ঢাকা ১২:০৯ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৬ মে ২০২৫, ১১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সৌদি যুবরাজ সালমানের বিরুদ্ধে ‘অভ্যুত্থানের’ ডাক!  

এবার মোহাম্মদ বিন সালমান এখন হয়ে উঠেছেন সৌদি আরবের সর্বময় ক্ষমতার অধিকারি। তার উদার সংস্কার ও ভিশন ২০৩০-এর মতো উদ্যোগকে প্রশংসায় ভাসাচ্ছেন বিশ্বনেতারা। কিন্তু ‘ওয়েস্টার্ন লাইফস্টাইল’–এর প্রতি দুর্বলতা আজ তাকে বিশ্ব মঞ্চে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। দিন কয়েক আগেই যুক্তরাষ্ট্রের সাথে ইতিহাসের সবচেয়ে বড় অস্ত্র বিক্রি চুক্তি করে সৌদি আরব।

ট্রাম্পের সাম্প্রতিক সফরে সৌদির বিনিয়োগ ফোরামে মোট ১৪৫টি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়, যার মোট মূল্য ৩০০ বিলিয়ন ডলারের বেশি বলে দাবি করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, আগামী বছর থেকে দেশটির ৬০০টি নির্ধারিত স্থানে মদ বিক্রির অনুমোদন দিতে যাচ্ছে সৌদি প্রশাসন।

অন্যদিকে ধনী আরব রাষ্ট্র হয়েও গাজার গণহত্যা বন্ধে কার্যকরী কোনো পদক্ষেপ নিতে পারে নি সৌদি আরব। উল্টো ফিলিস্তিনি জনগণের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে রাজনৈতিক স্লোগানও নিষিদ্ধ করেছে দেশটি। গত মার্চে গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসনের তীব্র নিন্দা জানাতে মাত্র ২৭ শব্দের দায়সারা বিবৃতি দিয়ে বিতর্কের মুখে পড়ে সৌদি প্রশাসন।

এমন অবস্থায় সৌদি আরবে প্রথমবারের মতো ক্রাউন প্রিন্স সালমানের বিরুদ্ধে তরুণদের এক নজিরবিহীন আন্দোলন দেখা যাচ্ছে। ‘মাস্কড ইউথ মুভমেন্ট’ নামে এই তরুণ আন্দোলন শুরু হয়েছে টিকটকে, যা এখন দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়েছে ফেসবুক, এক্সসহ অন্যান্য সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে। সংবাদমাধ্যম মিডল ইস্ট আই-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়, আন্দোলনকারীরা চোখ-মুখ ঢেকে, কণ্ঠ পরিবর্তন করে এবং নাম-পরিচয় গোপন রেখে ভিডিও প্রকাশ করছেন। যেখানে এমবিএস-এর শাসনব্যবস্থার কঠোর সমালোচনা করা হচ্ছে।

এই তরুণরা সরাসরি অভিযোগ করছেন—এমবিএস-এর সরকার নাগরিক স্বাধীনতা কেড়ে নিচ্ছে, দুর্নীতিগ্রস্ত প্রশাসন গড়ে তুলছে, আর উন্নয়নের নামে চালাচ্ছে বিলিয়ন ডলারের বিনোদন শো। বিশেষ করে সৌদি আরবে সাম্প্রতিক সময়ের কনসার্ট, নাচ-গান, খোলামেলা বিনোদন ও বিভিন্ন ইভেন্ট নিয়ে অনেকেই ক্ষুব্ধ। তারা বলছেন, এসব কর্মকাণ্ড ইসলামী মূল্যবোধ ও সৌদি সমাজের ঐতিহ্যবিরোধী। আন্দোলনকারীরা পশ্চিমা সংস্কৃতির আগ্রাসন থেকে মুসলিমদের পবিত্র দুই নগরী মক্কা ও মদিনাকে রক্ষার আহ্বান জানাচ্ছেন।

কেউ কেউ বলছেন, এটি বিদেশে থাকা সৌদি নাগরিকদের তৈরি ষড়যন্ত্র। আবার অনেকেই প্রশ্ন করছেন, এতো তরুণ কণ্ঠ একসাথে আওয়াজ তুলছে কেন? এ কি কেবল বাইরের এজেন্ডা, নাকি সত্যিই সৌদি আরবের তরুণ সমাজ এখন ভেতর থেকে ফুঁসে উঠছে? তবে আন্দোলনের সদস্যদের নিরাপত্তা নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করছেন অনেকে। সৌদি সরকার সাধারণত এই ধরনের সমালোচনাকে কঠোরভাবে দমন করে থাকে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত ভিডিও বা মন্তব্যের জন্য অনেক সময় গ্রেফতার, কারাদণ্ড বা ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়।

জনপ্রিয় সংবাদ

সুষ্ঠু নির্বাচন না হলে নিজেকে অপরাধী ভাবব: অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস”

সৌদি যুবরাজ সালমানের বিরুদ্ধে ‘অভ্যুত্থানের’ ডাক!  

