জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের আইসিইউ ইউনিটের সামনে দাঁড়িয়ে আছেন মিজানুর রহমান বিপ্লব। ভেতরে, বেড নম্বর ৩-এ তার ছেলে নাভিদ নাওয়াজ দীপ্ত মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে। মাইলস্টোন স্কুলে বিমান বিধ্বস্তের দিন বন্ধুদের একা ফেলে না গিয়ে পাশে দাঁড়িয়েছিল সে। নিজের অর্ধেক শরীর পুড়িয়ে দিয়েও সাহসের পরিচয় দিয়েছিল। এখন সে জীবনের জন্য লড়ছে।
দীপ্ত শুয়ে আছে, শরীর জ্বলে গেছে, তবুও বাবাকে সান্ত্বনা দিয়ে বলেছে, ‘বাবা, আমি বন্ধুদের সাহায্য করেছি… নিশ্চয়ই বেঁচে যাবো।’ বাবার বুক ভেঙে গেছে, চোখে জল।
সেই ভয়াবহ ২১ জুলাই দুপুরে মা নুরুন নাহার স্কুল গেটে অপেক্ষা করছিলেন। ছোট বোন নাইরা আগে বাড়ি ফিরে গিয়েছিল। বিস্ফোরণের শব্দে এলোমেলো হয়ে যায় সব। মা অজ্ঞান হয়ে পড়েন। ছোট্ট নাইরা ফোন করে জানায়—ভাইয়া পুড়ে গেছে। বাবার জন্য শুরু হয় ছুটে চলা, এক হাসপাতাল থেকে আরেক হাসপাতালে। এখন দীপ্ত ভর্তি জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে।
পরিবারে ছিল হাসি, ছিল স্বপ্ন। দীপ্ত আর নাইরা একসঙ্গে স্কুলে যেত, হাত ধরে স্বপ্ন দেখত। আজ সেই স্বপ্ন পোড়া শরীরে ভেসে বেড়াচ্ছে হাসপাতালের বিছানায়। দীপ্তর মা-বাবা এখন হাসপাতালেই থাকেন। আশপাশে মামা-মামী, বাবার বন্ধু আদনান, সোহাগ ও প্রিয় শিক্ষক মেহরিনের স্মৃতি। মেহরিন চৌধুরী ছিলেন মাইলস্টোন স্কুলের শিক্ষিকা, যিনি নিজের জীবন দিয়ে ২০ জন শিক্ষার্থীকে বাঁচিয়েছেন।
দীপ্ত ভালোবাসে পাখি, ভালোবাসে বেড়াল। একবার মায়ের অ্যালার্জির কারণে বেড়াল ছেড়ে দিয়েছিল, পরে পাখি পুষেছিল। বাবা একদিন রাগ করে পাখি ছেড়ে দিতে বলেছিলেন, আজ সেই স্মৃতিতে কাঁদছেন তিনি। দীপ্ত মৃত্যুর দোরগোড়ায় দাঁড়িয়েও পাখিদের খোঁজ নিচ্ছে, যত্ন নিতে বলছে।
বার্ন ইনস্টিটিউটের এক চিকিৎসক, যিনি মিজানুর রহমানের স্কুল সিনিয়র, বলেন—দীপ্ত আমাদের সন্তানের মতো। আমরা প্রাণপণ চেষ্টা করছি। তবে পোড়ার ক্ষতি সময়ের সঙ্গে বাড়ে, স্থিতিশীল নয়।
এই দুর্ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৩২ জন নিহত হয়েছেন, ৫১ জন ভর্তি হয়েছিলেন বার্ন ইনস্টিটিউটে। এর মধ্যে দুজন চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন।
দীপ্তর বাবা মিজানুর রহমান দেশবাসীর কাছে শুধু একটাই অনুরোধ করেছেন—‘আমার ছেলেটা যেন বোনের সঙ্গে আবার খেলতে পারে, পাখিদের খাওয়াতে পারে। ওর জন্য দোয়া করুন।’
বাংলাদেশের মানুষ আজ দীপ্তদের জন্য কাঁদছে, প্রার্থনা করছে। দীপ্ত শুধু সাহসের নাম নয়, ভালোবাসার নাম।