ঢাকা ০১:৫৪ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৯ অক্টোবর ২০২৫, ২৩ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

পাহাড়ে সেনা মোতায়েন নিয়ে দ্বিচারিতা: ভারত-চীনের বাস্তবতা, বাংলাদেশের প্রশ্ন

  • ডেস্ক রিপোর্টঃ
  • আপডেট সময় ১১:০৩:৩৪ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৩ অক্টোবর ২০২৫
  • ৫৮৮ বার পড়া হয়েছে

ভারতের প্রতিটি পাহাড়ে সেনাদের দাপট স্পষ্ট। কাশ্মীর, লাদাখ, নাগাল্যান্ড, আসাম কিংবা মণিপুর—যেখানেই যান, চোখে পড়বে সেনা ক্যাম্প, বাঙ্কার আর চেকপোস্ট। শুধু কাশ্মীরেই অবস্থান করছে সাত লাখ সেনা। ভারত নিজেদের নিরাপত্তার স্বার্থে পাহাড়ে সেনা রেখে বিচ্ছিন্নতাবাদ দমন করছে, অথচ বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনা মোতায়েন নিয়ে বারবার প্রশ্ন তোলে তারা। নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মতে, এটি ভারতের কূটনৈতিক দ্বিচারিতা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. শাহীদুজ্জামান বলেন, ভারত নিজ দেশে দমননীতি চালালেও বাংলাদেশের পাহাড়ে সেনা উপস্থিতি নিয়ে সমালোচনা করে। এর পেছনে রাজনৈতিক স্বার্থ ও কূটনৈতিক চক্রান্ত রয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দর ও ট্রানজিট রুটে প্রভাব বিস্তারের জন্য তারা পাহাড়কে অস্থিতিশীল রাখতে চায়।

১৯৯৭ সালের পার্বত্য শান্তিচুক্তির পর পাহাড়ে সেনা ক্যাম্প কমিয়ে আনা হয়। এরপর ইউপিডিএফসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী গোষ্ঠী মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী, এসব গোষ্ঠীর মিজোরামে প্রশিক্ষণ ক্যাম্প রয়েছে। ভারত থেকেই তারা অস্ত্র ও প্রশিক্ষণ নিয়ে বাংলাদেশে হামলা চালাচ্ছে। খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানের সেনা কর্মকর্তারা বলছেন, নতুন ক্যাম্প ছাড়া সীমান্ত অনুপ্রবেশ ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড রোধ সম্ভব নয়।

স্থানীয় ব্যবসায়ী, কৃষক ও শিক্ষার্থীরা মনে করেন, সেনা উপস্থিতি থাকলেই তারা নিরাপদে কাজ ও পড়াশোনা করতে পারেন। সেনা না থাকলে সন্ত্রাসীদের চাঁদাবাজি ও ভয়ভীতি বেড়ে যায়।

বিশ্বের অন্যান্য পাহাড়ি দেশেও সেনা উপস্থিতি স্বাভাবিক বিষয়। চীন তিব্বত ও শিনজিয়াং অঞ্চলে সীমান্ত রক্ষায় শক্তিশালী সেনা মোতায়েন করেছে। পাকিস্তান গিলগিত-বালতিস্তানে কৌশলগত কারণে সেনা রাখছে। নেপালও হিমালয় এলাকায় সশস্ত্র বাহিনী ব্যবহার করছে অপরাধ ও অনুপ্রবেশ ঠেকাতে।

খাগড়াছড়িতে সম্প্রতি কিশোরী ধর্ষণের অভিযোগকে ঘিরে উত্তেজনা সৃষ্টি হলেও মেডিকেল রিপোর্টে কোনো প্রমাণ মেলেনি। গোয়েন্দা সংস্থার দাবি, এটি ছিল ইউপিডিএফের সাজানো নাটক, যাতে সেনা হটাও আন্দোলন উসকে দেওয়া যায়। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লে. জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর মতে, প্রতিবেশী রাষ্ট্রের ইন্ধনে এ ধরনের ষড়যন্ত্র চলছে।

নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পাহাড়ে সেনা ছাড়া স্থায়ী শান্তি কল্পনাও করা যায় না। ভারত নিজ পাহাড়ে সেনা রেখে প্রতিদিন দমননীতি চালালেও বাংলাদেশের ক্ষেত্রে মানবাধিকার ইস্যু তোলা নিছক ভণ্ডামি।

