ঢাকা ০৬:১৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২১ অগাস্ট ২০২৫, ৬ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

জুলাই সনদের সমন্বিত খসড়া চূড়ান্তের পথে, জাতীয় নির্বাচনের আগেই বাস্তবায়নের লক্ষ্য

  • ডেস্ক রিপোর্টঃ
  • আপডেট সময় ১১:৪০:৩৩ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৫ অগাস্ট ২০২৫
  • ৫৩২ বার পড়া হয়েছে

রাজনৈতিক দলগুলোর মতামতের ভিত্তিতে জুলাই সনদের সমন্বিত খসড়া প্রস্তুত করেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। এতে বলা হয়েছে, সনদের কোনো শব্দ, বাক্য বা নীতিমালা সংবিধান বা অন্য আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হলে সনদকে প্রাধান্য দেওয়া হবে এবং অবিলম্বে বাস্তবায়নযোগ্য সুপারিশগুলো জাতীয় নির্বাচনের আগেই কার্যকর করা হবে। দলগুলোর দাবির প্রেক্ষিতে সনদকে বিশেষ মর্যাদার পাশাপাশি আইনি ভিত্তি দেওয়ার প্রস্তাবও রাখা হয়েছে।

সংবিধান সংশোধনে উভয় কক্ষের দুই-তৃতীয়াংশের সমর্থন বাধ্যতামূলক করার পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীর দলীয় প্রধান না হওয়া, তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা এবং কিছু বিষয়ে গণভোটের শর্ত যুক্ত করা হয়েছে। তবে সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্বে দ্বিকক্ষ প্রবর্তনের বিষয়ে ‘নোট অব ডিসেন্ট’ও সনদে অন্তর্ভুক্ত হবে।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ প্রধান উপদেষ্টা ও কমিশন সভাপতি ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে কমিশনের কার্যক্রম ও খসড়া সনদের অগ্রগতি জানিয়ে বলেন, বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনার পাশাপাশি দলগুলোর কাছে কবে সনদ পাঠানো ও পুনরায় সংলাপ বসা সম্ভব—সে বিষয়েও মতবিনিময় হয়েছে। সূত্র জানায়, প্রধান উপদেষ্টার মতামত অনুযায়ী আজ শুক্রবারের মধ্যে খসড়া দলগুলোর কাছে পাঠানো হবে এবং আগামী সপ্তাহের মধ্যে তাদের চূড়ান্ত মতামত নেওয়া হবে, যার ভিত্তিতে স্বাক্ষরের জন্য জুলাই সনদ প্রস্তুত হবে।

সমন্বিত খসড়ায় তিনটি ভাগ রাখা হয়েছে—প্রথম ভাগে পটভূমি, সংস্কার কমিশন ও জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কার্যক্রম; দ্বিতীয় ভাগে দলগুলোর ঐকমত্য হওয়া বিষয়; এবং শেষ ভাগে ৯ দফা বাস্তবায়ন অঙ্গীকারনামা। খসড়ার পটভূমিতে রাষ্ট্রকাঠামো পুনর্গঠন, মৌলিক সাংবিধানিক সংস্কার, স্বাধীন বিচারব্যবস্থা, জবাবদিহিমূলক সুশাসন ও দুর্নীতিমুক্ত দেশ গড়ার প্রতিশ্রুতি উল্লেখ করা হয়েছে।

ঐকমত্যের অংশে রাষ্ট্রভাষা বাংলার পাশাপাশি অন্যান্য নাগরিকের ভাষার স্বীকৃতি, নাগরিকত্বে ‘বাংলাদেশি’ পরিচয়, সংবিধানের মূলনীতিতে সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক সুবিচার, গণতন্ত্র ও ধর্মীয় সম্প্রীতির কথা আছে—যার বিরোধিতা করেছে সিপিবি, বাসদ, জেএসডি, জাসদসহ কয়েকটি দল। দ্বিকক্ষের উচ্চকক্ষের ১০০ সদস্য সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্বে নির্বাচনের প্রস্তাব, প্রার্থী ঘোষণায় নারীদের জন্য ১০ শতাংশ কোটা এবং সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদে সংশোধন এনে অর্থবিল ও আস্থাভোট ছাড়া অন্যান্য বিষয়ে দলের বিপক্ষে ভোটের সুযোগের প্রস্তাবও রয়েছে, যা নিয়েও দলগুলোর মধ্যে মতপার্থক্য আছে।

