চব্বিশের জুলাইয়ের ঐতিহাসিক আন্দোলনে সাহসিকতার প্রতীক হয়ে উঠেছিলেন ঠাকুরগাঁওয়ের তামান্না ও তার সহযোদ্ধা সোহানা ইসলাম সমাপ্তি। পুলিশের চোখে চোখ রেখে প্রতিবাদী কণ্ঠে উচ্চারিত “কে এসেছে কে এসেছে, পুলিশ এসেছে…” স্লোগানে গোটা দেশজুড়ে সাড়া পড়ে গিয়েছিল। কিন্তু সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে সেই সাহসী মেয়েরা যেন হারিয়ে গেছেন ইতিহাসের পাতায়।
সম্প্রতি আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক আহনাফ তাহমীদ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এক আবেগঘন পোস্টে অভিযোগ করেছেন, আন্দোলনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করা এই নারীরা এখন অবমূল্যায়নের শিকার এবং মারাত্মক নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।
আহনাফ জানান, তামান্না ও সমাপ্তি শুধু মাঠে স্লোগানই দেননি, বরং নারীদের সংগঠিত করে একটি মেসেঞ্জার গ্রুপের মাধ্যমে আন্দোলন পরিচালনায় মুখ্য ভূমিকা রেখেছেন। দিনভর রাস্তায় থেকে রাতের আঁধারে তারা পরিকল্পনা করতেন কীভাবে এগিয়ে যেতে হবে। এমনকি পুলিশের গুলির মুখে, পরিবার থেকে চাপের মুখে, খাবারের অভাবে থেকেও আন্দোলনের ময়দান ছাড়েননি তারা।
তবে আন্দোলনের উত্তাল সময়ের পর রাজপথের সেই দৃপ্ত কণ্ঠ এখন চাপা পড়ে গেছে। আহনাফের ভাষায়, “তামান্নারা এখন ঘরে ফিরে গেছেন, কারণ তারা নিরাপদ নন। পুলিশি সহায়তা চাইতেও তাঁরা ব্যর্থ হয়েছেন। আন্দোলনের সময়ের সেই সাহসিকতার মূল্যায়ন আজও হয়নি।”
জানা গেছে, পুলিশি হয়রানি ও ক্ষমতাসীন দল ছাত্রলীগের কর্মীদের দ্বারা নিয়মিত অনুসরণের কারণে তাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। অভিযোগ রয়েছে, থানায় বারবার গিয়েও কোনো সহায়তা পাননি তারা।
তামান্নার সংগ্রামের গল্প আরও হৃদয়বিদারক। ৩১ জুলাই মাত্র ১০০ টাকা নিয়ে তিনি গ্রাম থেকে ঠাকুরগাঁওয়ে ফিরে আসেন। কোর্ট চত্বরে পুলিশের বাধা পেরিয়ে নারীদের নিয়ে বসে পড়েন আন্দোলনের ময়দানে। সেদিন ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যায়—তামান্না আঙুল তুলে পুলিশের দিকে চেয়ে সাহসিকতার সঙ্গে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। পুলিশ যখন হুমকি দেয়, তিনি তখন দৃপ্ত কণ্ঠে বলেন, “আমি অন্যায় করিনি। আমাকে জেলে নিয়ে যান। দাবি আদায় না করে আমি মাঠ ছাড়ব না।”
আন্দোলনকারীরা বলছেন, এই দৃশ্য দেখে দেশের হাজার হাজার মেয়ে সাহস পেয়েছিল। কিন্তু এই নারীদের এখন কেউ মনে রাখেনি, কেউ পাশে দাঁড়ায়নি।
এনসিপি নেতৃবৃন্দ ও আন্দোলন সংশ্লিষ্টরা এই অবমূল্যায়নকে গণআন্দোলনের জন্য লজ্জাজনক বলে মনে করছেন। তারা দাবি তুলেছেন, তামান্না, সমাপ্তি ও তাদের মতো সংগ্রামী নারীদের অবদান যথাযথভাবে মূল্যায়ন করা হোক এবং তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করুক রাষ্ট্র।
এক সময়কার রাজপথ কাঁপানো সেই কণ্ঠগুলো যেন ইতিহাসের অন্ধকারে হারিয়ে না যায়—এমনটাই কামনা করছেন দেশপ্রেমিক মানুষজন।