গাজা উপত্যকার জন্য পাঠানো ৯০টি ত্রাণবাহী ট্রাক অবশেষে জাতিসংঘের বিভিন্ন দলকে হস্তান্তর করেছে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ। সীমিতভাবে অবরোধ তুলে নেওয়ার তিন দিন পর এই ত্রাণ পাঠানো হয়। স্থানীয় সময় বুধবার রাতেই কেরেম শালোম ক্রসিং হয়ে ত্রাণবাহী ট্রাকগুলো গাজায় প্রবেশ করে এবং সেগুলো ওয়্যারহাউসে পৌঁছে দেওয়া হয় বলে জানিয়েছে বিবিসি।
এই সময় গাজার মানবিক পরিস্থিতি চরম রূপ নিয়েছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাতে রয়টার্স জানিয়েছে, গত দুই দিনে অনাহারে মারা গেছে আরও ২৯ জন, যাদের অধিকাংশই শিশু। মানবাধিকার সংস্থাগুলো হুঁশিয়ার করেছে যে, দ্রুত ও পর্যাপ্ত ত্রাণ সরবরাহ নিশ্চিত না করা হলে গাজার প্রায় ২১ লাখ মানুষ দুর্ভিক্ষের মুখোমুখি হতে পারে। খাদ্য ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ঘাটতি এবং অতিরিক্ত মূল্য পরিস্থিতিকে আরও ভয়াবহ করে তুলছে।
জাতিসংঘ সমর্থিত ইনটিগ্রেটেড ফুড সিকিউরিটি ফেজ ক্লাসিফিকেশনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সামনের মাসগুলোতে গাজায় প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ তীব্র খাদ্য সংকটে পড়তে পারে। এদিকে, বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (ডব্লিউএফপি) পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, গাজার জন্য ১ লাখ ৪০ হাজার টন খাদ্য ও প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র মজুত রাখা হয়েছে, যা ৬ হাজার ট্রাকের মাধ্যমে সরবরাহ করা সম্ভব। যদি এই ত্রাণ গাজায় পৌঁছানো যায়, তাহলে দুই মাসের জন্য উপত্যকার বাসিন্দাদের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যাবে।
সংস্থাটি আরও জানায়, ইতোমধ্যে কিছু বেকারিতে ত্রাণ হিসেবে সরবরাহকৃত আটা পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। তবে জাতিসংঘ জানিয়েছে, ত্রাণ সরবরাহের অনুমোদিত একমাত্র পথটি নিরাপত্তাহীন হওয়ায় দ্রুত ত্রাণ পৌঁছাতে বিলম্ব হয়েছে।
বিবিসি, আল জাজিরা ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, মঙ্গলবার পর্যন্ত ৯৩টি ত্রাণবাহী ট্রাক গাজায় প্রবেশ করে। এর মধ্যে ৯০টি জাতিসংঘের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। বাকি তিনটির বিষয়ে কোনো নির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায়নি।
ইসরায়েলের নেতানিয়াহু প্রশাসন জানায়, বুধবারের ৯৩ ট্রাক ছাড়াও আরও ১০০টি ত্রাণবাহী ট্রাক কেরেম শালোম ক্রসিং দিয়ে গাজায় প্রবেশ করেছে। তবে জাতিসংঘের মতে, এই সংখ্যক ত্রাণ গাজার প্রয়োজনের তুলনায় খুবই অপ্রতুল। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর আগ্রাসনের আগেও গাজায় দৈনিক কমপক্ষে ৫০০টি ত্রাণবাহী ট্রাক প্রবেশ করত। যুদ্ধাবস্থায় এই চাহিদা বেড়ে গেছে কয়েকগুণ। ফলে ১০০ ট্রাক ঢোকানোকে যথেষ্ট নয় বলেই মনে করছে জাতিসংঘ।