বিতর্কিত ধর্মীয় সংগঠন ইসকন নতুন কৌশলে সংগঠিত হওয়ার তৎপরতা শুরু করেছে। পূজা উদযাপন পরিষদ ও জন্মাষ্টমী উদযাপন পরিষদসহ প্রধান ধর্মীয় সংগঠনগুলোর পাশাপাশি রামসেনা, শিবসেনা, সনাতনী জাগরণ জোটের মতো নামসর্বস্ব সংগঠনগুলোর নেতৃত্ব দখল করে নিজেদের প্রভাব বিস্তারের পরিকল্পনা নিচ্ছে সংগঠনটি। গোয়েন্দা সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রামের প্রবর্তক ইসকন মন্দিরের আন্ডারগ্রাউন্ড অংশ এখন এসব কার্যক্রমের কেন্দ্রবিন্দু।
সূত্র জানায়, ভারতের কলকাতা ও ত্রিপুরায় আশ্রয় নেওয়া কিছু প্রভাবশালী নেতা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এসব বৈঠকে অংশ নিচ্ছেন। ইতোমধ্যে অন্তত ১৩টি সংগঠনের নামে এক হাজারেরও বেশি কমিটি গঠন করা হয়েছে, যার প্রায় ৯০ শতাংশ সদস্য আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মী।
গোয়েন্দা সূত্র বলছে, এসব সংগঠন ধর্মীয় পরিচয়ের আড়ালে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের চেষ্টা করছে। সংখ্যালঘু অধিকারের নামে উগ্রবাদী এজেন্ডা চালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে তারা, যা আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টির পটভূমি হতে পারে।
গত ফেব্রুয়ারিতে সীতাকুণ্ডের শিব চতুর্দশী মেলায় ‘রামসেনা’ ব্যানারে ইসকনের নতুন কৌশল প্রথম ধরা পড়ে। পরবর্তীতে জন্মাষ্টমীর র্যালিতে “চিন্ময়ের মুক্তি চাই” লেখা প্ল্যাকার্ড প্রদর্শনের ঘটনাও গোয়েন্দাদের নজরে আসে।
গোয়েন্দা তথ্য অনুযায়ী, শেখ হাসিনার পতনের পর আওয়ামী লীগ-ঘনিষ্ঠ ও পলাতক কিছু নেতা ইসকনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পুনরায় সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছে। এই প্রক্রিয়ায় ভারতের সহায়তা থাকার অভিযোগও উঠেছে। প্রবর্তক মন্দিরের চিন্ময়পন্থি নেতারা যেমন—উজ্জ্বল মল্লিক, পলাশ সেন, শুভ দাশগুপ্ত, পিংকু ভট্টাচার্য প্রমুখ—এই সমন্বয়ের মূল দায়িত্বে রয়েছেন।
চট্টগ্রামের জন্মাষ্টমী উদযাপন পরিষদ, সীতাকুণ্ড স্রাইন কমিটি ও জেলা পূজা উদযাপন পরিষদেও এখন ইসকনের প্রভাব সুস্পষ্ট। এসব সংগঠনের অধিকাংশ নেতা আওয়ামী লীগ বা তার অঙ্গসংগঠনের সক্রিয় সদস্য। অনেকের বিরুদ্ধেই ভারতের উগ্রবাদী সংগঠন আরএসএস ও বিজেপির সঙ্গে যোগাযোগের অভিযোগ রয়েছে।
গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর দাবি, এসব সংগঠন সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় কর্মকাণ্ডের আড়ালে ভারতের উগ্রবাদী নেটওয়ার্কের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে কাজ করছে, যার লক্ষ্য সংখ্যালঘু আবেগকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করে বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদী প্রভাব পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের জনসংযোগ কর্মকর্তা অনিন্দিতা বড়ুয়া বলেন, “ধর্মীয় সংগঠনের কমিটিতে কারা রয়েছেন তা আমরা খতিয়ে দেখছি। কেউ যদি ধর্মীয় আবরণের আড়ালে রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কঠোরভাবে মোকাবিলা করবে।”


























