১২ দিনের রক্তক্ষয়ী সংঘাত শেষে ঘোষিত অস্ত্রবিরতির বাস্তবতা নিয়ে প্রকাশ্যে সন্দেহ জানিয়েছে ইরান। তাদের বক্তব্য, এই অস্ত্রবিরতিতে ইসরায়েল আদৌ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকবে কি না, তা নিয়ে রয়েছে ‘গভীর সংশয়’।
গত ১৩ জুন ইসরায়েল ইরানের বিভিন্ন সামরিক ও পারমাণবিক স্থাপনায় নজিরবিহীন বিমান হামলা চালায়। এতে ইরানের শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা ও পরমাণু বিজ্ঞানীরা নিহত হন। হামলার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে ইসরায়েল দাবি করে, তারা ইরানকে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির পথে বাধা দিতেই অভিযান চালিয়েছে। তবে তেহরান বারবার বলে আসছে, তাদের পরমাণু কর্মসূচি সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ ও জ্বালানি চাহিদা পূরণে নির্ধারিত।
এই হামলার জেরে ইরান-যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার চলমান পারমাণবিক আলোচনা সম্পূর্ণ স্থগিত হয়ে পড়ে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ঘোষিত অস্ত্রবিরতির ছয়দিন পর ইরানি সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান আবদুর রহিম মুসাভি জাতীয় টেলিভিশনে বলেন,
“আমরা যুদ্ধ শুরু করিনি। তবে আগ্রাসনের জবাব সর্বশক্তি দিয়ে দিয়েছি। এখন প্রশ্ন হলো—শত্রুপক্ষ তাদের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করবে কি না। এ নিয়ে আমাদের গভীর সংশয় রয়েছে। যদি তারা আবার হামলা চালায়, আমরা আরও কঠোর জবাব দেব।”
একই দিন জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেসকে পাঠানো চিঠিতে ইরান স্পষ্ট ভাষায় দাবি করে—এই যুদ্ধের জন্য দায়ী ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র। ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি চিঠিতে নিরাপত্তা পরিষদের প্রতি আহ্বান জানান, যেন এই দুই দেশকে “যুদ্ধ সূচনাকারী” হিসেবে চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি ইসরায়েলকে সমর্থন দিয়ে ইরানের অন্তত তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালায়। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন,
“ইরান যদি আবার উচ্চমাত্রায় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ শুরু করে, তাহলে আবারও হামলা চালানো হবে।”
আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (IAEA) জানায়, ২০২১ সালেই ইরান ৬০ শতাংশ মাত্রায় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করেছিল, যেখানে ২০১৫ সালের চুক্তি অনুযায়ী সর্বোচ্চ সীমা ছিল ৩.৬৭ শতাংশ। অস্ত্র তৈরির জন্য প্রয়োজন ৯০ শতাংশ মাত্রায় সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম।
অপরদিকে, স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের তথ্য মতে, ইসরায়েলের হাতে বর্তমানে রয়েছে প্রায় ৯০টি পারমাণবিক অস্ত্র, যদিও দেশটি কখনোই তা আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকার করেনি।