জনপ্রিয় সংবাদ

পাহাড়ে সেনা মোতায়েন নিয়ে দ্বিচারিতা: ভারত-চীনের বাস্তবতা, বাংলাদেশের প্রশ্ন

আপডেট সময় ১১:০৩:৩৪ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৩ অক্টোবর ২০২৫

ভারতের প্রতিটি পাহাড়ে সেনাদের দাপট স্পষ্ট। কাশ্মীর, লাদাখ, নাগাল্যান্ড, আসাম কিংবা মণিপুর—যেখানেই যান, চোখে পড়বে সেনা ক্যাম্প, বাঙ্কার আর চেকপোস্ট। শুধু কাশ্মীরেই অবস্থান করছে সাত লাখ সেনা। ভারত নিজেদের নিরাপত্তার স্বার্থে পাহাড়ে সেনা রেখে বিচ্ছিন্নতাবাদ দমন করছে, অথচ বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনা মোতায়েন নিয়ে বারবার প্রশ্ন তোলে তারা। নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মতে, এটি ভারতের কূটনৈতিক দ্বিচারিতা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. শাহীদুজ্জামান বলেন, ভারত নিজ দেশে দমননীতি চালালেও বাংলাদেশের পাহাড়ে সেনা উপস্থিতি নিয়ে সমালোচনা করে। এর পেছনে রাজনৈতিক স্বার্থ ও কূটনৈতিক চক্রান্ত রয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দর ও ট্রানজিট রুটে প্রভাব বিস্তারের জন্য তারা পাহাড়কে অস্থিতিশীল রাখতে চায়।

১৯৯৭ সালের পার্বত্য শান্তিচুক্তির পর পাহাড়ে সেনা ক্যাম্প কমিয়ে আনা হয়। এরপর ইউপিডিএফসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী গোষ্ঠী মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী, এসব গোষ্ঠীর মিজোরামে প্রশিক্ষণ ক্যাম্প রয়েছে। ভারত থেকেই তারা অস্ত্র ও প্রশিক্ষণ নিয়ে বাংলাদেশে হামলা চালাচ্ছে। খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানের সেনা কর্মকর্তারা বলছেন, নতুন ক্যাম্প ছাড়া সীমান্ত অনুপ্রবেশ ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড রোধ সম্ভব নয়।

স্থানীয় ব্যবসায়ী, কৃষক ও শিক্ষার্থীরা মনে করেন, সেনা উপস্থিতি থাকলেই তারা নিরাপদে কাজ ও পড়াশোনা করতে পারেন। সেনা না থাকলে সন্ত্রাসীদের চাঁদাবাজি ও ভয়ভীতি বেড়ে যায়।

বিশ্বের অন্যান্য পাহাড়ি দেশেও সেনা উপস্থিতি স্বাভাবিক বিষয়। চীন তিব্বত ও শিনজিয়াং অঞ্চলে সীমান্ত রক্ষায় শক্তিশালী সেনা মোতায়েন করেছে। পাকিস্তান গিলগিত-বালতিস্তানে কৌশলগত কারণে সেনা রাখছে। নেপালও হিমালয় এলাকায় সশস্ত্র বাহিনী ব্যবহার করছে অপরাধ ও অনুপ্রবেশ ঠেকাতে।

খাগড়াছড়িতে সম্প্রতি কিশোরী ধর্ষণের অভিযোগকে ঘিরে উত্তেজনা সৃষ্টি হলেও মেডিকেল রিপোর্টে কোনো প্রমাণ মেলেনি। গোয়েন্দা সংস্থার দাবি, এটি ছিল ইউপিডিএফের সাজানো নাটক, যাতে সেনা হটাও আন্দোলন উসকে দেওয়া যায়। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লে. জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর মতে, প্রতিবেশী রাষ্ট্রের ইন্ধনে এ ধরনের ষড়যন্ত্র চলছে।

নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পাহাড়ে সেনা ছাড়া স্থায়ী শান্তি কল্পনাও করা যায় না। ভারত নিজ পাহাড়ে সেনা রেখে প্রতিদিন দমননীতি চালালেও বাংলাদেশের ক্ষেত্রে মানবাধিকার ইস্যু তোলা নিছক ভণ্ডামি।