ঢাকা ০১:৩৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ৩০ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
কাতারে হামলা

বিশ্বের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা নেতানিয়াহুর

  • ডেস্ক রিপোর্টঃ
  • আপডেট সময় ১১:২৩:৫০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • ৫২১ বার পড়া হয়েছে

ইসরায়েল আবারও আক্রমণ করেছে। মঙ্গলবার গাজা উপত্যকায় যুদ্ধবিরতি-সংক্রান্ত মার্কিন প্রস্তাব নিয়ে আলোচনায় যুক্ত হামাস নেতাদের লক্ষ্য করে হামলাটি চালানো হয়েছে। এরই মধ্যে দুই বছরেরও কম সময়ে ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলি গণহত্যার ফলে সরকারি হিসাবেই ৬৪ হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। ইসরায়েল কখনোই যুদ্ধবিরতির সমর্থক ছিল না। এমনকি তারা বিশ্বমোড়ল ও ইসরায়েলি নৃশংসতার সবচেয়ে একনিষ্ঠ সমর্থক দেশটির প্রস্তাবিত যুদ্ধবিরতিরও পক্ষে নয়। সর্বোপরি এ রাষ্ট্রের অস্তিত্বই নির্ভর করে ফিলিস্তিনিদের নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া এবং অবিরাম যুদ্ধে লিপ্ত থাকার ওপর। সামান্যতম জ্ঞান আছে এমন সবাই দীর্ঘদিন ধরে ইসরায়েলকে একটি দুর্বৃত্ত রাষ্ট্র হিসেবে বিবেচনা করে আসছে। কাতারের ওপর অভূতপূর্ব আক্রমণের মধ্য দিয়ে ইসরায়েলি সরকার আসলে কতটা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে, তা কিছুটা আন্তর্জাতিক মহলের চোখ খুলে দিয়েছে বলে মনে হচ্ছে। এ কথার উদ্দেশ্য এটা বোঝানো নয় যে, মধ্যপ্রাচ্যের বৃহত্তম মার্কিন সামরিক ঘাঁটি যেখানে অবস্থিত, সে দেশে হামাস নেতাদের লক্ষ্যবস্তু করা গাজায় হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করার চেয়ে নৈতিকভাবে ভয়াবহ, যাদের বেশির ভাগই নারী ও শিশু। বরং এটি বোঝানো যে, ইসরায়েলের নির্বিচার গণহত্যার সমর্থকরাও দেশটির জন্য একটি নতুন লাল রেখা টেনে দিয়েছেন। অর্থাৎ ইসরায়েলিরা তাদের পছন্দ অনুযায়ী মানুষ ও স্থানগুলোতে বোমাবর্ষণ করতে পারে না। দোহায় হামলার পর হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র ক্যারোলিন লিভিট ঘোষণা করেন, ‘কাতারের মতো একটি সার্বভৌম এবং আমেরিকার ঘনিষ্ঠ মিত্র দেশে হামলা করে ইসরায়েল বা যুক্তরাষ্ট্রের লক্ষ্য এগিয়ে নেওয়া যাবে না।’ এ সময় তিনি আরও বলেন, ‘তবে গাজায় বসবাসকারীদের দুর্দশা থেকে লাভবান হামাস নির্মূল করা একটি কার্যকরী লক্ষ্য।’তার পক্ষ থেকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এখন কাতারি জনগোষ্ঠীকে ‘আশ্বস্ত’ করেছেন। তিনিও লিভিটের ভাষায় বলেছেন, ‘তাদের মাটিতে আর এমন ঘটনা ঘটবে না।’ তবে  ‘আশ্বস্ত’ করার পরও কাতার যদি কিছুটা অস্বস্তিতেই থাকে, তাহলে তাকে ক্ষমা করতে হবে। কারণ এটি ইতোমধ্যে স্পষ্ট হয়েছে, ট্রাম্প অন্য মানুষের মাটিতে ইসরায়েল কী করে বা কী করে না, তার ওপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে। এই বাস্তবতার প্রমাণ হিসেবে দেশটির আলোচিত প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ বুধবার সামাজিক মাধ্যমে সতর্ক করে বলেছিলেন, ‘ইসরায়েলের লম্বা হাত যে কোনো জায়গায় তার শত্রুদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে। এমন কোনো জায়গা নেই, যেখানে তারা লুকিয়ে থাকতে পারে না।’ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ইতোমধ্যে কাতারকে স্পষ্টভাবে হুমকি দিয়েছেন। তিনি ইঙ্গিত দিয়েছেন, হয়তো এটি সেখানে ইসরায়েলি শেষ ক্ষেপণাস্ত্র হামলা নয়। নেতানিয়াহু বলেছেন, ‘আমি কাতার ও সন্ত্রাসীদের আশ্রয়দানকারী সব দেশকে বলছি, হয় তোমরা তাদের বহিষ্কার করো, নয়তো বিচারের মুখোমুখি করো। কারণ যদি তোমরা তা না করো, তাহলে আমরা করব।’ যথারীতি আঞ্চলিক সন্ত্রাসবাদের ওপর বর্তমান একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণকারী দেশটি কাকে ‘সন্ত্রাসী’ বলা হবে এবং তারপর আক্রমণ করা হবে তা সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার নিয়েছে, যারা প্রায় আট দশক ধরে যে জাতিগত নির্মূল, উচ্ছেদ ও ফিলিস্তিনিদের গণহত্যার কথা তো বাদই দিলাম।এখন ইসরায়েলের ‘দীর্ঘ হাত’ থেকে কে নিরাপদ থাকতে পারে, তা অনুমান করা যে কারও পক্ষেই সহজ। কিন্তু সম্ভাবনা খুবই কম এবং এর মধ্যেও অনেক দূর। কয়েক দশক আগে ইসরায়েলি গুপ্তচর সংস্থা মোসাদ ইতোমধ্যে ইউরোপীয় মাটিতে নিঃসংকোচে ফিলিস্তিনিদের হত্যা করেছে। এখন যেহেতু গাজায় একটি পুরোদমে গণহত্যা চলছে, বিদেশে যত বেশি ‘সন্ত্রাসী’ শনাক্ত করা যাবে, ইসরায়েলের জন্য ততই ভালো হবে তাদের রক্তাক্ত অভিযান থেকে মনোযোগ সরিয়ে নেওয়া এবং তাকে বৈধতা দেওয়া।ইসরায়েল বর্তমানে সম্পূর্ণ দায়মুক্তি এবং ইচ্ছামতো ধ্বংসযজ্ঞ চালানোর ক্ষমতা নিয়ে গর্ব করতে পারে। কিন্তু তার ‘দীর্ঘ হাত’-এ আর কী নৃশংস কৌশল রয়েছে, তা দেখার বিষয়। বিশ্বের বিরুদ্ধে নেতানিয়াহুর কার্যকর যুদ্ধ ঘোষণা অন্তত তাদের জন্য একটি জাগরণের আহ্বান হিসেবে কাজ করবে, যারা এখনও ইসরায়েলি ‘ন্যায়বিচার’-এর প্রাণঘাতী অলংকারে মোহগ্রস্ত।বেলেন ফার্নান্দেজ: আলজাজিরার
কলাম লেখক; আলজাজিরা থেকে
সংক্ষেপে ভাষান্তরিত