বিচার বিভাগ, সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান ও নির্বাচন কমিশনসহ ন্যায়পাল, সরকারি কর্ম কমিশন, মহাহিসাব নিরীক্ষক এবং দুর্নীতি দমন কমিশনের নিয়োগে বাছাই কমিটি গঠনে দলগুলো একমত হলেও কিছু দল প্রক্রিয়া নিয়ে আপত্তি জানিয়েছে। স্থানীয় সরকার নির্বাচন নির্বাচন কমিশনের কাছে হস্তান্তরের প্রস্তাবও রাখা হয়েছে।

শেষ ভাগে সনদের ব্যাখ্যা, প্রয়োগ ও বৈধতা আপিল বিভাগের এখতিয়ারভুক্ত করার প্রস্তাব আছে। সনদের বৈধতা আদালতে প্রশ্ন তোলা যাবে না এবং সাংঘর্ষিক হলে সনদ সংবিধানের ওপর প্রাধান্য পাবে। অবিলম্বে বাস্তবায়নযোগ্য সুপারিশগুলো নির্বাচন পূর্বেই কার্যকর করার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর রাষ্ট্রকাঠামো সংস্কারে ছয়টি কমিশন গঠন হয়। এর মধ্যে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন ৩৩টি রাজনৈতিক দল ও জোটের সঙ্গে সংলাপ করে প্রথম ধাপে ৬২টি প্রস্তাবে ঐকমত্য এবং দ্বিতীয় ধাপে ২০টি বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেয়। এসব প্রস্তাব নিয়েই তৈরি হচ্ছে ‘জুলাই জাতীয় সনদ’।

জনপ্রিয় সংবাদ

বিমানে ত্রাণ পৌঁছল গাজায়, মানবিক সংকট এখনও কমেনি

জুলাই সনদের সমন্বিত খসড়া চূড়ান্তের পথে, জাতীয় নির্বাচনের আগেই বাস্তবায়নের লক্ষ্য

আপডেট সময় ১১:৪০:৩৩ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৫ অগাস্ট ২০২৫

রাজনৈতিক দলগুলোর মতামতের ভিত্তিতে জুলাই সনদের সমন্বিত খসড়া প্রস্তুত করেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। এতে বলা হয়েছে, সনদের কোনো শব্দ, বাক্য বা নীতিমালা সংবিধান বা অন্য আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হলে সনদকে প্রাধান্য দেওয়া হবে এবং অবিলম্বে বাস্তবায়নযোগ্য সুপারিশগুলো জাতীয় নির্বাচনের আগেই কার্যকর করা হবে। দলগুলোর দাবির প্রেক্ষিতে সনদকে বিশেষ মর্যাদার পাশাপাশি আইনি ভিত্তি দেওয়ার প্রস্তাবও রাখা হয়েছে।

সংবিধান সংশোধনে উভয় কক্ষের দুই-তৃতীয়াংশের সমর্থন বাধ্যতামূলক করার পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীর দলীয় প্রধান না হওয়া, তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা এবং কিছু বিষয়ে গণভোটের শর্ত যুক্ত করা হয়েছে। তবে সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্বে দ্বিকক্ষ প্রবর্তনের বিষয়ে ‘নোট অব ডিসেন্ট’ও সনদে অন্তর্ভুক্ত হবে।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ প্রধান উপদেষ্টা ও কমিশন সভাপতি ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে কমিশনের কার্যক্রম ও খসড়া সনদের অগ্রগতি জানিয়ে বলেন, বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনার পাশাপাশি দলগুলোর কাছে কবে সনদ পাঠানো ও পুনরায় সংলাপ বসা সম্ভব—সে বিষয়েও মতবিনিময় হয়েছে। সূত্র জানায়, প্রধান উপদেষ্টার মতামত অনুযায়ী আজ শুক্রবারের মধ্যে খসড়া দলগুলোর কাছে পাঠানো হবে এবং আগামী সপ্তাহের মধ্যে তাদের চূড়ান্ত মতামত নেওয়া হবে, যার ভিত্তিতে স্বাক্ষরের জন্য জুলাই সনদ প্রস্তুত হবে।

