা মুখরিত হয়ে ওঠে।
এর আগে বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে ধানমন্ডির বাসা থেকে খায়রুল হককে গ্রেপ্তার করে ডিবি পুলিশ। মামলার এজাহার অনুযায়ী, ১৮ জুলাই বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় যাত্রাবাড়ীতে পুলিশ বক্সের সামনে গুলিতে নিহত হন কিশোর আব্দুল কাইয়ূম আহাদ। তার বাবা আলাউদ্দিন ৪৬৭ জনকে নাম উল্লেখ করে এবং আরও ১ থেকে ২ হাজার জনকে অজ্ঞাত আসামি করে হত্যা মামলা করেন।