মধ্যপ্রাচ্যের ভূরাজনীতিতে এক নতুন ও ভয়াবহ মোড় নিয়েছে ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যকার চলমান সংঘাত। বিশেষ করে তেহরানের সামরিক, পারমাণবিক ও প্রশাসনিক অবকাঠামোর বিরুদ্ধে ইসরায়েলের সাম্প্রতিক হামলা আর কেবল কৌশলগত পদক্ষেপ নয়, বরং এটি একটি সুস্পষ্ট রাজনৈতিক ও সামরিক বার্তা বহন করে।
বিশ্লেষকদের মতে, ইসরায়েলের মূল লক্ষ্য হচ্ছে ইরানের পরমাণু কার্যক্রম ধ্বংস করা, সামরিক সক্ষমতা দুর্বল করা এবং সর্বোপরি দেশটির ইসলামি শাসনব্যবস্থাকে ভেঙে দেওয়া। নেতানিয়াহু সরকার ধারণা করেছিল, অর্থনৈতিক সংকটে জর্জরিত এবং অভ্যন্তরীণ বিক্ষোভে টালমাটাল ইরান এখন একটি দুর্বল রাষ্ট্র—এবং এই মুহূর্তেই হামলা চালানো হলে তা তেহরানকে কাবু করতে সহায়ক হবে।
তবে বাস্তবতা হয়েছে ভিন্ন। ইসরায়েলের সামরিক আগ্রাসন ইরানিদের মাঝে বিপুল ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে। দেশের সার্বভৌমত্বে আঘাত আসায় জনগণ আরও ঐক্যবদ্ধ হয়ে উঠছে। যা নেতানিয়াহুর কল্পনারও বাইরে বলে মনে করছেন আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা।
এদিকে, সাম্প্রতিক হামলা শুধুই সামরিক নয়। তিনজন শীর্ষ ইরানি সেনা কর্মকর্তাকে টার্গেট করে হত্যা, সরকারি দপ্তরে সাইবার হামলা, জাতীয় টেলিভিশনের সম্প্রচার ব্যাহত করা এবং একাধিক সামরিক ঘাঁটিতে বিমান হানা চালিয়ে ইসরায়েল মূলত একটি পূর্ণাঙ্গ ‘হাইব্রিড ওয়ার’ শুরু করেছে।
ইসরায়েল বহুদিন ধরেই ইরানের বিরুদ্ধে ছায়াযুদ্ধ, সাইবার হামলা এবং লক্ষ্যবস্তু হত্যাকাণ্ড চালিয়ে এলেও এবার সে কৌশল আরও সরাসরি ও বিস্তৃত মাত্রা পেয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করছেন, এই উত্তেজনা শুধু ইসরায়েল-ইরানের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না; এর প্রভাব গোটা মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে ছড়িয়ে পড়তে পারে। পরিস্থিতি আরও জটিল হলে বৃহৎ সামরিক সংঘাতে রূপ নেওয়ার আশঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।