জনপ্রিয় সংবাদ

পাকিস্তানে ১৯ সেনা নিহত হওয়ার পর কঠোর হুঁশিয়ারি দিলেন শাহবাজ শরিফ

কাতারে হামলা

বিশ্বের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা নেতানিয়াহুর

আপডেট সময় ১১:২৩:৫০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫

ইসরায়েল আবারও আক্রমণ করেছে। মঙ্গলবার গাজা উপত্যকায় যুদ্ধবিরতি-সংক্রান্ত মার্কিন প্রস্তাব নিয়ে আলোচনায় যুক্ত হামাস নেতাদের লক্ষ্য করে হামলাটি চালানো হয়েছে। এরই মধ্যে দুই বছরেরও কম সময়ে ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলি গণহত্যার ফলে সরকারি হিসাবেই ৬৪ হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। ইসরায়েল কখনোই যুদ্ধবিরতির সমর্থক ছিল না। এমনকি তারা বিশ্বমোড়ল ও ইসরায়েলি নৃশংসতার সবচেয়ে একনিষ্ঠ সমর্থক দেশটির প্রস্তাবিত যুদ্ধবিরতিরও পক্ষে নয়। সর্বোপরি এ রাষ্ট্রের অস্তিত্বই নির্ভর করে ফিলিস্তিনিদের নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া এবং অবিরাম যুদ্ধে লিপ্ত থাকার ওপর। সামান্যতম জ্ঞান আছে এমন সবাই দীর্ঘদিন ধরে ইসরায়েলকে একটি দুর্বৃত্ত রাষ্ট্র হিসেবে বিবেচনা করে আসছে। কাতারের ওপর অভূতপূর্ব আক্রমণের মধ্য দিয়ে ইসরায়েলি সরকার আসলে কতটা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে, তা কিছুটা আন্তর্জাতিক মহলের চোখ খুলে দিয়েছে বলে মনে হচ্ছে। এ কথার উদ্দেশ্য এটা বোঝানো নয় যে, মধ্যপ্রাচ্যের বৃহত্তম মার্কিন সামরিক ঘাঁটি যেখানে অবস্থিত, সে দেশে হামাস নেতাদের লক্ষ্যবস্তু করা গাজায় হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করার চেয়ে নৈতিকভাবে ভয়াবহ, যাদের বেশির ভাগই নারী ও শিশু। বরং এটি বোঝানো যে, ইসরায়েলের নির্বিচার গণহত্যার সমর্থকরাও দেশটির জন্য একটি নতুন লাল রেখা টেনে দিয়েছেন। অর্থাৎ ইসরায়েলিরা তাদের পছন্দ অনুযায়ী মানুষ ও স্থানগুলোতে বোমাবর্ষণ করতে পারে না। দোহায় হামলার পর হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র ক্যারোলিন লিভিট ঘোষণা করেন, ‘কাতারের মতো একটি সার্বভৌম এবং আমেরিকার ঘনিষ্ঠ মিত্র দেশে হামলা করে ইসরায়েল বা যুক্তরাষ্ট্রের লক্ষ্য এগিয়ে নেওয়া যাবে না।’ এ সময় তিনি আরও বলেন, ‘তবে গাজায় বসবাসকারীদের দুর্দশা থেকে লাভবান হামাস নির্মূল করা একটি কার্যকরী লক্ষ্য।’তার পক্ষ থেকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এখন কাতারি জনগোষ্ঠীকে ‘আশ্বস্ত’ করেছেন। তিনিও লিভিটের ভাষায় বলেছেন, ‘তাদের মাটিতে আর এমন ঘটনা ঘটবে না।’ তবে  ‘আশ্বস্ত’ করার পরও কাতার যদি কিছুটা অস্বস্তিতেই থাকে, তাহলে তাকে ক্ষমা করতে হবে। কারণ এটি ইতোমধ্যে স্পষ্ট হয়েছে, ট্রাম্প অন্য মানুষের মাটিতে ইসরায়েল কী করে বা কী করে না, তার ওপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে। এই বাস্তবতার প্রমাণ হিসেবে দেশটির আলোচিত প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ বুধবার সামাজিক মাধ্যমে সতর্ক করে বলেছিলেন, ‘ইসরায়েলের লম্বা হাত যে কোনো জায়গায় তার শত্রুদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে। এমন কোনো জায়গা নেই, যেখানে তারা লুকিয়ে থাকতে পারে না।’ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ইতোমধ্যে কাতারকে স্পষ্টভাবে হুমকি দিয়েছেন। তিনি ইঙ্গিত দিয়েছেন, হয়তো এটি সেখানে ইসরায়েলি শেষ ক্ষেপণাস্ত্র হামলা নয়। নেতানিয়াহু বলেছেন, ‘আমি কাতার ও সন্ত্রাসীদের আশ্রয়দানকারী সব দেশকে বলছি, হয় তোমরা তাদের বহিষ্কার করো, নয়তো বিচারের মুখোমুখি করো। কারণ যদি তোমরা তা না করো, তাহলে আমরা করব।’ যথারীতি আঞ্চলিক সন্ত্রাসবাদের ওপর বর্তমান একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণকারী দেশটি কাকে ‘সন্ত্রাসী’ বলা হবে এবং তারপর আক্রমণ করা হবে তা সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার নিয়েছে, যারা প্রায় আট দশক ধরে যে জাতিগত নির্মূল, উচ্ছেদ ও ফিলিস্তিনিদের গণহত্যার কথা তো বাদই দিলাম।এখন ইসরায়েলের ‘দীর্ঘ হাত’ থেকে কে নিরাপদ থাকতে পারে, তা অনুমান করা যে কারও পক্ষেই সহজ। কিন্তু সম্ভাবনা খুবই কম এবং এর মধ্যেও অনেক দূর। কয়েক দশক আগে ইসরায়েলি গুপ্তচর সংস্থা মোসাদ ইতোমধ্যে ইউরোপীয় মাটিতে নিঃসংকোচে ফিলিস্তিনিদের হত্যা করেছে। এখন যেহেতু গাজায় একটি পুরোদমে গণহত্যা চলছে, বিদেশে যত বেশি ‘সন্ত্রাসী’ শনাক্ত করা যাবে, ইসরায়েলের জন্য ততই ভালো হবে তাদের রক্তাক্ত অভিযান থেকে মনোযোগ সরিয়ে নেওয়া এবং তাকে বৈধতা দেওয়া।ইসরায়েল বর্তমানে সম্পূর্ণ দায়মুক্তি এবং ইচ্ছামতো ধ্বংসযজ্ঞ চালানোর ক্ষমতা নিয়ে গর্ব করতে পারে। কিন্তু তার ‘দীর্ঘ হাত’-এ আর কী নৃশংস কৌশল রয়েছে, তা দেখার বিষয়। বিশ্বের বিরুদ্ধে নেতানিয়াহুর কার্যকর যুদ্ধ ঘোষণা অন্তত তাদের জন্য একটি জাগরণের আহ্বান হিসেবে কাজ করবে, যারা এখনও ইসরায়েলি ‘ন্যায়বিচার’-এর প্রাণঘাতী অলংকারে মোহগ্রস্ত।বেলেন ফার্নান্দেজ: আলজাজিরার
কলাম লেখক; আলজাজিরা থেকে
সংক্ষেপে ভাষান্তরিত