ইসরায়েলি বাহিনীর টানা আক্রমণে অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় রক্তপাত থামছে না। হাসপাতাল সূত্র উদ্ধৃত করে আল জাজিরা জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় অন্তত ৭১ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। নতুন এই প্রাণহানি যোগ হয়ে ২০২৩-এর অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫৬ হাজার ২৫৯ জনে, আহতের সংখ্যা পৌঁছেছে এক লাখ ৩২ হাজার ৪৫৮-এ।
বিশাল এ মৃত্যুর মিছিলে নতুন করে দৃষ্টি কাড়ছে আরেকটি ভয়াবহ পরিসংখ্যান। গাজার সরকারি মিডিয়া অফিস জানিয়েছে, গত চার সপ্তাহে মানবিক সহায়তা সংগ্রহ করতে গিয়ে ইসরায়েলি গুলিতে ৫৪৯ জন ফিলিস্তিনি নিহত এবং ৪ হাজার ৬৬ জন আহত হয়েছেন। এসব ঘটনা ঘটেছে মার্কিন ও ইসরায়েলি সমর্থিত ‘গাজা হিউম্যানিটেরিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ)’ পরিচালিত ত্রাণকেন্দ্র ও তাদের আশপাশে, যেখানে ক্ষুধার্ত মানুষ সাহায্যের আশায় জড়ো হয়।
খাদ্য ও চিকিৎসা সংকট যে কতটা চরমে, তা সম্প্রতি প্রকাশিত ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রামের (ডব্লিউএফপি) এক প্রতিবেদনে স্পষ্ট হয়ে ওঠে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজার ৯০ শতাংশের বেশি মানুষ এখন তীব্র খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে, আর উত্তর গাজায় দুর্ভিক্ষের ঝুঁকি বাড়ছে প্রতিদিনই। ইসরায়েলি হামলায় সড়কবন্দর বিধ্বস্ত, ত্রাণবাহী ট্রাকগুলোকে ঘনঘন তল্লাশিতে আটকে দেওয়া হচ্ছে; কখনও সরাসরি হামলার মুখেও পড়ছে তারা, বলে অভিযোগ ‘ডাক্তারস উইদাউট বর্ডারস’সহ (এমএসএফ) একাধিক মানবাধিকার সংস্থার।
ফিলিস্তিনিদের ত্রাণ পেতে গিয়ে প্রাণ হারানোর ঘটনাগুলো আন্তর্জাতিক মহলে গভীর উদ্বেগের সূত্রপাত করেছে। জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এসব হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে গাজার জন্য “নিরবচ্ছিন্ন ও নিরাপদ” মানবিক করিডর চালুর আহ্বান জানিয়েছেন। মানবাধিকার সংস্থাগুলোর অভিযোগ, ত্রাণে বাধা দেওয়া ও বেসামরিক জনতার ওপর নিপীড়ন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ও যুদ্ধ আইনের সরাসরি লঙ্ঘন।
অবরুদ্ধ গাজায় মানবিক সংকট প্রতিদিনই আরও তীব্র আকার নিচ্ছে। খাদ্য, ওষুধ, নিরাপদ আশ্রয়—সবকিছুর ঘাটতি যখন মর্মান্তিক পর্যায়ে পৌঁছেছে, তখন ত্রাণ সংগ্রহের ওই হতাহত-পরিসংখ্যান যুদ্ধের ভয়াবহতার আরেকটি মূর্ত প্রমাণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আন্তর্জাতিক চাপ আর নিন্দার মধ্যেও ইসরায়েলি সামরিক অভিযান অব্যাহত থাকায়, গাজার বাসিন্দাদের সামনে এখনো আশু কোন স্বস্তির আলোর রেখা দেখা যাচ্ছে না।