জাতীয় না কি স্থানীয়—কোন নির্বাচন আগে হবে তা নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে উত্তপ্ত বিতর্কের মাঝেই সরকার ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। বিশেষ করে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে (ডিএসসিসি) বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে মেয়র হিসেবে শপথ পড়ানো নিয়ে চলমান আন্দোলন পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে।
সরকার সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, ডিএসসিসি ও ডিএনসিসির নাগরিক সেবা কার্যত অচল হয়ে পড়ায় এই সংকট নিরসনে সরকার স্থানীয় সরকার নির্বাচন আয়োজনের উদ্যোগ নিয়েছে। স্থানীয় সরকার বিভাগ খুব শিগগিরই নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) নির্বাচন আয়োজনের নির্দেশনা দিয়ে চিঠি দিতে যাচ্ছে।
আইন অনুযায়ী, স্থানীয় সরকার বিভাগ চিঠি দিলে নির্বাচন কমিশন তৎপর হয়। এ প্রসঙ্গে স্থানীয় সরকার বিভাগের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, “নাগরিক সেবা বিঘ্নিত হওয়ায় সরকার মনে করছে, দ্রুত নির্বাচন জরুরি। স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৪ অনুসারে, জনপ্রতিনিধি না থাকায় কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে।”
এরই মধ্যে একজন নাগরিক, নিজেকে “জুলাই আন্দোলনের সংগঠক ও এনসিপির কর্মী” দাবি করে, সিইসিকে চিঠি দিয়েছেন ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের নির্বাচন দ্রুত আয়োজনের আহ্বান জানিয়ে। চিঠিতে নাগরিক সেবা বিপর্যয়ের কথা তুলে ধরা হয়েছে।
অন্যদিকে, নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচন করার সুপারিশ করেছে। তবে বিএনপিসহ বিরোধী জোটের দাবি, জাতীয় নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত স্থানীয় নির্বাচন স্থগিত রাখতে হবে। তারা অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন চায়।
ঢাকা দক্ষিণে পরিস্থিতি আরও জটিল। নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালের রায়ে ২০২০ সালের সিটি নির্বাচনের ফল বাতিল করে ইশরাক হোসেনকে বৈধ মেয়র ঘোষণা করা হয়। এরপর নির্বাচন কমিশন গেজেট প্রকাশ করলেও, সুপ্রিম কোর্টে আইনজীবীরা লিগ্যাল নোটিশ দিয়ে গেজেট চ্যালেঞ্জ করেন। বর্তমানে সেই রিটের শুনানি শেষে বৃহস্পতিবার আদালতের আদেশ আসার কথা।
ইশরাকের সমর্থকরা ইতোমধ্যেই ডিএসসিসি নগর ভবনে তালা দিয়ে আন্দোলন শুরু করেছে। এর ফলে দক্ষিণ সিটির সব সেবা কার্যক্রম বন্ধ হয়ে পড়েছে। আটটি আঞ্চলিক অফিসসহ নগর ভবনের কার্যক্রমে অচলাবস্থা বিরাজ করছে। ডিএসসিসির প্রশাসক মো. শাহজাহান মিয়া বলেন, “নাগরিকদের কোনো সেবা দেওয়া যাচ্ছে না। পুরো নগর প্রশাসন কার্যত স্তব্ধ।”
উল্লেখ্য, শেখ ফজলে নূর তাপস ও আতিকুল ইসলামের মেয়াদ শেষ হয় ১৫ মে। একজন পালিয়ে গেছেন, অন্যজন কারাবন্দি। এ প্রেক্ষাপটে গত বছর সরকার প্রশাসক নিয়োগ দেয়।
নির্বাচন কমিশনকে দায়ী করে এনসিপি বলছে, সময়মতো আপিল না করায় সংকট তৈরি হয়েছে। এনসিপির নেতা সারোয়ার তুষার বলেন, “এই অচলাবস্থার দায় ইসির। দ্রুত স্থানীয় সরকার নির্বাচনই এখন একমাত্র সমাধান।”
স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ জানিয়েছেন, সংকটের আইনি সমাধান নিয়ে সরকার কাজ করছে এবং আইন মন্ত্রণালয়ের মতামতের ভিত্তিতে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, “কোন নির্বাচন আগে হবে তা সরকার ঠিক করবে। কমিশনের দায়িত্ব শুধু সেই নির্বাচন আয়োজন করা।”