এবার বাজারে কেনাকাটা শেষে ফেরার পথে এক নারীকে থামিয়ে জিজ্ঞাসা করা হলো, ‘এবার কাকে ভোট দেবেন?’ তিনি উত্তর দিলেন, ‘জামায়াতে ইসলামীকে ভোট দেব’ এই কথোপকথনের ভিডিও ক্লিপটি দেখে মনে হবে তিনি একজন মধ্যবিত্ত হিন্দু নারী—সিঁথির সিঁদুর, পোশাক-আশাক এবং আত্মবিশ্বাসী ভঙ্গিই তা ইঙ্গিত করে। কিন্তু আসল সত্য হলো: এই নারী, এমনকি সাক্ষাৎকার গ্রহণকারীও—কেউই বাস্তব নন। পুরোটাই আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) জেনারেটেড সিনথেটিক কন্টেন্ট।
আরেকটি ভিডিওতে দেখা যায়, একজন ক্লান্ত রিকশাচালককে একই ধরনের সাংবাদিক জিজ্ঞাসাবাদ করছেন। কঠোর পরিশ্রমে জরাজীর্ণ এই বয়স্ক ব্যক্তি দৃঢ়ভাবে জানান, এবার তিনি ভোট দিচ্ছেন ‘দাড়ি-পাল্লা’ (জামায়াতের নির্বাচনী প্রতীক)-কে, কারণ তিনি চান ন্যায়বিচার ও সততা।
প্রথম নজরে, এই ভিডিওগুলো মনে হয় সমাজের বিভিন্ন শ্রেণী, ধর্ম ও পেশার মানুষের মতামতের প্রতিনিধিত্ব করছে। কিন্তু সমস্যা হলো—এই ভিডিওগুলোর কোনো মানুষই বাস্তব নয়। প্রতিটি মুখ, কণ্ঠ, পটভূমি—সবই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) দিয়ে তৈরি। ২০২৫ সালের জুনের মাঝামাঝি থেকে ফেসবুক ফিডে এমন অসংখ্য ভিডিও দেখা যাচ্ছে, যেখানে ব্যবহারকারীদের জামায়াতে ইসলামীকে ভোট দেয়ার আহ্বান জানানো হচ্ছে। দলটি এটিকে তাদের সমর্থক-নেতৃত্বাধীন প্রচারণা বলে দাবি করেছে, যা তাদের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব দ্বারা আনুষ্ঠানিকভাবে অনুমোদিত নয়।
এই ভিডিওগুলো মিলিয়ন মিলিয়ন ভিউ, লাখ লাখ লাইক ও কমেন্ট পেয়েছে, যা তাদের ব্যাপক ‘প্রভাব ও সম্পৃক্ততা’ প্রমাণ করে।শুরুতে এটি শুধু জামায়াতের এআই-চালিত প্রচারণা ছিল, কিন্তু দ্রুতই এটি একটি ব্যাপক প্রবণতায় রূপ নেয়। অন্যান্য দলের সমর্থকরাও তাদের প্রার্থীদের প্রচার বা বিরোধীদের দুর্বল করতে একই ধরনের কন্টেন্ট তৈরি করতে শুরু করে।
চলতি বছরের ১৮ থেকে ২৮ জুনের মধ্যে ফেসবুকে পোস্ট করা ৭০টি এমন প্রচার ভিডিও শনাক্ত করা হয়েছে। টিকটকেও একই ধরনের ভিডিও পাওয়া গেছে, যা দলীয় কর্মীরা শেয়ার করছে। রাজনীতিতে এআই-এর আগের ব্যবহার থেকে এই ভিডিওগুলোর পার্থক্য হলো—এগুলো সম্পূর্ণ সিনথেটিক। সব মুখ, কণ্ঠ ও পটভূমি মূলত গুগলের তৈরি ভিডিও জেনারেশন মডেল ‘ভিও’ দিয়ে তৈরি। অধিকাংশ ভিডিওতেই স্বীকারোক্তি নেই যে এগুলো এআই দিয়ে তৈরি এবং কোনো লেবেল ছাড়াই প্রকাশিত হচ্ছে। বিশেষ করে ফেসবুকের অটোমেটেড সিস্টেমও এগুলো শনাক্ত করতে ব্যর্থ হয়েছে।