ঢাকা ১০:০৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ০৩ জুন ২০২৫, ২০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

টানা বৃষ্টিতে সিলেট-চট্টগ্রামসহ ছয় বিভাগে ভয়াবহ দুর্যোগ: পাহাড়ধস, বন্যা ও প্রাণহানি

  • ডেস্ক রিপোর্টঃ
  • আপডেট সময় ০৫:৫৮:৫৭ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২ জুন ২০২৫
  • ৫৫৩ বার পড়া হয়েছে

কয়েক দিনের টানা ভারী বর্ষণে সিলেট, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহসহ দেশের উত্তর-পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল ভয়াবহ দুর্যোগে পড়েছে। পাহাড়ধস, জলাবদ্ধতা, রাস্তাঘাট ধসে জনজীবন থমকে গেছে। ইতোমধ্যে সিলেটের গোলাপগঞ্জে টিলাধসে একই পরিবারের চারজন প্রাণ হারিয়েছেন। পাহাড়ি ঢল ও প্রবল বৃষ্টিতে নদনদীর পানি বিপৎসীমার ওপরে প্রবাহিত হচ্ছে। নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হওয়ায় ঘরছাড়া হচ্ছেন হাজার হাজার মানুষ।

সিলেটে প্রাণহানি ও টিলাধস

শনিবার গভীর রাতে সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার বখতিয়ারঘাট এলাকায় টিলাধসে এক পরিবারের চারজন নিহত হন। মৃতরা হলেন রিয়াজ উদ্দিন (৫৫), তার স্ত্রী রহিমা বেগম, মেয়ে সামিয়া (১৪) ও ছেলে আলী আব্বাস (৯)। টিলার পাদদেশে আনারস বাগানের পাশে ঘুমিয়ে থাকা অবস্থায় ধসের নিচে চাপা পড়ে মৃত্যু হয় তাদের। সেনাবাহিনী, ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশের যৌথ অভিযানে তাদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। নিহতদের দাফনের জন্য ময়নাতদন্ত ছাড়াই অনুমতি দেওয়া হয়েছে।

চট্টগ্রামে জলাবদ্ধতা ও রাস্তা ধসে বিপর্যয়

চট্টগ্রাম শহরে কয়েক ঘণ্টার বৃষ্টিতে ভয়াবহ জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। ফইল্ল্যাতলী বাজার সংলগ্ন সড়ক ফেটে ও দেবে গেছে প্রায় ১০০ মিটার জুড়ে। মহেশখালের পাশের এলাকা তলিয়ে গেছে। চসিক জানিয়েছে, ড্রেনেজ ব্যবস্থা বালুতে ভরাট থাকায় পানি নামছে না। গত ২৪ ঘণ্টায় ১৯৪.২ মি.মি. এবং আগের দিন ২৩৮ মি.মি. বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।

রাঙামাটিতে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ

রাঙামাটির কাপ্তাই, বড়ইছড়ি ও সাপছড়িতে অন্তত ১৬টি জায়গায় পাহাড়ধসে রাঙামাটি-চট্টগ্রাম সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। নিম্নাঞ্চলে পানি ঢুকে পড়ায় দুই শতাধিক পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, ৬৭২ জনকে আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়া হয়েছে।

ময়মনসিংহ ও সুনামগঞ্জে ভয়াবহ অবস্থা

ময়মনসিংহে মাত্র তিন ঘণ্টায় ৬৮ মি.মি. বৃষ্টিতে শহরের অধিকাংশ এলাকা তলিয়ে যায়। সানকিপাড়া, রেললাইন বস্তি, চরপাড়ায় হাঁটুপানি জমে যাওয়ায় চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে। অন্যদিকে, সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার, ছাতক ও তাহিরপুর পাহাড়ি ঢলে প্লাবিত হয়েছে। মৌলভীবাজারের বড়লেখায় পাঁচটি ইউনিয়নের বহু ঘরবাড়ি ও দোকান পানিতে ডুবে গেছে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৪-৫ কোটি টাকা।

উপকূল ও বনাঞ্চলে প্রভাব

লক্ষ্মীপুরের রামগতিতে মেঘনায় ট্রলারডুবির এক দিন পর ইউএনএইচসিআরের স্বেচ্ছাসেবক হাসিনা খাতুনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। নিখোঁজ রয়েছে আরও তিনজন। হাতিয়ার নিঝুমদ্বীপে ভেসে এসেছে দুটি মৃত ডলফিন। সুন্দরবনের ৬টি মিঠাপানির পুকুরে লবণাক্ত পানি ঢুকে পড়েছে। এতে পানির উৎস বন্ধ হয়ে মারা গেছে দুটি হরিণ।

নদনদীর পানি বিপৎসীমার ওপরে

বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, সুরমা, কুশিয়ারা, মনু, খোয়াই ও হালদা নদীর পানি সাতটি পয়েন্টে বিপৎসীমার ওপরে। আগামী তিন দিন এসব নদীর পানি আরও বাড়তে পারে। ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা, ধরলা ও দুধকুমারের পানিও বাড়ছে। চট্টগ্রামের মুহুরী নদী-সংলগ্ন অঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে।