আপডেট সময় ০৫:৫৩:১৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৫ মে ২০২৫

এবার মোহাম্মদ বিন সালমান এখন হয়ে উঠেছেন সৌদি আরবের সর্বময় ক্ষমতার অধিকারি। তার উদার সংস্কার ও ভিশন ২০৩০-এর মতো উদ্যোগকে প্রশংসায় ভাসাচ্ছেন বিশ্বনেতারা। কিন্তু ‘ওয়েস্টার্ন লাইফস্টাইল’–এর প্রতি দুর্বলতা আজ তাকে বিশ্ব মঞ্চে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। দিন কয়েক আগেই যুক্তরাষ্ট্রের সাথে ইতিহাসের সবচেয়ে বড় অস্ত্র বিক্রি চুক্তি করে সৌদি আরব।

ট্রাম্পের সাম্প্রতিক সফরে সৌদির বিনিয়োগ ফোরামে মোট ১৪৫টি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়, যার মোট মূল্য ৩০০ বিলিয়ন ডলারের বেশি বলে দাবি করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, আগামী বছর থেকে দেশটির ৬০০টি নির্ধারিত স্থানে মদ বিক্রির অনুমোদন দিতে যাচ্ছে সৌদি প্রশাসন।

অন্যদিকে ধনী আরব রাষ্ট্র হয়েও গাজার গণহত্যা বন্ধে কার্যকরী কোনো পদক্ষেপ নিতে পারে নি সৌদি আরব। উল্টো ফিলিস্তিনি জনগণের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে রাজনৈতিক স্লোগানও নিষিদ্ধ করেছে দেশটি। গত মার্চে গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসনের তীব্র নিন্দা জানাতে মাত্র ২৭ শব্দের দায়সারা বিবৃতি দিয়ে বিতর্কের মুখে পড়ে সৌদি প্রশাসন।

এমন অবস্থায় সৌদি আরবে প্রথমবারের মতো ক্রাউন প্রিন্স সালমানের বিরুদ্ধে তরুণদের এক নজিরবিহীন আন্দোলন দেখা যাচ্ছে। ‘মাস্কড ইউথ মুভমেন্ট’ নামে এই তরুণ আন্দোলন শুরু হয়েছে টিকটকে, যা এখন দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়েছে ফেসবুক, এক্সসহ অন্যান্য সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে। সংবাদমাধ্যম মিডল ইস্ট আই-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়, আন্দোলনকারীরা চোখ-মুখ ঢেকে, কণ্ঠ পরিবর্তন করে এবং নাম-পরিচয় গোপন রেখে ভিডিও প্রকাশ করছেন। যেখানে এমবিএস-এর শাসনব্যবস্থার কঠোর সমালোচনা করা হচ্ছে।

এই তরুণরা সরাসরি অভিযোগ করছেন—এমবিএস-এর সরকার নাগরিক স্বাধীনতা কেড়ে নিচ্ছে, দুর্নীতিগ্রস্ত প্রশাসন গড়ে তুলছে, আর উন্নয়নের নামে চালাচ্ছে বিলিয়ন ডলারের বিনোদন শো। বিশেষ করে সৌদি আরবে সাম্প্রতিক সময়ের কনসার্ট, নাচ-গান, খোলামেলা বিনোদন ও বিভিন্ন ইভেন্ট নিয়ে অনেকেই ক্ষুব্ধ। তারা বলছেন, এসব কর্মকাণ্ড ইসলামী মূল্যবোধ ও সৌদি সমাজের ঐতিহ্যবিরোধী। আন্দোলনকারীরা পশ্চিমা সংস্কৃতির আগ্রাসন থেকে মুসলিমদের পবিত্র দুই নগরী মক্কা ও মদিনাকে রক্ষার আহ্বান জানাচ্ছেন।

কেউ কেউ বলছেন, এটি বিদেশে থাকা সৌদি নাগরিকদের তৈরি ষড়যন্ত্র। আবার অনেকেই প্রশ্ন করছেন, এতো তরুণ কণ্ঠ একসাথে আওয়াজ তুলছে কেন? এ কি কেবল বাইরের এজেন্ডা, নাকি সত্যিই সৌদি আরবের তরুণ সমাজ এখন ভেতর থেকে ফুঁসে উঠছে? তবে আন্দোলনের সদস্যদের নিরাপত্তা নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করছেন অনেকে। সৌদি সরকার সাধারণত এই ধরনের সমালোচনাকে কঠোরভাবে দমন করে থাকে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত ভিডিও বা মন্তব্যের জন্য অনেক সময় গ্রেফতার, কারাদণ্ড বা ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়।