বাংলাদেশের লালমনিরহাটে প্রস্তাবিত বিমানঘাঁটি ঘিরে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ভারতের সেনাবাহিনীর সাবেক উপ-প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) সুব্রত সাহা। পশ্চিমবঙ্গের প্রভাবশালী দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকা-তে প্রকাশিত এক বিশ্লেষণমূলক কলামে তিনি সরাসরি মন্তব্য করেন— “বিমানঘাঁটি হোক বা অন্য যে কোনও পরিকাঠামো, প্রয়োজনে তা গুঁড়িয়ে দিতে ভারতের বেশি সময় লাগবে না।”
বিমানঘাঁটি ও ভূ-কৌশলগত সংকট
কলামে তিনি লেখেন, বাংলাদেশ সরকার চীনের সহযোগিতায় লালমনিরহাটে একটি সামরিক বিমানঘাঁটি গড়ে তোলার পরিকল্পনা করছে। যা ভারতের কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ শিলিগুড়ি করিডরের খুব কাছেই অবস্থিত। তিনি দাবি করেন, “এই পরিকল্পনার আড়ালে ভারতের ঘাড়ের কাছে নিঃশ্বাস ফেলার এক নিরব অথচ সুপরিকল্পিত প্রচেষ্টা চলছে। নিজে না পারলে অন্য শক্তিকে দিয়ে তা বাস্তবায়নের চেষ্টা করছে বাংলাদেশ।”
ইতিহাস ও বর্তমান প্রেক্ষাপট
লালমনিরহাটের বিমানঘাঁটির ইতিহাস দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পর্যন্ত বিস্তৃত। ব্রিটিশদের নির্মিত এই ঘাঁটি যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে বন্ধ হয়ে যায়। ১৯৫৮ সালে তা স্বল্প সময়ের জন্য পুনরায় খোলা হলেও আবারও পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে। শেখ হাসিনা সরকারের আমলে ওই স্থানে একটি এভিয়েশন ও মহাকাশ প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের কথা বলা হলেও, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বিমানঘাঁটি হিসেবেই তা সক্রিয় করতে আগ্রহী বলে কলামে উল্লেখ করেন সুব্রত সাহা।
শিলিগুড়ি করিডরের স্পর্শকাতরতা
শিলিগুড়ি করিডর, যা ভারতের মূল ভূখণ্ড ও উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলোর মধ্যে একমাত্র স্থল সংযোগ, ইতিমধ্যে ভূ-রাজনৈতিকভাবে অত্যন্ত সংবেদনশীল অঞ্চল হিসেবে পরিচিত। করিডরটির চারপাশে নেপাল, বাংলাদেশ, ভুটান এবং চীন থাকায় এটি ভারতের জন্য অত্যন্ত কৌশলগত গুরুত্ব বহন করে।
সুব্রত সাহা বলেন, “এই করিডর দিয়ে ভারতের সেনা, পণ্য ও রেল যোগাযোগ চলে। এর নিরাপত্তা বিঘ্নিত হলে পুরো উত্তর-পূর্ব ভারতের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে পারে।”
বাংলাদেশের ভূমিকায় সন্দেহ
সুব্রত সাহার অভিযোগ, “বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের কথাবার্তায় ভারতবিরোধী মনোভাব ফুটে উঠছে। তাঁর সমর্থকেরা নাকি প্রকাশ্যে উত্তর-পূর্ব ভারত বিচ্ছিন্ন করার হুমকি দিচ্ছেন। যদিও আন্তর্জাতিক বাধ্যবাধকতায় ড. ইউনূস সরাসরি তা বলেননি, কিন্তু পরোক্ষভাবে এসব প্রচেষ্টা স্পষ্ট।”
ভারতের হুঁশিয়ারি
সেনাবাহিনীর সাবেক এই উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা বলেন, “প্রয়োজনে ভারত ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর মতো পদক্ষেপ নিতে দ্বিধা করবে না। নিরাপত্তার প্রশ্নে ভারত সর্বোচ্চ সতর্কতা বজায় রাখে এবং যে কোনও হুমকির জবাবে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে প্রস্তুত।”