জনপ্রিয় সংবাদ

ইসরায়েলের রাফায়েল কোম্পানির সঙ্গে ৩২৫ মিলিয়ন ডলারের মিসাইল চুক্তি বাতিল করলো স্পেন

টানা বৃষ্টিতে সিলেট-চট্টগ্রামসহ ছয় বিভাগে ভয়াবহ দুর্যোগ: পাহাড়ধস, বন্যা ও প্রাণহানি

আপডেট সময় ০৫:৫৮:৫৭ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২ জুন ২০২৫

কয়েক দিনের টানা ভারী বর্ষণে সিলেট, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহসহ দেশের উত্তর-পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল ভয়াবহ দুর্যোগে পড়েছে। পাহাড়ধস, জলাবদ্ধতা, রাস্তাঘাট ধসে জনজীবন থমকে গেছে। ইতোমধ্যে সিলেটের গোলাপগঞ্জে টিলাধসে একই পরিবারের চারজন প্রাণ হারিয়েছেন। পাহাড়ি ঢল ও প্রবল বৃষ্টিতে নদনদীর পানি বিপৎসীমার ওপরে প্রবাহিত হচ্ছে। নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হওয়ায় ঘরছাড়া হচ্ছেন হাজার হাজার মানুষ।

সিলেটে প্রাণহানি ও টিলাধস

শনিবার গভীর রাতে সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার বখতিয়ারঘাট এলাকায় টিলাধসে এক পরিবারের চারজন নিহত হন। মৃতরা হলেন রিয়াজ উদ্দিন (৫৫), তার স্ত্রী রহিমা বেগম, মেয়ে সামিয়া (১৪) ও ছেলে আলী আব্বাস (৯)। টিলার পাদদেশে আনারস বাগানের পাশে ঘুমিয়ে থাকা অবস্থায় ধসের নিচে চাপা পড়ে মৃত্যু হয় তাদের। সেনাবাহিনী, ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশের যৌথ অভিযানে তাদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। নিহতদের দাফনের জন্য ময়নাতদন্ত ছাড়াই অনুমতি দেওয়া হয়েছে।

চট্টগ্রামে জলাবদ্ধতা ও রাস্তা ধসে বিপর্যয়

চট্টগ্রাম শহরে কয়েক ঘণ্টার বৃষ্টিতে ভয়াবহ জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। ফইল্ল্যাতলী বাজার সংলগ্ন সড়ক ফেটে ও দেবে গেছে প্রায় ১০০ মিটার জুড়ে। মহেশখালের পাশের এলাকা তলিয়ে গেছে। চসিক জানিয়েছে, ড্রেনেজ ব্যবস্থা বালুতে ভরাট থাকায় পানি নামছে না। গত ২৪ ঘণ্টায় ১৯৪.২ মি.মি. এবং আগের দিন ২৩৮ মি.মি. বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।

রাঙামাটিতে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ

রাঙামাটির কাপ্তাই, বড়ইছড়ি ও সাপছড়িতে অন্তত ১৬টি জায়গায় পাহাড়ধসে রাঙামাটি-চট্টগ্রাম সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। নিম্নাঞ্চলে পানি ঢুকে পড়ায় দুই শতাধিক পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, ৬৭২ জনকে আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়া হয়েছে।

ময়মনসিংহ ও সুনামগঞ্জে ভয়াবহ অবস্থা

ময়মনসিংহে মাত্র তিন ঘণ্টায় ৬৮ মি.মি. বৃষ্টিতে শহরের অধিকাংশ এলাকা তলিয়ে যায়। সানকিপাড়া, রেললাইন বস্তি, চরপাড়ায় হাঁটুপানি জমে যাওয়ায় চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে। অন্যদিকে, সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার, ছাতক ও তাহিরপুর পাহাড়ি ঢলে প্লাবিত হয়েছে। মৌলভীবাজারের বড়লেখায় পাঁচটি ইউনিয়নের বহু ঘরবাড়ি ও দোকান পানিতে ডুবে গেছে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৪-৫ কোটি টাকা।

উপকূল ও বনাঞ্চলে প্রভাব

লক্ষ্মীপুরের রামগতিতে মেঘনায় ট্রলারডুবির এক দিন পর ইউএনএইচসিআরের স্বেচ্ছাসেবক হাসিনা খাতুনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। নিখোঁজ রয়েছে আরও তিনজন। হাতিয়ার নিঝুমদ্বীপে ভেসে এসেছে দুটি মৃত ডলফিন। সুন্দরবনের ৬টি মিঠাপানির পুকুরে লবণাক্ত পানি ঢুকে পড়েছে। এতে পানির উৎস বন্ধ হয়ে মারা গেছে দুটি হরিণ।

নদনদীর পানি বিপৎসীমার ওপরে

বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, সুরমা, কুশিয়ারা, মনু, খোয়াই ও হালদা নদীর পানি সাতটি পয়েন্টে বিপৎসীমার ওপরে। আগামী তিন দিন এসব নদীর পানি আরও বাড়তে পারে। ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা, ধরলা ও দুধকুমারের পানিও বাড়ছে। চট্টগ্রামের মুহুরী নদী-সংলগ্ন অঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে।