ঢাকা ০৫:১৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১২ জুলাই ২০২৫, ২৭ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ইসরায়েলের হুমকি-ষড়যন্ত্র পেছনে ফেলে পরমাণু ক্লাবে পাকিস্তান

  • ডেস্ক রিপোর্টঃ
  • আপডেট সময় ০৯:৩৬:১২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৭ জুন ২০২৫
  • ৫৩৬ বার পড়া হয়েছে

মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ’র সাবেক পরিচালক জর্জ টেনেট যাকে ওসামা বিন লাদেনের মতো ‘বিপজ্জনক’ মনে করতেন, আর ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থার সাবেক প্রধান শাবতাই শাবিত যাকে হত্যা না করার জন্য আজীবন অনুতপ্ত—তিনি আর কেউ নন, পাকিস্তানের পরমাণু কর্মসূচির রূপকার ও ‘ইসলামি বোমার জনক’ ড. আবদুল কাদির খান।

পাকিস্তানের প্রায় ২৫ কোটির বেশি মানুষের কাছে এই পরমাণু বিজ্ঞানী জাতীয় বীর, যিনি দেশের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য পারমাণবিক শক্তির প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেছিলেন এবং তা বাস্তবে রূপ দিয়েছিলেন। তার নেতৃত্বেই পাকিস্তান দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম মুসলিম পারমাণবিক শক্তিধর রাষ্ট্রে পরিণত হয়।

১৯৭৪ সালে ভারতের ‘স্মাইলিং বুদ্ধ’ নামে প্রথম পারমাণবিক পরীক্ষা পাকিস্তানের জন্য ছিল এক কঠিন বার্তা। এর প্রতিক্রিয়ায় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভুট্টো ঘোষণা দেন—‘ঘাস খেয়ে হলেও পারমাণবিক বোমা বানাতে হবে।’ এই ঘোষণা বাস্তবায়নের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেন কাদির খান।

নেদারল্যান্ডসের ইউরেনকোতে কর্মরত অবস্থায় তিনি ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ প্রযুক্তি হাতে পান, যা পরবর্তীতে তিনি পাকিস্তানে এনে গোপনে পরমাণু কর্মসূচি এগিয়ে নিয়ে যান। শুধু পাকিস্তানই নয়, তার নেটওয়ার্ক ছড়িয়ে পড়ে ইরান, লিবিয়া ও উত্তর কোরিয়ার মতো রাষ্ট্রে, যারা তার সহায়তায় পরমাণু কর্মসূচি গড়ে তোলে। এদের মধ্যে উত্তর কোরিয়া সফলভাবেই পারমাণবিক শক্তিধর রাষ্ট্রে পরিণত হয়।

তবে এই ভূমিকাই তাকে পশ্চিমা বিশ্ব, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের চোখে এক নম্বর হুমকিতে পরিণত করে। ১৯৮০-এর দশকে ইসরায়েল ভারতের সহায়তায় পাকিস্তানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে হামলার পরিকল্পনা করে, যদিও শেষ পর্যন্ত ভারত সেই পরিকল্পনা থেকে সরে আসে।

১৯৩৬ সালে অবিভক্ত ভারতের ভোপালে জন্ম নেওয়া আবদুল কাদির খান দেশভাগের পর পাকিস্তানে চলে যান। করাচি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা শেষে উচ্চশিক্ষার জন্য পাড়ি জমান ইউরোপে। পরবর্তী প্রায় দেড় দশক ধরে তিনি বার্লিন, ডেলফ্ট ও ল্যুভেন বিশ্ববিদ্যালয়ে পারমাণবিক বিজ্ঞানে পড়াশোনা করেন ও গবেষণা চালান।

২০২১ সালে ৮৫ বছর বয়সে এই কিংবদন্তি বিজ্ঞানীর মৃত্যু হয়। কিন্তু পাকিস্তানের ইতিহাসে তার নাম রয়ে গেছে সোনার হরফে লেখা—একজন বিজ্ঞানী হিসেবে, যিনি শুধু প্রযুক্তি নয়, পুরো জাতিকে আত্মবিশ্বাস আর প্রতিরোধের শক্তি উপহার দিয়েছিলেন।