সমন্বিত খসড়ায় তিনটি ভাগ রাখা হয়েছে—প্রথম ভাগে পটভূমি, সংস্কার কমিশন ও জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কার্যক্রম; দ্বিতীয় ভাগে দলগুলোর ঐকমত্য হওয়া বিষয়; এবং শেষ ভাগে ৯ দফা বাস্তবায়ন অঙ্গীকারনামা। খসড়ার পটভূমিতে রাষ্ট্রকাঠামো পুনর্গঠন, মৌলিক সাংবিধানিক সংস্কার, স্বাধীন বিচারব্যবস্থা, জবাবদিহিমূলক সুশাসন ও দুর্নীতিমুক্ত দেশ গড়ার প্রতিশ্রুতি উল্লেখ করা হয়েছে।

ঐকমত্যের অংশে রাষ্ট্রভাষা বাংলার পাশাপাশি অন্যান্য নাগরিকের ভাষার স্বীকৃতি, নাগরিকত্বে ‘বাংলাদেশি’ পরিচয়, সংবিধানের মূলনীতিতে সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক সুবিচার, গণতন্ত্র ও ধর্মীয় সম্প্রীতির কথা আছে—যার বিরোধিতা করেছে সিপিবি, বাসদ, জেএসডি, জাসদসহ কয়েকটি দল। দ্বিকক্ষের উচ্চকক্ষের ১০০ সদস্য সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্বে নির্বাচনের প্রস্তাব, প্রার্থী ঘোষণায় নারীদের জন্য ১০ শতাংশ কোটা এবং সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদে সংশোধন এনে অর্থবিল ও আস্থাভোট ছাড়া অন্যান্য বিষয়ে দলের বিপক্ষে ভোটের সুযোগের প্রস্তাবও রয়েছে, যা নিয়েও দলগুলোর মধ্যে মতপার্থক্য আছে।

বিচার বিভাগ, সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান ও নির্বাচন কমিশনসহ ন্যায়পাল, সরকারি কর্ম কমিশন, মহাহিসাব নিরীক্ষক এবং দুর্নীতি দমন কমিশনের নিয়োগে বাছাই কমিটি গঠনে দলগুলো একমত হলেও কিছু দল প্রক্রিয়া নিয়ে আপত্তি জানিয়েছে। স্থানীয় সরকার নির্বাচন নির্বাচন কমিশনের কাছে হস্তান্তরের প্রস্তাবও রাখা হয়েছে।

শেষ ভাগে সনদের ব্যাখ্যা, প্রয়োগ ও বৈধতা আপিল বিভাগের এখতিয়ারভুক্ত করার প্রস্তাব আছে। সনদের বৈধতা আদালতে প্রশ্ন তোলা যাবে না এবং সাংঘর্ষিক হলে সনদ সংবিধানের ওপর প্রাধান্য পাবে। অবিলম্বে বাস্তবায়নযোগ্য সুপারিশগুলো নির্বাচন পূর্বেই কার্যকর করার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর রাষ্ট্রকাঠামো সংস্কারে ছয়টি কমিশন গঠন হয়। এর মধ্যে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন ৩৩টি রাজনৈতিক দল ও জোটের সঙ্গে সংলাপ করে প্রথম ধাপে ৬২টি প্রস্তাবে ঐকমত্য এবং দ্বিতীয় ধাপে ২০টি বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেয়। এসব প্রস্তাব নিয়েই তৈরি হচ্ছে ‘জুলাই জাতীয় সনদ’।