গাজার খান ইউনিস থেকে রাফায় খাবারের আশায় পায়ে হেঁটে যান ৪২ বছর বয়সী ফিলিস্তিনি নারী রিম জেইদান। সঙ্গে ছিলেন তার দুই সন্তান মেরভাত ও আহমেদ। লক্ষ্য ছিল রাফার একটি ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্র থেকে কিছু আটা ও মেয়ের জন্য বিস্কুট সংগ্রহ করা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত খাবার তো জোটেনি, উল্টো ইসরায়েলি গুলিতে প্রাণ গেল রিমের।
সূর্যাস্তের ঠিক পরপরই রিম তার সন্তানদের নিয়ে রওনা দেন। তারা একটি তাঁবুতে কিছুক্ষণ আশ্রয় নিয়েছিলেন। তখনই রিম জানতে পারেন, কাছাকাছি ত্রাণকেন্দ্রে ইসরায়েলি বাহিনী গুলি চালিয়েছে। ফলে তিনি সন্তানদের নিয়ে পিছু হটেন।
তাঁবুতে রাত কাটিয়ে ভোরে যখন পুনরায় রওনা হচ্ছিলেন, ঠিক তখনই ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে রিম জেইদান মারা যান। তার মেয়ে মেরভাত চোখের সামনে মাকে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে স্তব্ধ হয়ে যায়। কান্নায় ভেঙে পড়ে সে বলে, “তোমাকে ওরা হত্যা করেছে মা, কারণ তুমি আমাদের খাবার আনতে গিয়েছিলে।”
এ ঘটনায় রাফায় আরও অন্তত ২৭ জন ক্ষুধার্ত মানুষ নিহত হয়েছেন। গাজার মধ্যাঞ্চলে সালাহ আল-দিন স্ট্রিটে নিহত হন আরও ২৫ জন। মঙ্গলবার সারা গাজাজুড়ে নিহতের সংখ্যা দাঁড়ায় ৭০-এ, যাদের বেশিরভাগই খাবারের খোঁজে ছিলেন।
অবরুদ্ধ গাজায় মানবিক বিপর্যয় তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। জাতিসংঘ জানিয়েছে, শুধু খাবার নিতে গিয়েই অন্তত ৪০০ জন নিহত এবং ১,০০০ জনের বেশি আহত হয়েছেন। ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের জন্য জাতিসংঘের সংস্থা UNRWA-এর প্রধান ফিলিপ লাজ্জারিনি এ পরিস্থিতিকে বর্ণনা করেছেন “ত্রাণ বিতরণকেন্দ্র এখন মৃত্যুফাঁদে” রূপ নিয়েছে বলে।
অন্যদিকে, দক্ষিণ লেবাননেও ইসরায়েলি ড্রোন হামলায় ৩ জন নিহত হয়েছেন। একটি গাড়ি লক্ষ্য করে চালানো ড্রোন হামলায় ওই প্রাণহানির ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছে লেবাননের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া ইসরায়েলি আগ্রাসনে এখন পর্যন্ত ৫৬ হাজার ৭৭ জন নিহত এবং ১ লাখ ৩১ হাজার ৮৪৮ জন আহত হয়েছেন বলে আলজাজিরা সূত্রে জানা গেছে।
এই মানবিক বিপর্যয়ের মধ্যেও আন্তর্জাতিক সহায়তা ও কার্যকর যুদ্ধবিরতি এখনো অধরা।