জনপ্রিয় সংবাদ

ভোটে অনিয়মে পুরো আসনের নির্বাচন বাতিলের ক্ষমতা ফেরত চায় ইসি

ইসরায়েলের হুমকি-ষড়যন্ত্র পেছনে ফেলে পরমাণু ক্লাবে পাকিস্তান

আপডেট সময় ০৯:৩৬:১২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৭ জুন ২০২৫

মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ’র সাবেক পরিচালক জর্জ টেনেট যাকে ওসামা বিন লাদেনের মতো ‘বিপজ্জনক’ মনে করতেন, আর ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থার সাবেক প্রধান শাবতাই শাবিত যাকে হত্যা না করার জন্য আজীবন অনুতপ্ত—তিনি আর কেউ নন, পাকিস্তানের পরমাণু কর্মসূচির রূপকার ও ‘ইসলামি বোমার জনক’ ড. আবদুল কাদির খান।

পাকিস্তানের প্রায় ২৫ কোটির বেশি মানুষের কাছে এই পরমাণু বিজ্ঞানী জাতীয় বীর, যিনি দেশের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য পারমাণবিক শক্তির প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেছিলেন এবং তা বাস্তবে রূপ দিয়েছিলেন। তার নেতৃত্বেই পাকিস্তান দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম মুসলিম পারমাণবিক শক্তিধর রাষ্ট্রে পরিণত হয়।

১৯৭৪ সালে ভারতের ‘স্মাইলিং বুদ্ধ’ নামে প্রথম পারমাণবিক পরীক্ষা পাকিস্তানের জন্য ছিল এক কঠিন বার্তা। এর প্রতিক্রিয়ায় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভুট্টো ঘোষণা দেন—‘ঘাস খেয়ে হলেও পারমাণবিক বোমা বানাতে হবে।’ এই ঘোষণা বাস্তবায়নের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেন কাদির খান।

নেদারল্যান্ডসের ইউরেনকোতে কর্মরত অবস্থায় তিনি ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ প্রযুক্তি হাতে পান, যা পরবর্তীতে তিনি পাকিস্তানে এনে গোপনে পরমাণু কর্মসূচি এগিয়ে নিয়ে যান। শুধু পাকিস্তানই নয়, তার নেটওয়ার্ক ছড়িয়ে পড়ে ইরান, লিবিয়া ও উত্তর কোরিয়ার মতো রাষ্ট্রে, যারা তার সহায়তায় পরমাণু কর্মসূচি গড়ে তোলে। এদের মধ্যে উত্তর কোরিয়া সফলভাবেই পারমাণবিক শক্তিধর রাষ্ট্রে পরিণত হয়।

তবে এই ভূমিকাই তাকে পশ্চিমা বিশ্ব, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের চোখে এক নম্বর হুমকিতে পরিণত করে। ১৯৮০-এর দশকে ইসরায়েল ভারতের সহায়তায় পাকিস্তানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে হামলার পরিকল্পনা করে, যদিও শেষ পর্যন্ত ভারত সেই পরিকল্পনা থেকে সরে আসে।

১৯৩৬ সালে অবিভক্ত ভারতের ভোপালে জন্ম নেওয়া আবদুল কাদির খান দেশভাগের পর পাকিস্তানে চলে যান। করাচি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা শেষে উচ্চশিক্ষার জন্য পাড়ি জমান ইউরোপে। পরবর্তী প্রায় দেড় দশক ধরে তিনি বার্লিন, ডেলফ্ট ও ল্যুভেন বিশ্ববিদ্যালয়ে পারমাণবিক বিজ্ঞানে পড়াশোনা করেন ও গবেষণা চালান।

২০২১ সালে ৮৫ বছর বয়সে এই কিংবদন্তি বিজ্ঞানীর মৃত্যু হয়। কিন্তু পাকিস্তানের ইতিহাসে তার নাম রয়ে গেছে সোনার হরফে লেখা—একজন বিজ্ঞানী হিসেবে, যিনি শুধু প্রযুক্তি নয়, পুরো জাতিকে আত্মবিশ্বাস আর প্রতিরোধের শক্তি উপহার দিয়েছিলেন।